খুশিতে বাঁচুন
রোগমুক্তির ব্যায়াম
ডায়াবিটিস বা কোলেস্টেরল খুব নিঃশব্দে আসে। প্রধানত বিপাকের সমস্যা থেকে এদের উদ্ভব। এদের নিয়ন্ত্রণ করতে শরীরচর্চার কোন পদ্ধতি ঠিক তা নিয়েও কিছু তর্ক আছে। তবে একটু বিবেচনা করে ছক তৈরি করতে পারলে মোকাবিলা করা কঠিন নয়। তার আগে কয়েকটি বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে।
(ক) ডায়াবিটিস দু’ধরনের টাইপ-১ ও টাইপ-২। টাইপ-১ ডায়াবিটিস অল্প বয়সেও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ওবেসিটির কোনও ভূমিকা নেই। এ ধরনের রোগীদের ব্যায়াম অন্তত প্রথম তিন মাস হবে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের। কিন্তু টাইপ-২ ডায়াবিটিসে ওবেসিটি একটি কারণ এবং শরীরের মধ্য অংশের অ্যাডিপসিটির সঙ্গে এই রোগের যোগ আছে। অ্যাডিপস কোষ অর্থাৎ মেদ কোষ কমিয়ে দিতে পারলে রোগও নিয়ন্ত্রিত হবে। এঁদের ক্ষেত্রে গোড়ায় মাঝারি ব্যায়াম করে পরে বাড়ানো যেতে পারে। সপ্তাহে ৪-৫ দিন রোজ ৩০-৩৫ মিনিটের শরীরচর্চায় মাংসপেশি এবং লিভারে বিপাকজনিত কিছু উৎসেচক তৈরি হয়, যা এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলকে ভাল কোলেস্টেরলে রূপান্তরিত করে। শুধু কোলেস্টেরলের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের শরীরচর্চা মাঝারি থেকে বেশির দিকে হতেই পারে।
(খ) এ বারে শরীরচর্চার মেয়াদ। ডায়াবিটিসে, বিশেষত টাইপ ১-এর ক্ষেত্রে মোট ২৫-৩০ মিনিটের ছোট ছোট ওয়র্কআউট আদর্শ। টাইপ ২-এর ক্ষেত্রে এটি বাড়িয়ে ৪০-৪৫ মিনিট করা যেতেই পারে। দু’টি ক্ষেত্রেই সপ্তাহে ৫-৬ দিন ওয়র্কআউট করুন। কোলেস্টেরলের জন্য ৫-৬ দিন মোট ৪৫ মিনিটের ওয়র্কআউট করতে পারলে, সমীক্ষা বলছে ১২-১৬ সপ্তাহেই মোট ১০ থেকে ২০ শতাংশ কোলেস্টেরল কমে যায়।
(গ) কী ধরনের ওয়র্কআউটে ডায়াবিটিস আর কোলেস্টেরলকে দমিয়ে রাখা যাবে?
গবলেট স্কোয়াট ডাম্বেল স্যুইং
প্রথমেই বলি, হাঁটা, জগিং ইত্যাদিকে বলা হয় কার্ডিওভাসকুলার ওয়র্কআউট। এই ওয়র্কআউটে গোড়াতেই একনাগাড়ে ব্যাপারটাকে বদলে ফেলুন।
যেমন, টাইপ-১ ডায়াবিটিসের জন্য যে-কোনও বয়সের মানুষের একটি সহজ ড্রিল হল প্রথম সপ্তাহে এক মিনিট হাঁটা আর ৩০ সেকেন্ড জগিং। এ পদ্ধতিকে বলে ইন্টারভ্যাল বা বিরতিমূলক কার্ডিও। তৃতীয় সপ্তাহে এক মিনিট হাঁটুন আর এক মিনিট জগিং করুন। ষষ্ঠ সপ্তাহে ৩০ সেকেন্ড হাঁটুন, এক মিনিট জগিং করুন। পর্যায়ক্রমে হাঁটা আর জগিং সীমাবদ্ধ রাখুন ২০-২৫ মিনিটে। সপ্তাহে ৩-৪ দিন এই কার্ডিও করুন।
টাইপ-২ ডায়াবিটিস এবং কোলেস্টেরল সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা প্রথম ২-৩ সপ্তাহ সহজ কিছু বিরতিমূলক কার্ডিও করে শরীরটাকে একটু তৈরি করে নিন। তার পরে নীচের এই ড্রিলটা পরখ করে দেখুন।
পায়ে দাগ কেটে অথবা মার্কার দিয়ে ২০ মিটারের একটা দূরত্ব তৈরি করুন। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত যথাসাধ্য জোরে দৌড়ন। ফিরুন হালকা চালে জগিং করে, না পারলে হেঁটে। এ ভাবে ২ মিনিট অনবরত দৌড় আর জগিং বা হাঁটা। তার পরে ৩ মিনিট পূর্ণ বিশ্রাম নিন। এই ড্রিলটা ৬-৮ বার করুন। মাসখানেক পরে যখন ড্রিলটি সহজেই করতে পারছেন, তখন যাওয়া-আসা দু’টি পথেই যথাসাধ্য জোরে দৌড়ন। আর সময় কমিয়ে আনুন এক মিনিটে। এক মিনিট বিশ্রাম নিয়ে ১০ বার রিপিট করুন। ডায়াবিটিসের রোগীরা নজর রাখবেন, হঠাৎ ক্র্যাম্প আসতে পারে বা সুগার লেভেল নেমে যেতে পারে। সঙ্গে চিনি-মেশানো জল রাখবেন। ইন্টারভ্যাল কার্ডিও করলে বিশ্রামেও বিপাকের হার বাড়ে, যাতে অ্যাডিপস কোষ ভাঙতে সাহায্য করে। তবে দৌড়ঝাঁপ করলেই ডায়াবিটিস বা কোলেস্টেরল কমে না। শক্তি বাড়ানোর ব্যায়ামে দ্বিগুণ উপযোগিতা পাওয়া যায়। গবেষণার ফল তাই বলছে। তাই সপ্তাহে ৩-৪ দিন শক্তি বাড়ানোর ওয়র্কআউটে মন দিন। ৬-৭টি ব্যায়াম বেছে নিন। চেষ্টা করুন প্রধান পেশিগুলোকে শক্তিশালী করার। শক্তি বাড়ানোর ব্যায়ামে পেশির হাইপারট্রফি হয়, মানে পেশি প্রস্থে বাড়ে। পেশি যেহেতু সক্রিয় কোষ, তাই সে খিদে মেটাতে মেদ থেকে খাবার সংগ্রহ করে। বিশ্রামেও বিপাকের হার বাড়ে। শরীরের মেদ ঝরে যায়। নীচে আমরা চারটি ব্যায়ামের হদিশ দিলাম। পরপর সার্কিটে একটির পরে একটি বিনা বিশ্রামে ব্যায়াম করলে শুধু শক্তিই বাড়বে না, একই সঙ্গে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমও শক্তিশালী হবে।
ওভারহেড স্টেপ আপ হরাইজন্টাল পুল আপ
১. গবলেট স্কোয়াট: ডাম্বেল বা ওজনের প্লেট দু’হাতে বুকের কাছে ধরে হাঁটু ভেঙে ৯০ ডিগ্রি স্কোয়াট করুন। পিঠ টানটান রাখবেন। ১২-১৪ বার করুন।
২. হরাইজন্টাল পুল আপ: এ জন্য একটা লোহার শক্ত ফিক্সড রড দরকার। কাঁধের চেয়ে একটু বেশি চওড়া দূরত্বে দু’হাতে রডটি ধরে, পা প্রথমে মাটিতে টানটান রেখে বুকটা রডের কাছে নিন। রপ্ত করার পরে পা দু’টি বেঞ্চে রাখুন। ১০-১২ বার করুন।
৩. ওভারহেড স্টেপ আপ: ১৮ ইঞ্চি একটি স্টেপ বক্স বা টুল নিন। ডাম্বেল বা ওজনের প্লেটটি দু’হাতে মাথার কাছে তুলে ধরে বক্স বা টুলে এক বার ডান পা তুলুন। নেমে এসে পরে বাঁ পা তুলুন। পিঠ টানটান রাখুন। পর্যায়ক্রমে এ ভাবে ১২-১৪ বার করুন।
৪. ডাম্বেল স্যুইং: ডাম্বেলটা দু’হাতে ধরুন। হাঁটু সামান্য ভেঙে, ঝুঁকে দাঁড়ান। এ বারে দু’হাতে ডাম্বেলটা নীচ থেকে কাঁধের উচ্চতা পর্যন্ত ওঠান আর নামান। মোট ১২-১৪ বার করুন। এ রকম ৬-৭ টি ব্যায়াম পরপর করার পরে ২ মিনিট বিশ্রাম নিন। এটা হল একটি সার্কিট বা বৃত্ত। মোট ৩-৪টি সার্কিট করুন।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.