ইউরো মুদ্রার মতো ইউরো
ফুটবলেও জমাট জার্মানি
জার্মানি-৪ (লাম, খেদিইরা, ক্লোজে, রুস)
গ্রিস-২ (সামারাস, সালপিংগিদিস- পেনাল্টি)

—যে কোনও একটা দ্বীপ বিক্রি করে প্রাপ্য ইউরোগুলো দাও, গ্রিস।
—গ্রিস, আর তোমাদের বাঁচাতে পারব না আমরা।
—গ্রিস, তোমাদের দেশের আর্থিক মন্দার মতোই দুর্দশা ফুটবল দলের।

গত ক’দিন ধরে বার্লিন, মিউনিখ, ফ্রাঙ্কফুর্ট, হামবুর্গের কাগজগুলো এই ধরনের শিরোনাম ব্যবহার করে গিয়েছে। আথেন্সের কাগজও পাল্টা বিদ্রুপের কামান দেগেছে।
ইউরোর এই ফুটবল যুদ্ধে বারবার হানা দিয়েছে ইউরো মুদ্রা। একটা দেশে গত পাঁচ বছর মন্দা, অন্য দেশ আর্থিক দিক দিয়ে ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী। জার্মানির কাছে দেনার দায়ে বিপর্যস্ত গ্রিস।
ইউরোর ‘বড়দা’রা ফুটবলের ইউরোতেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রইল।
কতদিন আগে বলেছিলেন সাহিত্যিক জর্জ অরওয়েল, “খেলা আসলে গোলাগুলি ছাড়া এক যুদ্ধ”! সেই মন্তব্য নিয়ে গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যম নাড়াচাড়া করেছে গত কয়েক দিন। উপলক্ষ্য এই ম্যাচটা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের সময় বিশ্বকাপে আর্জেন্তিনা-ইংল্যান্ড ম্যাচটা নিয়ে এমন উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র বনাম ইরান, পশ্চিম জার্মানি বনাম পূর্ব জার্মানি ম্যাচের কথা মনে করাচ্ছিল এই ‘যুদ্ধ’।
যুদ্ধ কোথায়? বড় একপেশে ম্যাচ হল। জার্মান চ্যান্সেলর মেরকেল খেলাটা দেখতে আসবেন বলে আরও চটেছিলেন গ্রিকরা। প্লাতিনির পাশে বসে মেরকেল যুদ্ধজয়ের ভঙ্গি করছিলেন গোলগুলোর পরে। তিনি যেন জানতেন, ম্যাচটার ভবিষ্যৎ। জানতেন, সেমিফাইনাল মুঠোয়।
গোলের পর লাম। ছবি: এপি
জার্মান কোচ লো-ও জানতেন। ম্যাচটার আগেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, গ্রিসকে কী চোখে দেখেন। গোমেজ, মুলার, পোডলস্কিকে সেমিফাইনালের জন্য বিশ্রাম দিয়ে প্রথম দল নামিয়ে দেন তিনি। ৩৬ মিনিটের মধ্যে জার্মান কিপার নুয়ের প্রায় সেন্টার লাইনের কাছে এসে বল ক্লিয়ার করলেন। এর মাঝে জার্মানদের আক্রমণের ঢেউ সামলাতে নাজেহাল গ্রিকরা। গ্রিস দলটার আট জন কোনও না কোনও সময় জার্মানিতে খেলেছেন। দুই দীর্ঘ নামের স্টপার পাপাস্থাথোপৌলুস ও পাপাদাপৌলুস এখনও খেলেন জার্মানির ক্লাবে। জার্মানিকে থামানোর অঙ্ক তাঁদের শেখা ছিল না। সাত জন ডিফেন্ডার নামিয়েও না।
চোখগুলো কার্টুন ছবির নিমো মাছের মতো বড় বড় বলে মেসুট ওজিলের নাম সতীর্থরা দিয়েছেন ‘নিমো’। আর সোয়াইনস্টাইগারের ডাকনাম তাঁর কোচ দিয়েছেন ‘ব্রেন’। মাছ এবং মস্তিস্কের সৌজন্যে মাঝমাঠটা শুরু থেকেই দখলে জার্মানির। প্রথমার্ধে প্রায় ৮০ শতাংশ মতো বল পজেশন ছিল তাদের। এই সময় ওজিলের লাবণ্যময় পাসিং ও সোয়াইনস্টাইগারের নেতৃত্ব দেখে প্যাট্রিক ভিয়েরার কথা মনে পড়ছিল। বিশ্বজয়ী ভিয়েরা দু’দিন আগে ইউরোর সেরা মিডফিল্ডার বেছেছেন সোয়াইস্টাইগারকে। বলেছেন, “ও হল ম্যাথাউস, মাথিয়াস সামার, বালাকের যোগ্য উত্তরসূরি।”
আট বছর আগে এক জার্মানের হাত ধরে ইউরোপ জয় করেছিল গ্রিস। কিং অটোঅটো রেহাগল রুর নদীর ধারে তাঁর শহর এসেনে বিয়ার হাতে নিশ্চয়ই ম্যাচটা দেখেছেন। সে বার ডান দিক থেকে ক্রস সেন্টারে বা কর্নারে হেডে গোল করেই শেষ তিনটে ম্যাচ জিতেছিল গ্রিস। ফ্রান্স, চেক, পর্তুগাল নিধনের পিছনে ওই ডান দিকের ভাসানো বল। আট বছর পরেও সেই ডান দিকের ক্রস থেকে ১-১ করল এই গ্রিস। এ বার হেডে নয়, প্রায় ঝাঁপিয়ে শটটা নিলেন সামারাস। দু’দিন আগে যে নামে নতুন প্রধানমন্ত্রী এসেছেন গ্রিসে।
আট বছর আগে ওই জার্মান কোচের দলটার জন্য অনেক বিশেষণ বরাদ্দ করেছিল ফুটবল বিশ্ব। নেতিবাচক, রক্ষণাত্মক, কল্পনাহীন, বিরক্তিকর। কিন্তু অটো রেহাগল নিজেদের তিনটে শক্তিকে ধারালো ছুরি করে তুলেছিলেন। রক্ষণ, প্রতি আক্রমণ এবং সেট পিস। বর্তমান পর্তুগিজ কোচ ফের্নান্দো সান্তোস আট নয় বছর ধরে গ্রিসের ক্লাবে কোচিং করাচ্ছেন। তিনি প্রথম দিকে প্রতি আক্রমণে লোক তুলতে পারলেন না। বিরতির দশ মিনিট পরে এক বার তুলেই গোল পেলেন। কিন্তু জার্মানি তো জার্মানিই। ৬ মিনিট বাদেই ভলিতে ২-১ খেদিইরার। ৬১ থেকে ৭৪ মিনিটের মধ্যে স্কোরটা দাঁড়াল ৪-১।
ম্যাচটার আগে থেকে গোল সংখ্যা, কর্নার, থেকে শুরু করে বল পজেশনসব জায়গায় জার্মানরা গ্রিসদের থেকে এগিয়ে ছিল। টুর্নামেন্টে পাসিংয়ে জার্মানরা (১৭৭১) ছিলেন ছয় নম্বরে। গ্রিকরা (১২০৭) নীচের দিক থেকে দুই নম্বরে। গ্রিকরা এগিয়ে ছিল শুধু ফরোয়ার্ড পাসিংয়ে। গায়েগায়ে ছিল ম্যাচ পিছু ক্রস সেন্টারের ব্যাপারে। ১-১ করার পরে গ্রিকরা লোক বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পরপর গোল করে তাদের যাবতীয় উদ্যম ব্লটিং পেপারে শুষে নিল জার্মানরা। দু’মিনিট আগে সান্ত্বনা পেনাল্টিতে ২-৪।
তাক লাগানো পাসিং, ওপেন স্পেস তৈরি করা, দূরপাল্লার শুটিং, সৃষ্টিশীলতা, অ্যাটাকিং থার্ডে লোক তোলা। এই পাঁচটা গুণের সঙ্গে তীব্র আত্মবিশ্বাস। জার্মানরা যত দিন যাচ্ছে, ধারালো হচ্ছে। ইউরোপে ইউরোর অর্থ-ভাণ্ডার ধরলে তারাই সবচেয়ে এগিয়ে। স্পেন, পর্তুগালের দুর্দশা গ্রিসের মতো না হলেও খুব ভাল নয়। ইউরোর ফুটবল এ বার ইউরো মুদ্রার নিয়ম নেমে চলে কি না, দেখার কৌতূহল সবার। এই অসম-যুদ্ধ কিন্তু দেখাল, ফুটবল ইউরোর নিয়ম নেমেই চলছে!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.