ধার করা ‘অস্ত্র’ নিয়ে তা হলে ‘যুদ্ধে’ জেতা যায়! তীব্র প্রতিকুলতা জয় করে পাওয়া যায় অলিম্পিকে যাওয়ার টিকিট! “বিশ্বাস করুন, নিজেরই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না আমি লণ্ডন অলিম্পিকে নামব। গতকাল রাত পর্যন্তও মনে হয়েছিল, আর হল না। সব বৃথাই গেল। জীবনে কখনও কোনও টুর্নামেন্টে নামার আগে এমন সমস্যায় পড়িনি। বিশ্বকাপ, কমনওয়েলথ জেতার চেয়েও এই জয়কে তাই আমি এগিয়ে রাখছি।” শুক্রবার সন্ধ্যায় যুক্তরাস্ট্রের ওভডানের হোটেলে ফোনে ধরা হলে আনন্দবাজারকে বললেন তিরন্দাজ রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়। কথা শুনে মনে হচ্ছিল অলিম্পিকে যোগ্যতামান পাওয়ার বারো ঘণ্টা পরও বিস্ময়ের ঘোর কাটেনি বরাহনগর বসাকবাগানের বাসিন্দার। লন্ডনে টিম ইভেন্ট ছাড়া রিকার্ভের ব্যক্তিগত বিভাগেও নামবেন দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই।
সমস্যা বলে সমস্যা। ইতালির টোরিনহোতে ব্যর্থ হওয়ার পর গত এক বছর অলিম্পিকের টিকিট পাওয়ার জন্য দিন-রাত এক করে অনুশীলন করেছেন রাহুল। প্রতিদিন প্রায় নয় ঘণ্টা যে তীর-ধনুকগুলো নিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছনোর প্রস্তুতি নিতেন, সেগুলোই হারিয়ে গিয়েছিল টুর্নামেন্টে নামার আগের মুহূর্তে। ভারত থেকে যুক্তরাস্ট্র যাওয়ার পথে রাহুলের পুরো কিটই হারিয়ে ফেলেছিল বিদেশি এক বিমান সংস্থা। যুদ্ধে জেতার ‘অস্ত্র’ হারিয়ে দিশাহারা রাহুল শেষ পর্যন্ত টিমে তাঁর দুই সঙ্গী জয়ন্ত তালুকদার ও তরণদীপ রাইয়ের কাছ থেকে ধনুকের দু’টো অংশ চেয়ে নেন। যুক্তরাষ্ট্রের এক তিরন্দাজের কাছ থেকে ধার নেন কিছু তির। আর তা নিয়েই চার দিন অনুশীলন করার পর নেমে পড়েন প্রতিযোগিতায়। রাহুল বলছিলেন, “বুধবার রাতে আট দিন পর বিমান কর্তৃপক্ষ আমার কিট খুঁজে এনে দিলেও আমি কোনও ঝুঁকি নিইনি। নিজেরটা এবং ধার করা দু’টো তীর-ধনুকই বৃহস্পতিবার সকালের অনুশীলনের সময় নিয়ে গিয়েছিলাম। প্রচণ্ড হাওয়া চলছিল। কিন্তু সবাই বলল ধার করাটা নিয়েই নামতে। আর সেটা দিয়েই জীবনের সেরা পয়েন্ট করলাম নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে।”
দিদি প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দোলা অলিম্পিকে গিয়েছেন দু’বার। জানেন, কী কঠিন এই সুযোগ পাওয়া। বৃহস্পতিবার সারা রাত (ভারতীয় সময় রাত দুটোয় শুরু হয়েছিল প্রতিযোগিতা, শেষ হয় শুক্রবার ভোরে) বসাকবাগানের বাড়িতে তাই অপেক্ষায় বসেছিলেন দোলা-সহ রাহুলের পুরো পরিবার। ইন্টারনেটে চোখ রেখে। পরপর দুটো প্রতিযোগিতায় নেমেছিল ভারতীয় দল। প্রথমে ছিল বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ড। এর পর অলিম্পিকের যোগ্যতামান পেরোনোর লড়াই শুরু হয়। “বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ড শেষে ফাইনালে উঠলাম। এটাই আমাদের দারুণ উদ্বুদ্ধ করেছিল। এরপর আমি, জয়ন্ত তালুকদার আর তরণদীপ রাই মিলে ঠিক করেছিলাম যে করেই হোক প্রথম তিনে থাকতেই হবে। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম রাউন্ডে তিন পয়েন্টে পিছিয়ে পড়েছিলাম এক সময়। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য আমরা ঘুরে দাঁড়াই,” ফোনে কথা বলার সময় বেশ উত্তেজিত বঙ্গসন্তান।
১৬ টি দেশের মধ্যে প্রথম তিনে থাকতে হত অলিম্পিকের যোগ্যতা পেতে। পরপর খেলা ছিল। নরওয়ে, কানাডার পর সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে (২১৬-২১৪) হারায় ভারত। এরপর জাপানের কাছে এক পয়েন্টের ব্যবধানে হেরে রানার্স হন রাহুলরা। রাহুল বললেন, “রিকার্ভের টিম ইভেন্ট ছাড়া ব্যক্তিগত বিভাগেও এখন আমরা নামতে পারব।” কাল রবিবারই অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে নামছেন রাহুল-জয়ন্ত-তরণদীপ। “চ্যাম্পিয়ন হতেই হবে। কারণ লন্ডনে যাওয়ার আগে ওই সোনাটা দরকার,” বলছিলেন রাহুল।
বঙ্গললনা সুস্মিতা সিংহ রায় সোমবার পরীক্ষা দিতে নামছেন হায়দরাবাদে। আন্তঃরাজ্য আ্যাথলেটিক্স মিটে সুস্মিতা নামবেন হেপ্টাথলনে। সুস্মিতার কোচ কুন্তল রায় বললেন, “আশা করছি আমার ছাত্রী আলিম্পিকের যোগ্যতামান পেরিয়ে যাবে।” |