লি-হেশ ম্যাচ দৃশ্যত সমাপ্ত। ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান টেনিস সোপ অপেরা’-য় আপাতত চলমান লিয়েন্ডার বনাম সানিয়া ‘ম্যাচ’। কিন্তু ইন্দ্রজিতের মতো মেঘের আড়াল থেকে এই ম্যাচটাও লিয়েন্ডারের বিরুদ্ধে খেলছেন মহেশই।
অলিম্পিক টেনিস কাজিয়ার সর্বশেষ বুলেটিন, লিয়েন্ডারের অলিম্পিক-যাত্রার ডাবল হ্যাটট্রিক নির্ভর করে আছে তাঁর পার্টনার হতে সানিয়ার রাজি-অরাজি হওয়ার ওপর। সোজা কথা, ডাবলসে মহেশ-বোপান্নার মতো মিক্সড ডাবলসে সানিয়াও যদি লিয়েন্ডারের জুড়ি হতে অস্বীকার করে বিদ্রোহ করেন, তা হলে বেকবাগান রো-র টেনিস তারকা লন্ডন অলিম্পিক যাবেন না যে প্রায় নিশ্চিত। শুক্রবারই লিয়েন্ডারের ঘনিষ্ঠ সূত্র উত্তেজিত ভাবে জানালেন, ডাবলসে ২০৭ নম্বর র্যাঙ্কিংকে (বিষ্ণু বর্ধন) নিয়ে খেলতে হবে। তার পরে মিক্সড ডাবলসেও ৪৬৯ নম্বরকে (রুশ্মি চক্রবর্তী) নিয়ে খেলবে! লিয়েন্ডার কি আত্মত্যাগ আর ক্ষমা প্রদর্শনের দোকান খুলেছে নাকি?
লিয়েন্ডার-শিবির অশনিসঙ্কেত দেখছে, ২৮ জুন এক বার ওয়াইল্ড কার্ড হাতে এলেই সানিয়াও লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেলতে বেঁকে বসবেন। টেনিসমহলের আরও চাঞ্চল্যকর খবর, এ বছর অস্ট্রেলীয় ওপেনে সানিয়া নিজের কানে শোনেন যে, তাঁর ডাবলস পার্টনার ভেসনিনাকে লিয়েন্ডার বলছেন, “সানিয়ার সঙ্গে খেলছ কেন? ও মোটা হয়ে গেছে।” টুর্নামেন্টের এক অনুষ্ঠানে লিয়েন্ডারের ওই মন্তব্য নাকি মাইক্রোফোনে সানিয়ার কানে ধরা পড়ে যায়। তখন থেকেই লিয়েন্ডারের ওপর সানিয়া প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত। এখনও চুপচাপ আছেন। যেহেতু তাঁর নিজেরই এখনও অলিম্পিক-যাত্রায় শিলমোহর পড়েনি। তবে লিয়েন্ডারকে ‘না’ বলাটা তাঁর কাছে নাকি সমস্যা নয়। প্লেয়ারদের পছন্দ-অপছন্দের সামনে ফেডারেশন যে মেরুদণ্ডহীন সেটা তো মহেশ দেখিয়েই দিয়েছেন। একমাত্র দেখার, যে সরকারি-শক্তি (মাকেন-এস এম কৃষ্ণ-চিদম্বরম ত্রয়ী) ডাবলসে দুটো টিম পাঠাতে এআইটিএ-কে বাধ্য করেছে, তারা মিক্সড ডাবলস জুটির ব্যাপারে কতটা সানিয়ার পক্ষে থাকে। নাকি, এক্ষেত্রে লিয়েন্ডারের ক্ষোভ দূর করতে সানিয়ার ওপর চাপ তৈরি করবে সরকার যে, অলিম্পিকে যেতে হলে লিয়েন্ডারের সঙ্গেই খেলতে হবে। এ দিনই মাকেন বলেছেন, “মিক্সড ডাবলস নিয়ে সিদ্ধান্ত ফেডারেশনই নেবে।” শুক্রবার সানিয়ার বাবা ইমরান মির্জা লন্ডন গেলেন। ঘনিষ্ঠমহলে তিনি বলেছেন, “সানিয়া কখনও ফেডারেশনকে অস্বস্তিতে ফেলেনি এটা যেমন ঠিক। তেমনই এটাও ঠিক যে, মিক্সড ডাবলসের শেষ গ্র্যান্ডস্লামটা সানিয়া-মহেশ জুড়ি জিতেছে। তাও মাত্র দু’সপ্তাহ আগে।” |
অন্য দিকে, আবার লিয়েন্ডারের অভিমান, ক্ষোভ দূর করতে এ দিনই লন্ডনে তাঁর কাছে এআইটিএ-র দূত হিসেবে পৌঁছে গিয়েছেন নির্বাচন কমিটির সিনিয়র সদস্য রোহিত রাজপাল। রোহিত বলছেন, “লন্ডনে আমার ব্যবসার কাজও আছে। তবে তার পাশাপাশি লিয়েন্ডারের সঙ্গে দেখা করে ওকে বুঝিয়েসুঝিয়ে রাজি করানোটাও আমার একটা বড় কাজ।” রোহিত নিজে লিয়েন্ডারের সঙ্গে একই টিমে ডেভিস কাপ খেলেছেন। ১৯৯০-এ সোলে কোরিয়া ম্যাচে। দু’জনেই সিঙ্গলসে ‘ডেড রাবার’-এ (ভারত আগেই ০-৩ হেরে গিয়েছিল) খেলে হেরেছিলেন। জানা গেল, রোহিত এআইটিএ প্রধানকে এই বলে লন্ডনের বিমানে ওঠেন যে, লিয়েন্ডার বরাবর ভীষণ আবেগপ্রবণ মানুষ। খেলায় নোংরা রাজনীতি একদম পছন্দ করে না। নিজে সোজাসাপ্টা কথা বলতে ভালবাসে। পাশাপাশি চায়, লোকেও তার সঙ্গে যেন সততা দেখায়।
যেটা এআইটিএ লিয়েন্ডারের সঙ্গে অলিম্পিক ইস্যুতে আদৌ করছে না বলে লিয়েন্ডার-শিবিরের বিশ্বাস। ফেডারেশনের বিশ্বস্ত সূত্র এ দিন জানালেন, বিষ্ণু বর্ধনকে নিয়ে লিয়েন্ডারকে ডাবলস খেলতে রাজি করাতে বৃহস্পতিবার দল ঘোষণার পরপরই এআইটিএ-র নবনির্বাচিত সচিব ভরত ওঝা ফোন করেন মহেশকে। বলেন, “ডাবলসে তোমার দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। বোপান্নাকে জুড়ি দেওয়া হয়েছে তোমাকে। তার বদলে তুমি ফেডারেশনকে লিখিত দাও যে, মিক্সড ডাবলসে লিয়েন্ডার-সানিয়ার জুটির খেলা নিয়ে তুমি আর কোনও নতুন ঝামেলা করবে না।” কিন্তু সেই অনুরোধে মহেশ আদৌ সাড়া দেননি। এবং সেটা টেনিসমহলে নিজের বন্ধু মারফত জানার পরেই লিয়েন্ডার পালটা এআইটিএ-র থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দাবি করেন যে, মিক্সড ডাবলসে তিনি আর সানিয়ার জুটিই যদি খেলার সুযোগ পায়, তবেই তিনি ডাবলসে অনেক নীচের র্যাঙ্কিংয়ের জুনিয়রকে নিয়ে খেলবেন। নচেৎ অলিম্পিকেই যাবেন না। কিন্তু সেই লিখিত প্রতিশ্রুতি এখনও লিয়েন্ডারকে ফেডারেশন দিয়ে উঠতে পেরেছে বলে তাঁর বাবা ভেস পেজের কাছে রাত পর্যন্ত খবর নেই। মহেশ এ দিন আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, মিক্সড ডাবলস নিয়েও তিনি এক ইঞ্চি লড়াই ছাড়ছেন না। মহেশ-শিবির থেকে তথ্য দেওয়া হচ্ছে, লিয়েন্ডার-সানিয়া জুটির রেকর্ড দেখুন। শেষ বার কমনওয়েলথ গেমসে ওরা কোয়ার্টার ফাইনালে হেরেছে অখ্যাত স্কটিশ জুটির কাছে। যাদের মিলিত র্যাঙ্কিং ছিল তিনশোরও বেশি। আখতার আলিও ঘুরিয়ে মহেশকে সমর্থন করলেন। বললেন, “মিক্সড ডাবলসেই আমাদের পদক জেতার সেরা সুযোগ। তাই এই ইভেন্টে দেশের সেরা জুটিরই খেলা উচিত। ওটা নিয়েও ফেডারেশন যেন আর আপস না করে। দোহাই!”
তীব্র ডামাডোলের মধ্যেই উইম্বলডন (সোমবার শুরু) ডাবলসে আগে হেরে না গেলে কোয়ার্টার ফাইনালে মহেশ-বোপান্নার মুখোমুখি হবেন লিয়েন্ডার। জুড়ি স্টেপানেক। আবার অলিম্পিকের পরপরই দেশের মাঠে ভারতের ডেভিস কাপ ম্যাচ। সেখানেও লিয়েন্ডারের সঙ্গে লকাররুম ‘শেয়ার’ করা নিয়ে মহেশরা কী নীতি নেন দেখার! তাই অলিম্পিকেই যে ‘টেনিস সোপ অপেরা’ শেষ হবে তার কোনও গ্যারান্টি নেই। |