‘অলিম্পিক মিক্সড ডাবলস কি পাঁউরুটি
আর জ্যাম নাকি যে ভাগ করে খেতে হবে’

প্রশ্ন: লন্ডনে আবহাওয়া আজ কেমন?

মহেশ: আজকে ওয়েদার একটু বেটার।

প্র: কিন্তু ভারতীয় টেনিসের আবহাওয়া তো খুব উত্তপ্ত।
মহেশ: হুঁ।

প্র: হুঁ মানে কী? আপনিই তো এর জন্য দায়ী।
মহেশ: আমি দায়ী নই। পরিস্থিতি দায়ী। জঘন্য হ্যান্ডলিং দায়ী।

প্র: আপনি ভারতীয় টেনিস সংস্থা হলে আরও ভাল সামলাতেন?
মহেশ: হান্ড্রেড পারসেন্ট বেটার সামলাতাম।

প্র: কী স্ট্র্যাটেজি হত আপনার?

মহেশ: খুব সহজ। আমার পছন্দ ছিল রোহন বোপান্না। লিয়েন্ডারেরও পছন্দ ছিল রোহন বোপান্না। এ বার দেখে নেওয়া যেত কে কার সঙ্গে খেলতে রাজি আছে। কে কার সঙ্গে খেলতে রাজি নয়। তা হলেই তো হয়ে যেত। আমরা তো জানিয়েই দিয়েছিলাম আমাদের পছন্দের কথা।

প্র: মহেশ, সেটা কি ঠিক হত? আপনি তো এমন পরিস্থিতির কথা বলছেন যেখানে ছাত্ররা ঠিক করে দেবে কোন শিক্ষকের কাছে পড়বে।
মহেশ: হ্যালো, ওরা মোটেই আমার শিক্ষক নয়। এআইটিএ মোটেও আমাকে খেলা শেখায়নি। এআইটিএ লিয়েন্ডারকেও খেলা শেখায়নি। এটা একটা জঘন্য উপমা।

প্র: আপনাদের সঙ্গে তো কথা বলা হয়েছিল আগে।
মহেশ: কথা বলা হয়েছিল ঠিকই। সবার কাছ থেকে মতামত নেওয়াও হয়েছিল। কিন্তু তার পরে এআইটিএ নিজের রাস্তায় চলে গেল। আমার কথা হল, আখতার আলি কী ভাবছেন বা অমুক কী ভাবছে সেটা মীমাংসাসূত্র হতে পারে না। দেখতে হবে প্লেয়াররা কীসে সবচেয়ে কমফর্টেবল।

প্র: কিন্তু চার পাশে যে ভারতীয় টেনিস নিয়ে এত সব নেগেটিভ কথাবার্তা হচ্ছে সেগুলো কি আপনার কানে পৌঁছচ্ছে না? দেশে-বিদেশে আপনার অসংখ্য বন্ধু ছড়িয়ে। তারা কি আপনাকে কিছু বলছে না?
মহেশ: তারা বলছে যে তোমার জন্য গর্বিত যে নীতির প্রশ্নে দাঁড়িয়ে লড়াই করছ। কাপুরুষের মতো পালিয়ে যাওনি। ভেঙে পড়োনি।

প্র: এই যে বলা হচ্ছে প্রচণ্ড রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয়েছে চূড়ান্ত দল নির্বাচনে, সে বাপারে আপনি কী মনে করেন?
মহেশ: (একটু ইতস্তত করে) আমি জানি না। আমি রাজনীতিবিদ নই।

প্র: তবু ক্রীড়ামন্ত্রী অজয় মাকেনের ভূমিকা সম্পর্কে আপনার কী মতামত?
মহেশ: আমি আর বোপান্না ওঁর কাছে কৃতজ্ঞ যে ক্রীড়া রাজনীতিবিদরা যখন টিমটা ভেঙে দিচ্ছিল তখন উনি রাজনীতিবিদ হয়ে টিমটাকে বাঁচিয়েছেন। ওঁর কাছে কৃতজ্ঞতার অবধি নেই যে উনি পরিস্থিতিটা আন্দাজ করে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হতে দেননি।

প্র: কিন্তু এটাই বা ক্রীড়ামন্ত্রীর তৈরি কী রকম মীমাংসাসূত্র যেখানে দেশের সেরা ডাবলস প্লেয়ারকে ২০০ নম্বর র্যাঙ্কের কারও সঙ্গে খেলতে হয়?
মহেশ: (কিছুটা উত্তেজিত) ২০০ নম্বরের সঙ্গে তো খেলার দরকার ছিল না। ৭০ নম্বরের সঙ্গেই তো খেলা যেত। সোমদেব দেববর্মনকে নেওয়া হল না কেন? সোমদেব তো বারবার বলেছিল যে ও খেলতে প্রস্তুত। যতদূর জানি লিয়েন্ডারকেও জানিয়েছিল। তার কথা তো কেউ ভাবলই না।

প্র: লিয়েন্ডার পেজের সঙ্গে এই খটাখটিটা কেন? কেন আপনি-সহ কেউ কেউ লিয়েন্ডারের ওপর এত বীতশ্রদ্ধ?
মহেশ: সেটা আপনারাই বার করুন না। মিডিয়াই খোঁজ নিক না কেন বীতশ্রদ্ধ।

প্র: ভেস পেজ বলেছেন আপনিই হলেন বীতশ্রদ্ধ চিত্রনাট্যের আসল নায়ক। বাকিরা বোড়ে মাত্র।
মহেশ: তাই বুঝি? একটু জিজ্ঞেস করুন না সবাইকে যে ভারতবর্ষের সর্বকালের সেরা ডাবলস প্লেয়ারের সঙ্গে কেউ খেলতে চায় না কেন? লিয়েন্ডার পেজের সঙ্গে কোর্ট শেয়ার করা তো একটা দারুণ সম্মানের ব্যাপার। দারুণ গর্বের ব্যাপার। লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেললে পদক পাওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেড়ে যায়। তবু কেউ খেলতে চাইছে না কেন?

প্র: কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে বোপান্নার টেনিসজীবনের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করেন আপনি।
মহেশ: শুনুন ভাই, এ সব মজার মজার কথা আমাকে বলবেন না। বোপান্না কি বাচ্চা ছেলে যে আমার জন্য অলিম্পিক পদক ছেড়ে দেবে? ও ভাল মতো জানে লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেললে পদক পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে থাকে। তবু খেলছে না কেন? যান জিজ্ঞেস করুন।

প্র: ভেস পেজ দাবি করেছেন একটা টিভি সাক্ষাৎকারে লিয়েন্ডার সম্পর্কে আপনি বলেছেন প্রতারক। পিছনে ছুরি মারা আততায়ী।
মহেশ: (নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে) প্রতারকটা বলিনি। পিছনে ছুরি মারে বলেছি।

প্র: একটা রহস্যের অনেকেই কিনারা করতে পারছে না। হঠাৎ করে লিয়েন্ডারের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক আরও খারাপ হয়ে গেল কেন?
মহেশ: নতুন করে কিছু খারাপ হয়নি। আমাদের লাভ অ্যান্ড হেট চলতেই থাকে।

প্র: মানে কী? পেশাদার সম্পর্কের মৃত্যু ঘটেছে? ব্যক্তিগত সম্পর্ক এখনও আছে?
মহেশ: কতকটা তাই। আমার দেখা হলে কথা বলতে এখনও আপত্তি নেই। লিয়েন্ডারই তো কথা বলে না।

প্র: লিয়েন্ডার যদি অলিম্পিকে যান। যদি আপনার সঙ্গে না-ও খেলেন। একই টিমের তো আপনারা অংশ হবেন। একই ভিলেজে থাকবেন। একই ব্রেকফাস্ট লাউঞ্জে যাবেন। ব্যাপারটা ভজঘট হবে না?
মহেশ: কিছুই ভজঘট হবে না। কয়েকটা অলিম্পিক ধরেই এমন জোড়াতালি দিয়ে চলছে। আমাদের সম্পর্কে কখনও জোয়ার থাকে। কখনও ভাঁটা।

প্র: অনেকেরই মনে হচ্ছে ব্যক্তিগত পর্যায়ে খারাপ সম্পর্ক নিয়েও আপনারা ১৯৯৯ থেকে ২০০১ কয়েকটা গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন। ডেভিস কাপ খেলেছেন। এ বার তা হলে কী ঘটল যে এক সঙ্গে খেলা যাবে না?

মহেশ: ফ্রেন্ড, এটা একেবারেই বুদ্ধিমানের মতো প্রশ্ন নয়। এটা ভারতের অনেক সাংবাদিকই আমাকে করেছেন। কিন্তু কলকাতাবাসী এত বছর সার্কিটে থাকা কোনও সাংবাদিক যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমাকে তাজ্জব হয়ে ভাবতে হয় সবারই কী বুদ্ধিসুদ্ধি চলে গেল নাকি?

প্র: কেন?
মহেশ: এই জন্য যে ফ্রেন্ড ’৯৯-তে আমরা একসঙ্গে প্র্যাক্টিস করতাম। আমরা একটা টিম ছিলাম। কথা বলি বা না বলি। গত সাত মাস আমরা একসঙ্গে প্র্যাক্টিস করিনি। অলিম্পিকটা কি ছেলেখেলার ব্যাপার যে কোর্টে গিয়ে আকাশের দিকে মুখ করে বলব ঈশ্বর আমাদের একটা পদক দিন!

প্র: কিন্তু জুড়ি তো ভেঙেছেন আপনিই। ভেস পেজের কথা অনুযায়ী গত ফরাসি ওপেন আর উইম্বলডনের প্রথম রাউন্ডে হারার পর আপনিই গিয়ে লিয়েন্ডারকে বলেন, আমাদের এক সঙ্গে চলছে না বন্ধু। দুজনেরই ফ্রেশ জুড়ি দরকার।
মহেশ: (কিছুটা তিক্ত) প্রথমে বলি এটা সর্বৈব মিথ্যা। আর তারপর বিরক্ত হই যখন দেখি ভেস পেজ যা বলছেন আপনারা মেনে নিচ্ছেন। আমিও শুনলাম যে উনি বলেছেন ফরাসি ওপেন আর উইম্বলডনের প্রথম রাউন্ডে আমরা হেরে গেছি। একটু রেকর্ড খুলে দেখুন আমরা কোন রাউন্ডে হেরেছি। তারপর লিয়েন্ডারই এসে আমাকে গত অক্টোবরে বলে যে বেটার হবে যদি আমরা দুজনেই নতুন জুড়ি বাছি। আমি এই নিয়ে কোনও কথাই বলিনি।

প্র: আজ শুক্রবার এক নির্বাচক রোহিত রাজপাল লন্ডন উড়ে গেলেন ব্যাপারটার চূড়ান্ত রফা করতে।
মহেশ: হুঁ, শুনলাম।

প্র: রাজপাল নিশ্চয়ই আপনার সঙ্গেও কথা বলবেন।
মহেশ: আসুক তো। দেখি।

প্র: লিয়েন্ডার বলেছেন সানিয়ার থেকে মিক্সড ডাবলস খেলার লিখিত গ্যারান্টি না পেলে দলে থাকবেন না।
মহেশ: (ব্যঙ্গের সঙ্গে) তাই বুঝি?

প্র: তাই বুঝি বলছেন কেন? আপনি জানেন না?
মহেশ: হা হা হা। (এই প্রথম হাসিতে ফেটে পড়লেন)। সবই দেখছি। আর ভাবছি।

প্র: কী ভাবছেন? শোনা যাচ্ছে যে এআইটিএর সঙ্গে আপনাদের বোঝাপড়া হয়ে গেছে। আপনাকে আপনার পছন্দের ডাবলস জুড়ি দেওয়া হয়েছে। এ বার লিয়েন্ডারকে খুশি করতে মিক্সড ডাবলস দিয়ে দেওয়া হবে। স্কোর ১-১ থাকল।
মহেশ: আন্ডারস্ট্যান্ডিং? কী বলছেন কী? প্রশ্নই উঠছে না।
আমার এত লড়াই কি আন্ডারস্ট্যান্ডিং করা জন্য নাকি? বন্ধু মনে রাখুন এটা অলিম্পিক গেমস। চ্যাংড়ামির ব্যাপার না। এটা এ রকম নয় যে তিনটে পাঁউরুটির টুকরো নিয়ে আমরা ভাগাভাগি করে খাচ্ছি। আর বলছি, ওর রুটিতে জ্যাম কম আছে। তোর রুটি থেকে জ্যাম দিয়ে দে। এটা অলিম্পিক।

প্র: সানিয়া আর লিয়েন্ডার খেললে তা হলে আপনার তীব্র আপত্তি আছে?
মহেশ: শুনুন সানিয়া আর মহেশ শেষ যেন কী করেছিল?

প্র: দু’সপ্তাহ আগে মিক্সড ডাবলে ফরাসি ওপেন জিতেছিল।
মহেশ: দু’সপ্তাহ নয়। এক সপ্তাহ আগে জিতে উঠেছে। এটাই আমার উত্তর।

প্র: এখনই যদি এত মারামারি চলে, ডেভিস কাপের সময় কী হবে?
মহেশ: ডেভিস কাপ তো অনেক দূরে। আগে সব সম্যসার সমাধান হোক।

প্র: সমস্যা মানে কি মিক্সড ডাবলস?
মহেশ: আবার মনে রাখুন, এটা অলিম্পিক্স। অলিম্পিক্সের সঙ্গে কোনও কিছুর তুলনা করবেন না। এখানে কোনও কিছুর ছাড়াছাড়ি হয় না।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.