শনিবার দিনভর সে অপেক্ষা করছিল কলকাতার বেশ কিছুটা দূরে, বঙ্গোপসাগরের উপরে। আর রাত পোহাতেই রবিবার সকালে হুড়মুড়িয়ে দক্ষিণবঙ্গে ঢুকে পড়ল বর্ষা। বলা ভাল, বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণাবর্ত-ই তাকে ঠেলে ঢুকিয়ে দিল। নির্ধারিত সময়ের ন’দিন পরে!
তবে দক্ষিণবঙ্গের সর্বত্র এখনও বর্ষার দাক্ষিণ্য পায়নি। যেমন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম ও বর্ধমান শিল্পাঞ্চল। এ ছাড়া বাকি ৯টি জেলায় এ দিন বর্ষা ঢুকেছে বলে ঘোষণা করেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। যদিও আলিপুরের পূর্বাভাস: আগামিকাল মঙ্গলবারের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় মৌসুমি বায়ু ছড়িয়ে পড়বে। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের দহনক্লিষ্ট দুই দিনাজপুর ও মালদহেও এ দিন বর্ষা ঢুকেছে। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং-জলপাইগুড়ি-কোচবিহার প্রায় দু’সপ্তাহ আগে বর্ষার ছোঁয়া পেলেও ওই তিনটি জেলাতে তাপপ্রবাহের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।
বর্ষা যে দক্ষিণবঙ্গের দোরগোড়ায় চলে এসেছে, শনিবার ভোরের বৃষ্টি দেখে তার একটা আঁচ পেয়েছিলেন আবহবিদেরা। সেই বৃষ্টির পরে শনিবার সারা দিন কলকাতা ও আশপাশের আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল। আবহবিদেরা তখন জানিয়ে দেন, মঙ্গলবারের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢোকার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার রাতের প্রবল ঝড়-জলের পরে তাঁরা আশা করতে থাকেন, বর্ষা দক্ষিণবঙ্গের দিকে আরও এগিয়ে এসেছে। রবিবার সকালের উপগ্রহ-চিত্রে তারই প্রতিফলন পেয়েছেন তাঁরা। দেখা যায়, বর্ষা ঢুকে গিয়েছে কলকাতায়।
তা হলে কি এ বার অঝোর বর্ষণ হবে দক্ষিণবঙ্গে? |
আলিপুরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “বর্ষা কিছুটা অপুষ্ট অবস্থায় ঢুকেছে। তাই একনাগাড়ে ভাল বৃষ্টি এখনই আশা করা উচিত নয়। বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণাবর্ত কতটা শক্তিশালী হচ্ছে, তার উপরে সব নির্ভর করছে।” কী রকম?
গোকুলবাবুর ব্যাখ্যা, “ঘূর্ণাবর্তটি দুর্বল হয়ে গেলে বৃষ্টি কমবে। বেশি বৃষ্টির জন্য তখন পরের ঘূর্ণাবর্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।”
মৌসুমি অক্ষরেখা শনিবার সন্ধ্যায় ছিল পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা লাগোয়া বঙ্গোপসাগরে। রবিবার দুপুরের উপগ্রহ-চিত্র অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগর থেকে তা ঢুকে পড়েছে ওড়িশা ও দক্ষিণবঙ্গের স্থলভূমিতে। একই সঙ্গে এ দিন বর্ষা ঢুকেছে ছত্তীসগঢ় ও গুজরাতের একাংশে। বস্তুত ৫ জুন কেরলে বর্ষা আসার পরে তার অভিমুখ দেখে মৌসম ভবন বেশ উদ্বেগেই পড়ে গিয়েছিল। কারণ, গত ১১ জুন পর্যন্ত মৌসুমি অক্ষরেখা পুরোপুরি পশ্চিম ভারতের দিকে চেপে ছিল। তামিলনাড়ু-অন্ধ্রে বৃষ্টিই হচ্ছিল না। দক্ষিণ ভারতে বৃষ্টির ঘাটতি ৫০% ছাড়িয়ে গিয়েছিল। শেষমেশ ১৩ জুন তামিলনাড়ু উপকূলের ঘূর্ণাবর্ত মৌসুমি বায়ুকে কিছুটা পথে ফেরায়।
এবং তার পর থেকে তা মোটামুটি স্বাভাবিক ছন্দেই এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা। কেরল-কর্নাটক-অন্ধ্র-তামিলনাড়ু-মহারাষ্ট্র-গোয়া ছাড়াও তামাম উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গের তিন জেলায় ইতিমধ্যেই ভরপুর বর্ষার আমেজ।
রবিবার উত্তরবঙ্গের বাকি তিন জেলা ও দক্ষিণবঙ্গেও তার সূচনা হল। |