কীর্তন করে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৬ জনের
কীর্তন করে বাড়ি ফেরার সময় পথ দুর্ঘটনায় মারা গেলেন নদিয়ার চাকদহের গঙ্গাপ্রসাদপুরের বাসিন্দা ৬ ব্যক্তি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের নাম সুশীল বিশ্বাস (৬০), অভয় বিশ্বাস (৫০), তারকনাথ বিশ্বাস (৬২), নারায়ণ বিশ্বাস (৫৩), শিবপ্রসাদ বিশ্বাস (৪৫) এবং জয়দেব বিশ্বাস (৪২)। আহত হয়েছেন আরও ছ’জন। তাঁদের মধ্যে রাজকুমার বিশ্বাস, দুলাল বিশ্বাস, মনু বিশ্বাস, শুকচাঁদ বিশ্বাস ও বাপি প্রামাণিককে পাঠানো হয়েছে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যল কলেজ ও হাসপাতালে। মধু বিশ্বাস রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থানা এলাকার সরাটিতে কীর্তনের করে শনিবার গভীর রাতে তাঁরা একটি ছোট গাড়িতে বাড়ি ফিরছিলেন। রাত দেড়টা নাগাদ গাংনাপুরের পাটুলির কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে তাঁদের গাড়িটি একটি লরিকে পেরিয়ে যেতে গেলে উল্টো দিক থেকে আসা একটি বাসের সামনে পড়ে যায়। মুখোমুখি ধাক্কার পরে গাড়িটি পড়ে যায় রাস্তার নয়ানজুলিতে। বাসটিও তারপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের গায়ে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান অভয়বাবু ও শিবপ্রসাদবাবু। গুরুতর আহত অবস্থায় বাকিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মারা যান আরও চার জন। ওই বেসরকারি বাসের কেউই অবশ্য হতাহত হননি।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
আহত মধুবাবু বলেন, “রাতে গাড়িটা চলতে চলতে হঠাৎ একটা জোরে শব্দ হয়। তারপরেই আমাদের গাড়িটা উল্টে যায়।” তিনি বলেন, “আমাদের ফেরার কথা ছিল আনুলিয়ার মধ্যে দিয়ে। হঠাৎই দেখি চালক গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে জাতীয় সড়কে। তারপরেই দুর্ঘটনা ঘটে।”
রবিবার ভোরে গ্রামে খবর পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে গঙ্গাপ্রসাদপুরে। চাকদহ রেলস্টেশন থেকে ২ কিলোমিটার দূরের চাঁদুুরিয়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের এই গ্রামের বেশিরভাগই পেশায় কৃষিজীবী। যাঁরা মারা গিয়েছেন ও আহত হয়েছেন তাঁদের কারও অল্প জমি রয়েছে, অধিকাংশই দিনমজুর। সেই সঙ্গে তাঁরা কীর্তনের একটি দলের সঙ্গে যুক্ত। নিয়মিত বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করেন। অভয়বাবুর ছেলে সুব্রত বলেন, “বাবা মাঠে কাজ করতেন। তাই দিয়ে কোনও মতে আমাদের চলে যেত। সেই সঙ্গে প্রাণের টানে তিনি কীর্তনের দলের সঙ্গে যুক্ত। নানা জায়গায় অনুষ্ঠান করতে যেতেন।” তিনি বলেন, “রাতে ফিরতে দেরি হবে বলে আমি এই অনুষ্ঠানটিতে যেতে বারণ করেছিলাম। কিন্তু তিনি শুনলেন না।” তাঁর কাকিমা কমলা বিশ্বাস বলেন, “ছোটবেলা থেকেই কষ্টের মধ্যে মানুষ হয়েছে। তবু কীর্তনের ডাক এলে যত অসুবিধাই থাক ফেরাত না।” প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, বাগদায় যাঁরা গিয়েছিলেন তাঁরা সকলেই মনের টানে গান করতেন। ওই দলেরই অন্যতম সদস্য বাসুদেব মণ্ডল। তিনি বলেন, “সংসার চলে না। তবু যত কষ্টই হোক আমরা নামগান করতাম। নানা জায়গা থেকে ডাকও আসে নিয়মিত। আমাদের কোনও দাবি নেই। যাওয়া-আসার খরচ পেলেই আমরা কীর্তন করতে যাই। এ বার শরীর খারাপ বলে আমি যাইনি। তবে ওরা গিয়েছিল। ভাবতেই পারছি না, এ বার আবার নামগান করব কিন্তু আমাদেরই ছ’জন থাকবেন না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.