আজ যদি আমাদের ভগিনী নিবেদিতা বেঁচে থাকতেন, (বেঁচে আছেনই অমর্ত্যলোকে বিবেকানন্দ-সান্নিধ্যে। জীবিতাবস্থায় তাই ছিল তাঁর সুমধুর প্রার্থনা ও অভিলাষ। বিবেকানন্দ-পরিমণ্ডলে আমরাই বা তাঁর অস্তিত্ব ভুলে থাকি কী করে?) তবে স্বামীজির সার্ধশতবর্ষে তাঁর জন্মলগ্নকে তিনি আনন্দ-আবেগে প্রাণবন্ত করে তুলতেন তাঁর ১৬ নং বোসপাড়া লেনের বাড়িটি ঘিরে, যেখানে অগ্নিযুগে তথা স্বাধীনতা-পূর্ব বিপ্লবযুগে হেন মানুষ নেই, যাঁরা তাঁর পবিত্র সান্নিধ্য ও অগ্নিময়ী বাণীতে উজ্জীবিত হননি। তাঁর সংস্পর্শে এসেই সে কালের বিপ্লবী তথা ঋষি অরবিন্দ নিবেদিতার নামকরণ করেছিলেন ‘শিখাময়ী’। এই বাড়িতেই সস্ত্রীক বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র, ঋষি শ্রীঅরবিন্দ, রবীন্দ্রনাথ এসেছেন। আবার শ্রীরামকৃষ্ণ সঙ্ঘজননী শ্রীমা সারদাদেবীরও পদধূলিধন্য নিবেদিতার এই বাগবাজার বোসপাড়া লেনের বাসস্থান তথা স্ত্রীশিক্ষাকেন্দ্র। এ বার স্বামীজির সার্ধশতবর্ষে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকার এটি অধিগ্রহণ করে তা নিবেদিতার স্মৃতিসংগ্রহশালা, যা আমাদের দৃষ্টিতে এক তীর্থক্ষেত্রে রূপান্তরিত করবে বলে ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীই প্রধান উদ্যোগী। “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বাগবাজারে বোসপাড়ায় ভগিনী নিবেদিতা যে বাড়িতে থাকতেন, সেটিও অধিগ্রহণ করেছে রাজ্য। বাড়িটি অধিগ্রহণ করে পুরসভার হাতে তুলে দেবে সরকার। পুরসভা সূত্রে খবর, বাড়িটি অধিগ্রহণের জন্য পুরসভা আগেই তৎপর হয়েছিল। কিন্তু ‘দরদাম’ পছন্দ মতো না-হওয়ায় বাড়ির মালিক সেটি দিতে গররাজি হন। মিশনের মাধ্যমে ব্যাপারটি জানতে পেরে উদ্যোগী হন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। সেই কাজও এগোচ্ছে।” এই মর্মে (২৩-৫) আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। |
নিবেদিতার ১৬ নং বোসপাড়া লেনের বাড়ির এই স্মৃতিতীর্থ তথা সংগ্রহশালায় যাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে, তিনি আধুনিক কালের প্রখ্যাত গবেষক-লেখক-অধ্যাপক শঙ্করীপ্রসাদ বসু। তাঁর ‘লোকমাতা নিবেদিতা’ এবং ‘বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ’ এই গ্রন্থ দুটিতে শ্রীবসু যে সব দুষ্প্রাপ্য তথ্যের উল্লেখ করেছেন এবং তাঁর কাছেই সম্ভবত নিবেদিতার অমূল্য চিঠিপত্রের পাণ্ডুলিপি সংগৃহীত আছে, যা তিনি দু’খণ্ডে প্রকাশ করেছেন‘লেটারস অব সিস্টার নিবেদিতা’ নামকরণ করে প্রকাশিত হয় নবভারত পাবলিশার্স থেকে। তাই মনে হয়, নিবেদিতার স্মৃতিমন্দিরটি তৈরি হলে তাতে অধ্যাপক শঙ্করীবাবুর সহযোগিতা অবশ্যই প্রয়োজন হবে। তবে দুঃখের বিষয়, তিনি এখন শারীরিক ভাবে অসুস্থ। তবে তাঁর পুত্ররা (জ্যেষ্ঠ পুত্র গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন সংগ্রহশালায় বর্তমানে নিযুক্ত) এ ব্যাপারে খুবই সহযোগী হতে পারবেন বলে আমার ধারণা। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে স্বামীজির সার্ধশতবর্ষে শুভেচ্ছা জানাইতাঁর মানসকন্যার বহু স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি সুন্দর ভাবে নির্মিত হয়ে কলকাতার একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠুক! এই আমাদের আন্তরিক আবেদন।
স্বামী দেবেন্দ্রানন্দ। নরেন্দ্রপুর, কলকাতা-১০৩
|
‘ফেসবুক নতুন বন্ধুলাভের সুযোগ দেয় এ ধারণা ভুল’ (২৭-৫) প্রসঙ্গে জানাই, ফেসবুকের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের দৌলতে আমি আমার বহু পুরোনো ‘পেন ফ্রেন্ড’কে খুঁজে পেলাম দীর্ঘ ১৯ বছর পর। ভাবতে পারিনি ফের কোনও দিন যোগাযোগ হতে পারে। ও ছিল ওড়িশার আমি কলকাতার। ইন্ডিয়ান পোস্টাল সিস্টেমের গাফিলতিতে হারিয়ে-যাওয়া একটা সুন্দর বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে ফেসবুকের দৌলতে। দু’জনেই আজ চল্লিশোত্তীর্ণ। হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো বারে বারে ফিরে আসছে আলাপচারিতায়।
নিবেদিতা ঘোষ। কলকাতা-৪০
|
সুখেন্দু দাসের সুলিখিত রচনা ‘হায়দরাবাদের আশ্চর্য ঘড়ি’ (রবিবারের আনন্দমেলা, ২৯-৪) পড়ে তথ্য সংশোধন ও সংযোজনের উদ্দেশ্যে এই চিঠি। ওই আশ্চর্য ঘড়িটি কিন্তু আছে হায়দরাবাদের চৌমহল্লা প্যালেসে। লেখক কথিত সালার জং মিউজিয়ামে নয়। ঘড়ির বিবরণ ও ক্রিয়াকৌশল সুন্দর ও নিখুঁত ভাবে উনি বলেছেন।
সালার জং এস্টেট কমিটির তত্ত্বাবধানে সালার জং মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫১ সালে। ১৯৬৮ সালে জং পরিবারের সুন্দর প্যালেস ‘দিওয়ান দেওধি’ থেকে পুরো মিউজিয়ামটি মুসি নদীর দক্ষিণ তীরে বর্তমান বাড়িটিতে স্থানান্তরিত হয়।
তৃতীয় সালার জং নবাব মীর ইউসুফ আলি খান ছিলেন শেষ বংশধর এবং তাঁর আমলেই মূল্যবান ও প্রাচীন শিল্পসামগ্রীর সর্বাধিক সংগ্রহ ও সংরক্ষণ হয়। তাঁর নিজস্ব সংগ্রহ এবং প্রথম সালার জং নবাব মীর তুরাব আলি খান ও দ্বিতীয় সালার জং নবাব মীর ল্যেক আলি খান-এর সংগ্রহ নিয়ে গড়ে ওঠে সংগ্রহশালা। লেখক কথিত সব সংগ্রহ তৃতীয় সালার জং-এর একার নয়।
গত অগস্টে স্ত্রী কন্যা-সহ হায়দরাবাদের অন্যতম দর্শনীয় স্থান সালার জং মিউজিয়াম দেখার পর সপ্তাহের প্রথম দিন গিয়েছিলাম চৌমহল্লা প্যালেসে ওই ঘড়ি দেখতে। স্থানীয় স্কুলের ছাত্রছাত্রী, সাধারণ পর্যটক সমেত দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল শতাধিক। ঘড়ি দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা। কারণ, সবচেয়ে বেশি ঘণ্টা বাজবে বেলা ১২টায়।
ঘড়ির অভূতপূর্ব ক্রিয়াকৌশল দেখে আমরা তিন জন যখন উচ্ছ্বসিত, এগিয়ে এলেন মধ্য তিরিশের কর্তা-গিন্নি। চোখ বড় বড় করে বললেন, ‘কত দিন পর বাংলায় কথা শুনলাম’! পরিচয় বিনিময়ে জানলাম, ওঁরা দীর্ঘ দিনের প্রবাসে জব্বলপুরে আছেন। এবং সে দিনের দর্শককুলে আমরা দুটি পরিবারই ছিলাম একমাত্র বাঙালি।
হরেন্দ্রনাথ গাঁতাইত। শ্রীপুর পূর্ব, বোড়াল, কলকাতা-১৫৪ |