প্রোমোটারদের ‘থাবা’ থেকে রঙ্গমঞ্চ সারকারিনাকে রক্ষা করতে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন হল-মালিক। সারকারিনার মালিক অমর ঘোষের এই আর্জি পেয়ে বিষয়টি নিয়ে উৎসাহ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মহাকরণ সূত্রের খবর, সারকারিনার মতো হলকে অধিগ্রহণ করতে হলে কী ধরনের আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
১৯৭৬ সালে ‘তুষার যুগ আসছে’ পালার হাত ধরে কলকাতার থিয়েটার-পাড়ায় আত্মপ্রকাশ ঘটে সারকারিনার। শহরের একমাত্র সার্কুলার রিভলভিং এরিনা থিয়েটার। সারকারিনার মালিক অমর ঘোষ বলেন, “সার্কুলার এরিনার সন্ধি করে নামকরণ হয়েছিল সারকারিনা।” আশি-নব্বইয়ের দশকে থিয়েটার-পাড়ার অন্য হলগুলির সঙ্গে সারকারিনার রমরমাও তুঙ্গে ওঠে। যদিও গত কয়েক বছর ধরে থিয়েটার-পাড়ার একের পর এক হল বন্ধ হয়েছে। বাদ যায়নি সারকারিনাও।
এ দিকে, থিয়েটার-পাড়ার রমরমা যত কমেছে তত বেড়েছে প্রোমোটারদের রমরমা। অমরবাবু বলেন, “প্রোমোটাররা এই হলের বিনিময়ে কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমি রাজি হইনি। তাতে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত শুনতে হয়েছে।” |
তিনি জানান, তাঁর ছেলেরাও এই হল প্রোমোটারদের হাতে দেওয়ারই পক্ষপাতী। তিনি রাজি নন। অমরবাবু বলেন, “আমি মনে করি, থিয়েটারকে এখনও বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। ইউরোপে এখনও থিয়েটার নিয়মিত হাউসফুল হয়। তার জন্য প্রয়োজন আধুনিকীকরণের। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে থিয়েটারের পরিবর্তন হওয়া জরুরি। আমাদের যা আর্থিক অবস্থা, তাতে আধুনিকীকরণের কাজ করতে পারব না। তাই এই হলকে বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছি।” চিঠিতে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তন অধ্যাপক লিখেছেন, ‘এক জন গবেষক ও নাট্য বিশারদ হিসেবে এই মঞ্চকে আমি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে দান করে যেতে চাই।’ তিনি এ-ও জানিয়েছেন, সরকারের হাত ধরে সারকারিনার আধুনিকীকরণ হলে তিনি সেই কর্মকাণ্ডে পুরোপুরি অংশগ্রহণ করতেও ইচ্ছুক। যদিও সরকারের সঙ্গে হাতবদলের এই প্রক্রিয়া অমরবাবু দ্রুত সারতে চাইছেন। তাঁর কথায়, “আমি না থাকলে এই হলকে আর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।” মহাকরণের এক কর্তার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী এই হল অধিগ্রহণের ব্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহী। সেই কারণেই তিনি আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।” ১৯৭৬ সালে সারকারিনার উদ্বোধন হয়েছিল তদানীন্তন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে। দীর্ঘ ৩৪ বছর পরে রাজ্যে পালাবদলের পরে সেই সুব্রতবাবু এখন ফের মন্ত্রী। সারকারিনার মালিকের প্রস্তাব শুনে তাঁর বক্তব্য, “সারকারিনা কলকাতার সম্পদ। একে বাঁচিয়ে রাখার প্রস্তাব তো ভালই।” |