অনিশ্চয়তার কালো মেঘ
ঘিরেছে শীর্ষ সম্মেলনকে

ই মেক্সিকোর মায়া সভ্যতার জনশ্রুতি, এ বছর ডিসেম্বরের পরে সব কিছুই অনিশ্চিত! এমনকী এ পৃথিবীর অস্তিত্বও! আর কাল থেকে সেই মেক্সিকোর দক্ষিণ প্রান্তে লস কাবোস শহরে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে জি-২০-র যে শীর্ষ সম্মেলন শুরু হচ্ছে, তাকেও যেন মুড়ে রেখেছে ঘোর অনিশ্চয়তার মেঘ। এই সম্মেলনে যোগ দিতে আজ দুপুরে এসে পৌঁছলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
প্রশ্ন অনেক। আরও কত তীব্র হবে ইউরো অঞ্চলের অর্থ সঙ্কট? আজ গ্রিসের ভোটের পর ইউরোপের অভিন্ন মুদ্রার ভবিষ্যৎই কি অন্ধকার হয়ে যাবে? সেই মহা-মন্দার কোপ থেকে বিশ্ব অর্থনীতিকে বার করতেই বা কতটা সাহসী হতে পারবে উন্নত দেশগুলি? কিন্তু এখনও সেগুলির স্পষ্ট উত্তর নেই! যদিও সমূহ এই বিপদ থেকে অর্থনীতিকে রক্ষা করতে এই লস কাবোস শহরে অঙ্ক কষা শুরু হয়ে গিয়েছে দু’দিন আগেই। জি-২০ সদস্য দেশগুলির কূটনীতিকরা আলোচনায় বসেছেন নিজেদের মধ্যে। দিল্লির তরফে যে বৈঠকে রয়েছেন যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ মন্টেক সিংহ অহলুয়ালিয়া। কিন্তু এখনও আলোর হদিস মেলেনি!
এ বার জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের মুখ্য আলোচ্যই হল ইউরো অঞ্চলের অর্থ সঙ্কট। সমাধান খুঁজতে আজ বিকেলের মধ্যে সব সদস্য দেশের শীর্ষ নেতারা যখন এই পর্যটন শহরে এসে পৌঁছবেন, তত ক্ষণে ভারতে মধ্যরাত পেরিয়ে গিয়েছে। আর তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই গ্রিসের নির্বাচনের ফল প্রকাশ হয়ে যাবে। যে ফলাফল নির্ধারণ করে দেবে, এথেন্সের প্রশাসন ইউরো অঞ্চলে থাকবে, নাকি ১৭টি রাষ্ট্রের অভিন্ন মুদ্রার জোট থেকে বেরিয়ে যাবে।
বার্লিন ছাড়ার আগে জার্মানির ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সুজাতা সিংহের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই
গোটা বিশ্বের অর্থনীতির মাত্র ১৮ শতাংশ দখল করে রেখেছে ইউরো অঞ্চল। তার ২ শতাংশের অংশীদার গ্রিস। কিন্তু প্রশ্ন হল, এত ছোট অর্থনীতি কী ভাবে গোটা ইউরো জোনকে বিপাকে ফেলতে পারে? জবাবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গ্রিসকে অনুসরণ করে ইতালি ও স্পেনের মতো বড় দেশও যদি অভিন্ন মুদ্রার জোট থেকে বেরিয়ে যায়, তা হলে গোটা ইউরো অঞ্চল তীব্র সঙ্কটে পড়বে। এই মহাদেশের সরকারি বন্ড যে সব ইউরোপীয় ব্যাঙ্কের হাতে রয়েছে, তারাও দুর্বল হয়ে পড়বে। ঋণ দেওয়ার ঝুঁকি কম নেবে। পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে যদি বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে টাকা তুলে নেয়। সে ক্ষেত্রে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে ইউরোপের গোটা ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাটাই।
ফলে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে থেকেই এ বার চাপে রয়েছে উন্নত দেশগুলি। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, এখনও পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, তাতে খুব একটা সাহসী পদক্ষেপের বার্তা দিচ্ছে না উন্নত দেশগুলি। জি-২০ গোষ্ঠীর মধ্যে অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী তিন রাষ্ট্র আমেরিকা, জার্মানি ও চিন। কিন্তু সমস্যা হল, ভারতের মতো এই তিন দেশেও আর্থিক বৃদ্ধি ধাক্কা খেয়েছে। আমেরিকায় বৃদ্ধির হার কমেছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ার আশু সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কমেছে জার্মানি ও চিনের বৃদ্ধির হারও। আবার এই তিন রাষ্ট্র নির্বাচন বা ক্ষমতা পরিবর্তনের মুখে। ফলে কেউই বিশেষ ঝুঁকি নিতে চাইবে না। এমনকী জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলই বা কতটা সাহস দেখাতে পারবেন, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।
সঙ্কটের এই মুহূর্তে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য ইতিমধ্যেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ইউরোপের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ব্রিকের (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও চিনের সংগঠন) সদস্য উন্নয়নশীল দেশগুলি যাতে কিছু কিছু করে অর্থ সাহায্য করে, তেমন প্রস্তাবও দিচ্ছে ওয়াশিংটন। যদিও সে প্রস্তাবে কতটা সাড়া তারা দেবে, বেজিং ও নয়াদিল্লি তা এখনও স্পষ্ট করেনি। বরং উন্নত দেশগুলির ভূমিকাও তারা দেখে নিতে চাইছে।
সব মিলিয়ে লস কাবোস আজ যেন অনিশ্চয়তার উৎসকেন্দ্র। এমনকী এ-ও শোনা যাচ্ছে, দু’দিনের এই সম্মেলন থেকে এমন কিছু পাওয়া যাবে না যা বাজারকে চাঙ্গা করার বার্তা দিতে পারে। তবে বিপরীত মতও রয়েছে। সাউথ ব্লকের এক কূটনীতিকের কথায়, জি-২০ দেশগুলির নেতারা যখন এক সঙ্গে বসবেন, তখন নিশ্চয়ই কিছু না কিছু একটা সঙ্কট মুক্তির উপায় বের হবে। এই মুহূর্তে সেই আশাটুকুই বোধ হয় একমাত্র সম্বল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.