গ্রীষ্মরাক্ষস কেশাগ্র স্পর্শ করিতে পারিল না
ষোলো থেকে পঁয়ষট্টি নানা বয়সের পাঁচ জন মেয়ে বসে গল্প করছেন। কিছু বিষয় থাকে যা এঁদের সকলের পছন্দের। যেমন সিনেমায়, বিজ্ঞাপনে, আধুনিক মেয়েদের সাজপোশাক যার দিকে প্রায় তাকানো যায় না বললেই চলে, কোনও মানে না থাকা বিজ্ঞাপন, সিনেমার নায়কদের চেহারার ধরন, অল্পবিস্তর রাজনীতি ইত্যাদি। তবে এ সব বিষয় বাদ পড়লেও পড়তে পারে, চুল সম্বন্ধীয় আলোচনা কখনওই বাদ যায় না। চুল আদপে থাকছে, না থাকছেই না, এই বিষয়ে বিস্তর আলোচনা, চিন্তায় আড্ডা সরগরম থাকে। কেউ বলে, ‘আমি এই শ্যাম্পু লাগিয়েছি এবং চুল ওঠা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অন্য জন তৎক্ষণাৎ বলে ওঠে, ‘সে কি রে? আমার চুল তো ওটা লাগাতে একেবারেই উঠে গেল।’ এই সমস্যা থাকছে এবং থাকবে।
পঞ্চাশ হাজার চুল উঠলে আমাদের টনক নড়ে। সুতরাং এই সংখ্যা ছোঁওয়ার আগেই খেয়াল রাখতে হবে, একে ডিঙোলেই রেড অ্যালার্ট। যখন থেকে অল্পবিস্তর ফাঁকা হতে শুরু করবে, দর্শকের ভূমিকা পালন না করে তখন থেকেই কিছু পদক্ষেপ করুন।
প্রতিটি ঋতুর কিছু সমস্যা থাকে। গ্রীষ্মকালেরও নিজস্ব কিছু সমস্যা আছে। যেমন চুলের গোড়ায় ঘাম হওয়া। ঘাম হলে চুলের ক্ষতি হয়, আশপাশের লোকজনকেও বিশ্রী দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয়। ঘাম থেকে খুশকি হয়, স্ক্যাল্প চটচটে হয়ে যায়, মাথা চুলকোয়, অবশেষে চুল উঠতে শুরু করে। এই সমস্যাগুলি থেকে মুক্তি পেতে যার যে শ্যাম্পু সহ্য হয় সেটি প্রতিদিন ব্যবহার করা উচিত। ছোট চুলের ক্ষেত্রে প্রতিদিন শ্যাম্পু করা অত্যন্ত উপকারী। বড় চুল হলে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন শ্যাম্পু করবেন। চেষ্টা করুন কেমিক্যাল যুক্ত শ্যাম্পু পরিহার করতে। এই শ্যাম্পুগুলি অধিক ব্যবহারের ফলে চুলের নিজস্ব রং উঠে যায় এবং অকালেই কৃত্রিম রঙের শরণাপন্ন হতে হয়।
গ্রীষ্মকালে, সম্ভব হলে, চুলের দৈর্ঘ্য ছোট করে দিন। চুলের গোড়ায় হাত লাগলে সমস্যা কম হয়, চুল ওঠাও বন্ধ হয়। বড় চুলের ক্ষেত্রে, গরমে প্রতি দিনই জল ঢালতে হয়। সময়ের অভাবে চুল না শুকিয়ে ভেজা অবস্থায় বেঁধেই বেরিয়ে যাই আমরা অনেকে। এই ভাবে নিজেরাই চুলের বিপদ ডেকে আনি। ভিজে মাটি থেকে যেমন অল্প টানেই একটি গাছ উঠে আসে, তেমনই ভিজে গোড়া থেকেও চুল দ্রুত উঠে আসে। গ্রীষ্মকালে চুল স্যাঁতসেঁতে থাকে, অর্থাৎ ভেজা ভাব থাকে। এই কারণে বিভিন্ন ফাংগাল ইনফেকশন হয়, যেমন মাথায় খুশকির মতো পদার্থ জমাট বেঁধে থাকে। কিন্তু এগুলি খুশকি নয়। ছোট ছোট গোল হয়ে চুল উঠে যায়। এটিকে বলে অ্যালোপেশিয়া। এটি একটি ফাংগাল ইনফেকশন। গ্রীষ্মকালের আর একটি সমস্যা হল, এই সময় চুল রুক্ষ হয়ে যায়, এবং চুলের রংও উজ্জ্বল থাকে না। যাঁরা রোদে বেশি ঘোরাঘুরি করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়।
সপ্তাহে তিন দিন যে কোনও প্রাকৃতিক তেল মাথায় ভাল ভাবে লাগিয়ে শ্যাম্পু করুন। এতে চুলের পুষ্টি বজায় থাকে। গরমকালে ঘামের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসিডিক সল্ট বেরিয়ে যায়। ফলে চুলের রং নষ্ট হয় এবং চুল উঠতে শুরু করে। যাঁদের চুল তৈলাক্ত, তাঁদের ক্ষেত্রে গ্রীষ্মকালে তৈলাক্ত ভাব আরও বৃদ্ধি পায়। তাঁরা যদি দিনে দু’বার শ্যাম্পু করেন, তা হলেও ক্ষতি নেই।
গ্রীষ্মকালের আর একটি খেয়াল করার বিষয় হল সাঁতার। সুইমিং পুলের ক্লোরিন যুক্ত জল চুলের ক্ষতি করে। তাই জলে নামার সময় চুলে হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নেবেন, এবং শাওয়ার ক্যাপ পরতে ভুলবেন না।
অনেকে বলেন, গ্রীষ্মকালে চুলে তেল মাখা উচিত নয়। কারণ, তেল লাগালে চুল আরও বেশি ওঠে।
কথাটি ঠিক নয়। চুলের যে গোড়াগুলি দুর্বল, সেগুলি উঠে আসে। তেল মাখলে সেগুলি বেশি খসে যায় না।
সাধারণ ভাবে একটি পরামর্শ হল, এক মুঠো আমলকী সারা রাত গরম জলে ভিজিয়ে তার জলটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে নিন। এর কিছু ক্ষণ পরে শ্যাম্পু করুন। এতে চুলের প্রকৃত রং বজায় থাকবে, সঙ্গে সঙ্গে তার রুক্ষতাও চলে যাবে।

যাঁদের চুলের গোড়ায় ঘাম জমে বিশ্রী গন্ধ হয়, এবং চুল ওঠে, তাঁরা নিম যুক্ত টোনার তুলোয় করে সমস্ত স্ক্যাল্পে বুলিয়ে নিন। এতে কোনও সংক্রমণের ভয় থাকবে না, এবং গন্ধও হবে না।

ছোট বাচ্চারা ভীষণ ঘামে এবং গরমে বাচ্চাদের মাথায় র্যাশ ও ফুসকুড়ি খুবই দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে, একটু বড় হলুদের টুকরো, এক মুঠো নিমপাতা নিয়ে, এক লিটার জলে ফুটতে দিন। জলের পরিমাণ অর্ধেক হলে ফ্রিজে রাখুন। দিনে দুই থেকে তিন বার ঠান্ডা কমিয়ে ওই জলটি দিয়ে মাথা মুছিয়ে দিন। সারা গরমকালে কোনও ফোঁড়া, র্যাশ কিছুই থাকবে না।

ঘরে পাতা দই ও বেসনের মিশ্রণে তৈরি প্যাক চুলের জন্য শ্রেষ্ঠ। দইয়ের একটি নিজস্ব ঠান্ডা রাখার ক্ষমতা আছে। এবং বেসনে আছে প্রোটিন ও পরিষ্কার রাখার বিশেষ গুণ। এই সব গুণই চুলের জন্য বিশেষ উপকারী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.