স্বাদের লাউ
মন সাধের একটি বস্তু জীবনে না থাকলে কবে যে বৈরাগী হয়ে যেতাম, কাকপক্ষীও টের পেত না। ভাবুন, ব্যাটা চিংড়ির কী দশা হত, নামের আগে লাউ না থাকলে কার এত মাথাব্যথা যে তার কদর করত! বাঙালির পাতে এমন সরস খাদ্যযোগ আর ক’টাই বা আছে, আপনিই বলুন না?
তা, লাউ যে খুব অভিজাত সবজি এমনটা তো নয়। তাকে নিয়ে কিঞ্চিৎ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, হাসি ঠাট্টা অবধি চলে। তা হোক। চাঁদিফাটা গরমে লাউয়ের ডাল খেয়ে প্রাণ জুড়োয়নি, এমন বঙ্গসন্তান বিরল। আহা, সঙ্গে এক কোয়া গন্ধরাজ লেবু, জমে দই! চল্লিশ ডিগ্রি গরমে পুড়তে থাকা শহরে এর চেয়ে মোক্ষম দাওয়াই আর কী আছে।
লাউয়ের মতো দেখতে বলে যতই আওয়াজ দিক, চচ্চড়ি থেকে ডিজার্ট, লাউয়ের মহিমা অপার। এমনকী বাঙালির পরম প্রিয় সব মিষ্টান্নেও লাউয়ের ব্যবহার সুবিদিত। লাউয়ের মোরব্বা তো অতি উপাদেয় একটি সৃষ্টি। বীরভূমের সিউড়ি বা রামপুরহাট এর জন্য প্রসিদ্ধ।
শুনেছি, লাউ বা চালকুমড়ো নাকি বলিও দেওয়া হয়, ছাগলাদির প্রাণরক্ষার তাগিদে। তা হলে কি লাউয়ের কোনও বিশেষ আমিষগুণও আছে? ব্যাপারটা চাউর হয়ে গেলে রেওয়াজি খাসির দোকানের তো মাথায় হাত! তা, ভেজ হোক বা নন-ভেজ, লাউয়ের গুণে যে কোনও ভেজাল নেই, সে কথা না মেনে কিন্তু উপায় নেই।
ছবি: দেবাশীষ দেব
অন্তত, উইকিপিডিয়া তো সেই কথাই বলছে। এত মিনারেল্স নাকি অন্য অনেক সবজিতেই নেই। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবেও এর জুড়ি মেলা ভার। সাধে কি, রুণা লায়লার ওই প্রবাদপ্রতিম গানটির দুই বঙ্গেই এমন জনপ্রিয়তা? বাংলাদেশের মানুষেরা লাউয়ের অনেক বেশি রেসিপি জানেন, এ বঙ্গের মানুষজনের থেকে। আমি তো অন্তত তা-ই দেখেছি। চিংড়ি বাদেও নানা রকমের মাছে, বিশেষত ইলিশে, লাউয়ের এমন ইনোভেটিভ ব্যবহার অন্য কোথাও দেখিনি।
আসলে, স্বাদ পাল্টে যায় দেশান্তরে। জল আর পানির স্বাদও কি আর এক? এক যদি হত, তবে ইলিশ কেন বেশি ভালবাসে পদ্মাপার? তা, স্বাদে যতই ফারাক থাক, আস্বাদে যে সে তুলনাহীনা। অবশেষে, আমার একটি ফিউশন রেসিপির কথা এই লেখার শেষ পাতে না বললেই নয়। চেষ্টা করে দেখতে পারেন। লাউ-চাউ। এমন হিন্দি-চিনি খাই-খাই রেসিপি বড়ই সুস্বাদু। বড় সাধের, এই স্বাদের সন্ধান।
আর সন্ধান না করেই বা উপায় কী বলুন, এই মারকাটারি গরমে বাইরেটা না হয়, এ সি চালিয়ে ঠান্ডা করলেন, শরীরের ভেতরটা ঠান্ডা করতে লাউ লা-জবাব! এমন প্রাকৃতিক এয়ার কন্ডিশনার কোথায়, ক’টা পাবেন শুনি? কুচো চিংড়ি তো ছুতো, লাউ অ্যালাউ করলে কত মাছ বর্তে যায় এই গ্রীষ্মিতে! আসলে, নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা বলে লাভ নেই, থানকুনি পাতারও চমৎকার ঝোল হয়, রান্না জানাটাই সব! তো, প্রাণ জুড়োতে লাউ অ-সাম-শালা! এক বন্ধুর জামাইষষ্ঠীর মেনুতে তাঁর শাশুড়ি মা এমন লাউ-চচ্চড়ি রেঁধেছিলেন যে, বন্ধু পরে অফিসে গপ্পো জুড়েছিল, ওহ, যা মেটে-চচ্চড়ি খেলাম, জন্ম-জন্মান্তরেও ভুলব না। তা পারে, লাউ পারে বটে, জামাই ঠকানো রান্না রাঁধতে!
শুনেছি, বাঙালি যখন, পূর্বে পশ্চিমে যেত হাওয়াবদল করতে, সঙ্গে চাল-ডাল-তেল-নুনের সঙ্গে লাউ নিত খান কতক, বিহারি ওয়েদারকে কাবু করতে সেটা নাকি অব্যর্থ ওষধি হিসাবে গণ্য হত। শিমুলতলা, কী যশিডির সেই স্থানমাহাত্ম্য আজ আর কতটা আছে জানি না, তবে লাউ আজও আছে এবং থাকবে। সাহেবি ‘গোর্ড’ গোত্রীয় এই ফসলটি নিয়ে জাস্ট কোনও কথা হবে না! বিলিতি কথায় আছে অ্যান অ্যাপেল আ ডে, কিপ দ্য ডিজিজ অ্যাওয়ে। লাউয়ের ক্ষেত্রেও সে রকম বলা যায় কিপ দ্য সামার অ্যাওয়ে। তা, শুরুতে বলেছিলাম না, লাউ বলে লোকে আওয়াজ দিয়ে থাকে? তো, লাউয়ের মতো এমন বিল‘কুল’ জিনিস আর আছে নাকি!
লাউয়ের আর একটা ব্যাপার আছে। সেটার যোগ সঙ্গীতের সঙ্গে। বিশেষত, লোকসঙ্গীত। শুকনো লাউয়ের খোল থেকে যে কত রকম তালবাদ্য ও বাজনা তৈরি হয়, তার হিসেব নেই। তবলা-বাঁয়া-তানপুরা তো লাউয়েরই বাই-প্রোডাক্ট। তা হলে, ভেবে দেখুন, খাদ্য থেকে বাদ্য, লাউয়ের মহিমা অপার। বড় সাধের এই স্বাদের লাউ!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.