বাড়ি তো নয়, যেন গ্রিনহাউস
যে কোনও ছুটিছাটায় বেড়াতে যাওয়ার এত হিড়িক পড়ে কেন বলুন তো? কারণ, আমরা পালাতে চাই কংক্রিটের দুনিয়া থেকে, প্রতি দিন নাগাড়ে ধুলো-ধোঁয়া শুষে চলা ফুসফুসটাকে দিন কয়েকের জন্য রেহাই দিতে চাই, মুখ গুঁজতে চাই সবুজের কোলে। যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরা বানিয়ে ফেলেন বাগানবাড়ি। মাঝেমধ্যেই জিরোতে যান সেখানে।
কিন্তু যাঁদের পক্ষে সেটা সম্ভব হয় না, তাঁরা অগত্যা একগাদা খরচ করে পাহাড়, সমুদ্র বা জঙ্গলের দিকে ছোটেন তাজা অক্সিজেনের খোঁজে। কিন্তু আপনার নিজের বাড়ি বা ফ্ল্যাটটার আশেপাশে বা এর মধ্যেই যদি ভরে দেওয়া যায় এক আঁজলা সবুজ, তা হলে প্রকৃতির সঙ্গে আপনার দূরত্ব কত কমবে ভাবুন তো!

বাড়ির সামনে বাগান করার মতো জায়গা নেই, অথচ খোলা হাওয়ায় সবুজের মধ্যে রিল্যাক্স করতে মন চাইছে। এমন হলে টেরেস গার্ডেন-এর জুড়ি নেই। ইনডোর প্ল্যান্ট-এর যত্নআত্তির জন্যও এই জায়গা আদর্শ। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খুঁটিয়ে দেখে নিয়ে এগোতে হয়।

• আগে দেখে নিন ছাদ বাগানের ভার সামলানোর মতো শক্তপোক্ত কি না।

• টেরেস গার্ডেন-এর জন্য নিকাশি ব্যবস্থা খুব ভাল হওয়া দরকার। সেই সঙ্গে ছাদ যেন কিছুটা ঢালু হয়, যাতে জল চট করে বেরিয়ে যেতে পারে।

• জল চোঁয়ানোর সম্ভাবনা আছে কি না, বিশেষজ্ঞকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিন। তা না হলে পরে সমস্যা হতে পারে।

বাগানের লন তৈরির জন্য এমন মাটি বেছে নিতে হবে, যা ছাদের ওপর খুব বেশি চাপ ফেলবে না। টেরেস গার্ডেন-এর জন্য আদর্শ সয়েল রাইট এবং পিট মস। তবে এগুলি বেশ দামি। তাই এর সঙ্গে বাগানের মাটি এবং সার মিশিয়ে নিতে পারেন। ছাদটিকে জল-নিরোধক বানানোর জন্য পোড়া ইট ব্যবহার করুন। কারণ সাধারণ ইট একটা নির্দিষ্ট সময় পর মাটি হয়ে যেতে পারে। তিন ইঞ্চি মতো ব্যবধানে করোগেটেড শিটও ব্যবহার করতে পারেন। এতে খুব সহজেই জল ড্রেনের দিকে গড়িয়ে যাবে। ইটের ওপর পেতে দিন নেট লন। নেট লন থাকলে মাটি ইটের খাঁজে ঢুকে যেতে পারবে না। তবে, টেরেস-এর আয়তন যদি বেশ বড় হয়, তা হলে অনেকগুলি জায়গায় ড্রেন তৈরি করতে হবে। লন তৈরির জন্য মাটির গভীরতা রাখুন ১২-১৫ সেন্টিমিটার মতো। এর পর স্থানীয় নার্সারি থেকে টেরেস গার্ডেন-এর উপযুক্ত গাছের চারা কিনে আনুন। যে সমস্ত গাছের মূল অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে, সেই গাছ টেরেস-এর পক্ষে উপযুক্ত হবে না, কারণ এই ধরনের মূল ছাদের ক্ষতি করতে পারে। রোদ পড়ছে এমন জায়গায় ফুলগাছ এবং ঘাস আর কম রোদ আসে, এমন জায়গায় ক্রোটন, কেন ব্যাম্বু, মানিপ্ল্যান্ট-এর মতো ফুলবিহীন গাছের চারা বুনতে পারেন। ফলের গাছের মধ্যে লেবু, সবেদা, পেয়ারা ইত্যাদি লাগানো যেতে পারে।

অধিকাংশ বাড়িতে বা ফ্ল্যাটে টেরেস গার্ডেন করার সুযোগ মেলে না। টেরেস গার্ডেন যথেষ্ট খরচসাপেক্ষও বটে। কিন্তু বাড়ির বারান্দাটিতেও তো চমৎকার বাগান করা চলে। এতে খরচ, ঝামেলা দুই-ই কম। টবে গাছ সাজানোর সময় খেয়াল রাখুন, গাছের দৈর্ঘ্য যেন টবের দ্বিগুণের বেশি না হয়। ব্যালকনির এক ধারে টব সাজিয়ে রাখুন। টবগুলো এ দিক-ও দিক ছড়িয়ে রাখবেন না। এতে হাঁটাচলার পথ থাকবে না।
তিন-চারটে টব ঘিরে মেঝে থেকে হাতখানেক উঁচু ফেন্সিংয়ের ব্যবস্থাও করতে পারেন। এতে বারান্দার পরিচ্ছন্ন ভাব বাড়বে।
কন্টেনারে ফুলগাছ লাগাতে চাইলে পর্যাপ্ত রোদ পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দিনের চড়া রোদ নয়, সকালের নরম রোদে বেশ কিছু ক্ষণ এই টবগুলি রেখে দিতে হবে। নানা রকমের ক্যাকটাস বা অর্কিডের একটা সংগ্রহও এখানে তৈরি করতে পারেন। ব্যালকনিতে কংক্রিট বা পাথরের তৈরি খুব ভারী টব বাছবেন না। টেরাকোটা, ফাইবারগ্লাস, চিনেমাটি, প্লাস্টিকের হালকা টব ব্যবহার করুন। টেরাকোটা টবের ওপর ফুশিয়া বা লাইম গ্রিন কালার দিয়ে স্প্রে পেন্ট করে দিলে দেখতে খুব সুন্দর লাগে। বাতিল হয়ে যাওয়া জলের জগ, বালতি, দুধের বোতল ইত্যাদি দিয়েও চমৎকার কন্টেনার গার্ডেন তৈরি করা যায় ব্যালকনিতে। ব্যালকনির বাগানে একটু নতুন রূপ দিতে চাইলে একটা বড় গামলার মতো দেখতে মাটির পাত্রে নানা আকারের নুড়ি ফেলে দিন। এতে জল ভরুন। ওপরে ভাসিয়ে দিন অল্প কিছু সতেজ পাতা, জলজ ঝাঁঝি আর সামান্য ফুল। তৈরি আপনার মিনি পুকুর। এ বার এর দু’ধারে ছোট্ট ছোট্ট টবে কিছু ঝোপালো গাছ দিয়ে ঘিরে দিন।

ছোট ব্যালকনি, যেখানে টব রাখার তেমন জায়গাও পাওয়া যায় না, সেখানে রেলিংয়ে লতানে গাছ লাগান। এর সঙ্গেই হ্যাঙ্গিং প্ল্যান্টার, টেরাকোটার ঘর সাজানোর টুকিটাকি আর সুন্দর ওয়াল হ্যাঙ্গিং দিয়ে পুরো জায়গা সাজিয়ে নিন।
তবে, কিছু গাছ বসিয়ে দিলেই যে আপনি দারুণ পরিবেশপ্রেমী হয়ে উঠবেন, এমনটা নয়। মনটাকে সবুজ রাখতে ঘরেও কিছু প্রকৃতির ছোঁয়া আনুন। সামান্য জিনিসেও চমৎকার ডেকর প্ল্যান করা যায়। একটা প্ল্যাটার বা ট্রে নিন। এতে বালি ভরুন। বালির ওপর ছড়িয়ে দিন কিছু ঝিনুক, ছোট ছোট শাঁখ, আর ইতিউতি গুঁজে দিন শরবতের গ্লাসে যে ছোট্ট ছোট্ট রঙিন ড্রিঙ্কিং আমব্রেলা ব্যবহার করা হয়, তার দু-চারটে। সি-বিচের একখানা ক্ষুদ্র সংস্করণ তৈরি। সাইড টেবিলে সাজিয়ে রাখতে পারেন ছোট্ট এই সমুদ্রতট। নদীর ধার থেকে নানা ধরনের নুড়ি-পাথর কুড়িয়ে আনার শখ তো অনেকেরই থাকে। নদীর জলের ঘষা খেয়ে এদের এক-একটার এক-এক রকমের আকার আর নকশা হয়ে যায়। আপনার টয়লেট-এর ফাঁকা জায়গাটায় পর পর তিন-চারটে তাক বাড়িয়ে তাতে অ্যাকোয়া গ্রিন রং করুন। এ বার এতে সাজিয়ে রাখুন ওই নুড়ি-পাথর, ঝিনুক, শঙ্খগুলি। ঘরের মধ্যে যাঁরা ইনডোর প্ল্যান্ট রাখা পছন্দ করেন না, তাঁরা এক ঝুড়ি লেবু, মুসুম্বি, পেয়ারা, আঙুর বা ফুলের সাজিতে নানা রঙের ফুল সাজিয়ে রাখতে পারেন। উজ্জ্বল রঙের জন্য গাঁদা, সূর্যমুখী আর মিষ্টি গন্ধের জন্য বেল, জুঁইয়ের কোনও জুড়ি নেই। এদের তাজা গন্ধ নিমেষে ঘরের গুমোট কাটিয়ে দেবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.