গর্ভস্থ জীবিত সন্তানকে চিকিৎসক মৃত বলার অভিযোগ নিয়ে কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে রিপোর্ট তলব করলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বুধবার রাতে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে ঘটনাটি ঘটে। শুক্রবার বিধানসভায় ঘটনার কথা শুনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “দফতরে ফিরে ঘটনার খোঁজ নেব। কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হবে। চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রসূতির নাম শর্মিষ্ঠা মোহন্ত। দিনহাটার গীতালদহ এলাকার বাসিন্দা সাত মাসের সন্তানসম্ভবা ওই মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়ায় বুধবার বিকেলে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অভিযোগ, সন্ধ্যায় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক শরণ্যা ঘোষ (চৌধুরী) তাঁকে লেবার রুমে নিয়ে গর্ভের সন্তান মৃত বলে জানান। সেই সঙ্গে তিনি মৃত সন্তান প্রসবের জন্য ওষুধ দেন। এর পরে প্রসূতি জীবিত অপরিণত পুত্র সন্তান প্রসব করায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি নিয়ে বুধবার রাতে দিনহাটা থানায় শর্মিষ্ঠা দেবীর বাবা সনৎ মোহন্ত সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। প্রসূতির পরিবারের তরফে হাসপাতালের সুপারের কাছেও অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু যার বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ সেই চিকিৎসক শরণ্যা ঘোষ (চৌধুরী) কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কথায়, “ওই বিষয়ে যা বলার হাসপাতালের সুপার বলবেন।” দিনহাটা হাসপাতালের সুপার রণজিৎ মন্ডল বলেন, “অভিযোগের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
এ দিকে ঘটনার কথা জানাজানি হতে এলাকার ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে তদন্তের আশ্বাস দিয়ে বৃহস্পতিবার দু’জন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞকে নিয়ে কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে রিপোর্ট তলব করায় ক্ষোভ অনেকটা প্রশমিত হয়েছে। বাসিন্দারা জানান, কয়েক মাস আগে জেলা সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে জীবিত দুই সদ্যোজাতকে পরীক্ষা না করে মৃত ঘোষণার অভিযোগ উঠেছিল। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর তৎপরতায় ঘটনার তদন্তে উদ্যোগী হন স্বাস্থ্য কর্তারা। এ বারও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমনটাই আশা তাঁদের। হাসপাতালের সুপার বলেন, “ঘটনার তদন্তের জন্য দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি যে রিপোর্ট দেবে সেটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হবে।”
শর্মিষ্ঠার দেবীর বাপের বাড়ি দিনহাটার বড় আটিয়াবাড়ি এলাকায়। গীতালদহের প্রান্তিক কৃষক সন্তোষ মোহন্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বুধবার বিকেলে তাঁকে দিনহাটা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শর্মিষ্ঠা দেবীর বাবা সনৎ মহন্ত বলেন, “আলট্রাসোনোগ্রাফি বা অন্য কোনও পরীক্ষা না করে চিকিৎসক আমার মেয়ের গর্ভস্থ সন্তান মৃত বলে জানিয়ে দেন। মৃত সন্তান প্রসবের জন্য মেয়েকে ওষুধ দেওয়া হয়। পরে মেয়ে জীবিত পুত্র সন্তানের জন্ম দেন।” ঘটনার পরে শর্মিষ্ঠা দেবী দিনহাটা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও সদ্যজাতকে কোচবিহার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এ দিকে বিষয়টি জানাজানি হতে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ফরওয়ার্ড ব্লকের দিনহাটা শহর লোকাল কমিটির সম্পাদক বিশু ধর বলেন, “চিকিৎসা পরিষেবা বলে যে ওই হাসপাতালে কিছু নেই তা শর্মিষ্ঠা দেবীর ঘটনায় স্পষ্ট। অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কড়া ব্যাবস্থা নেওয়া না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।” |