ফের চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগীমৃত্যুর অভিযোগ উঠল কালনা মহকুমা হাসপাতালে।
বিনা চিকিৎসায় এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে, এই অভিযোগে গত সোমবারই আত্মীয়-পরিজনের হাতে ঘেরাও হন সুপার। চিকিৎসক না থাকায় মেডিসিন বিভাগে পূর্ণ পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না, এই মর্মে গত মঙ্গলবারই একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসকদের সঙ্গে সহযোগিতার আবেদনও জানানো হয় হাসপাতালে আসা মানুষজনের কাছে। বস্তুত, চিকিৎসকের অভাবে এই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ রাত নামলেই কার্যত অনাথ হয়ে পড়ার দশা হয়।
বৃহস্পতিবার কালনার নান্দাই পঞ্চায়েতের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা অসীমা রায়কে (৪২) সাপে ছোবল মারে। রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শুক্রবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, চিকিৎসায় গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। হাসপাতাল সুপার ও মহকুমাশাসককের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন তাঁরা।
এর আগে গত সোমবার পেটে ব্যাথা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন নদিয়ার এক মহিলা। তাঁর আত্মীয়দেরও অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান তিনি। বারবার বলা সত্ত্বেও দীর্ঘক্ষণ কোনও চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন তাঁরা।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ চিকিৎসকের অভাবে বহু দিন ধরেই ধুঁকছে। তবে রাতে থাকার জন্য বৃহস্পতিবারই এক চিকিৎসক মেডিসিন বিভাগে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সুপার। কিন্তু তার পরেই ফের চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগীমৃত্যুর অভিযোগ উঠল।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার মাটির বাড়ির মেঝেতে শুয়ে ঘুমোচ্ছিলেন অসীমাদেবী। রাত ১২টা নাগাদ সাপ ছোবল মারে তাঁকে। রাত ২টো নাগাদ কালনা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অসীমাদেবীর স্বামী শীতল রায় অভিযোগ করেন, ভর্তি করানোর পরে তাঁর স্ত্রীকে এক জন মেডিক্যাল অফিসার দেখেন। কিন্তু ক্রমশ অবস্থার অবনতি শুরু হয়। ভোরে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয় তাঁকে। শীতলবাবু জানান, জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় টাকাপয়সা, অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে ওঠার আগে সকাল ৬টা নাগাদ কালনা হাসপাতালেই মৃত্যু হয় অসীমাদেবীর। শীতলবাবুর দাবি, হাসপাতালের নিয়মানুযায়ী রোগীর পরিস্থিতির অবনতি হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ‘কল’ দিয়ে হাসপাতালে আনানো হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। ঠিকঠাক চিকিৎসা না হওয়ার কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ। হাসপাতালের নার্সদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও বলেছেন শীতলবাবু।
এ দিন অসীমাদেবীর পরিবারের সঙ্গে হাসপাতালে অভিযোগ জানাতে আসেন কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধক্ষ্য সুশীল পাকিরা। হাসপাতালে সুপার না থাকায় অভিযোগ নেন এসিএমওএইচ সুভাষচন্দ্র মণ্ডল। সুশীলবাবু এসিএমওএইচের কাছে দাবি করেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলে হয়তো ওই মহিলার এ রকম পরিণতি হত না। প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে বা ঠিক সময়ে অন্য হাসপাতালে রেফার করে এমন ঘটনা এড়ানো যেতে পারত বলে তাঁর মত।
মহকুমা হাসপাতালের সুপার অভিরূপ মণ্ডল এ দিন কালনায় ছিলেন না। তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এক রোগীর মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তাঁকে প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগের বিষয়টি ফিরে গিয়ে দেখব।” সুপার জানান, মেডিসিন বিভাগে এত দিন রাতে রোগী দেখার চিকিৎসক ছিলেন না ঠিকই। তবে বৃহস্পতিবার থেকে ওই বিভাগে আরও এক জন চিকিৎসক যোগ দিয়েছেন। তিনিই রাতে রোগী দেখবেন। কিন্তু রোগীর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, রাতে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা তাঁরা পাননি। সুপার বলেন, “এই বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হবে।” |