সুস্থ, বলছেন ডাক্তারেরা
‘মনোরোগী’ বলে ফিরিয়ে দিল ব্যাঙ্ক
পাঁচ লক্ষ টাকার চেক হাতে নিয়ে পাঁচ মাস ধরে বসে রয়েছেন বছর পঁয়তাল্লিশের নীতি চৌধুরী। চেকটি ব্যাঙ্কে জমা দিতে পারছেন না। গত পাঁচ মাস ধরে এক সরকারি ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষ তাঁকে ঘুরিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
নীতিদেবীর অপরাধ? তিনি অতীতে স্কিৎজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন। চিকিৎসকেরা তাঁকে সুস্থতার শংসাপত্র দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়লেও কর্পোরেশন ব্যাঙ্কের বালিগঞ্জ শাখার কর্তৃপক্ষের নজরে তিনি এখনও ‘পাগল’! অতএব, ওই ব্যাঙ্কে তাঁকে কিছুতেই অ্যাকাউন্ট খুলতে দেওয়া হবে না। মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনও অভিযোগেই তাঁদের কিছু যায়-আসে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার এম এন মোগারের কথায়, “যিনি এখনও ওষুধ খান, ধরেই নিতে হবে, তিনি মানসিক ভাবে অসুস্থ এবং অ্যাকাউন্ট খোলার অযোগ্য।”
অতএব, পাঁচ মাস ধরে নীতিদেবীর পাঁচ লক্ষ টাকার সুদ নষ্ট হচ্ছে। মানসিক হাসপাতালের চার দেওয়াল থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থ জীবনে ফেরার যে লড়াই তিনি চালাচ্ছেন, ধাক্কা লেগেছে সেখানেও। স্বাস্থ্য দফতর ও মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির মতে, এমনিতেই মানসিক রোগ থেকে মুক্ত হওয়া মানুষের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার গতি এখনও এ দেশে যথেষ্ট কম। এমন ঘটনা সে প্রক্রিয়াকে এক ধাক্কায় আরও অনেকটা পিছিয়ে দিতে পারে।
পাঁচ লক্ষ টাকার সেই চেক হাতে নীতি চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।
২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে লুম্বিনী পার্ক মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিয়ে তৈরি বোর্ডের থেকে ‘ফিট ফর ডিসচার্জ’ শংসাপত্র পান নীতিদেবী। ২০১০-এ হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে শোভাবাজারে একটি চাকরিতেও যোগ দেন তিনি। ২০১১ সালের শেষ দিকে এই কর্পোরেশন ব্যাঙ্কেই তিনি একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। সেই অ্যাকাউন্টে বছরে ৫০ হাজার টাকার বেশি জমা দেওয়ার নিয়ম ছিল না। ফলে, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর নিজের বাড়ি বিক্রির ৫ লক্ষ টাকার চেক পেয়ে তা জমা দেওয়ার জন্য তিনি ওই ব্যাঙ্কেই দ্বিতীয় একটি অ্যাকাউন্ট খোলার আবেদন করেন। তখন থেকেই টালবাহানার সূত্রপাত। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের বক্তব্য, “নীতিদেবীকে প্রথম অ্যাকাউন্টটাই খুলতে দেওয়া ঠিক হয়নি। অধস্তন এক অফিসার সেই সময়ে আমাকে না-জানিয়েই ওটি করে দিয়েছিলেন। সব জেনে মানসিক ভাবে অসুস্থ এক জনকে ফের অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দেব না।”
কিন্তু নীতিদেবীকে চিকিৎসকদের দেওয়া ‘ফিট ফর ডিসচার্জ’ শংসাপত্র ব্যাঙ্কে জমা রয়েছে। তবে আপত্তি কেন? ম্যানেজারের জবাব, “চিকিৎসকেরা যদি লিখে দেন যে, ওঁকে আর ওষুধ খেতে হবে না, তবেই বিবেচনা করতে পারি। তার পরেও যে হবেই, সে গ্যারান্টি নেই।”
হতাশ নীতিদেবী বলেন, “ভেবেছিলাম, এত দিনে আমার লড়াই শেষ। কিন্তু আমার প্রাপ্য অধিকার দেওয়া হচ্ছে না। চেকের মেয়াদ ফুরোতে আর ২০ দিন বাকি। এর মধ্যে অ্যাকাউন্ট না-হলে পথের ভিখিরি হয়ে যাব।” একে সম্পূর্ণ ‘মানবাধিকার-বিরোধী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান রত্নাবলী রায় এবং এপিডিআর-এর সচিব দেবপ্রসাদ রায়চৌধুরী। রত্নাবলীদেবীর অভিযোগ, “ব্যাঙ্কের তো কারও রোগের ইতিহাস জানারই কথা নয়। ঘটনাচক্রে নীতিদির রোগের কথা জেনে ফেলেছিল বলে এখন অন্যায় ভাবে তাঁকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।”
কোনও ব্যাঙ্ক কি এটা করতে পারে? রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া সূত্রের খবর, গ্রাহকের পুরনো কোনও রোগ ছিল কি না, তা ব্যাঙ্কের জানার কথা নয়। তবে নীতিদেবীর ব্যাপারটি যেহেতু একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দেখছে এবং তাঁর কাগজপত্র জোগাড়ে যেহেতু একটু সমস্যা হচ্ছিল, তাই হয়তো ব্যাঙ্ককে অসুস্থতার কথা জানানো হয়েছিল। তবে ব্যাঙ্ক কোনও গ্রাহককে অ্যাকাউন্ট খুলতে দেবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নির্দিষ্ট শাখার কর্তৃপক্ষের হাতেই থাকে।
মনস্তত্ত্বের শিক্ষক নীলাঞ্জনা সান্যাল অবশ্য একে ‘এক জন মানুষকে জবরদস্তি সামাজিক ভাবে প্রত্যাখ্যান করা’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর কথায়, “নিয়মের যুক্তিতে যা করা হচ্ছে, তা আসলে সুস্থ হওয়া মানুষকে ফের অসুস্থতার দিকেই ঠেলে দেওয়া।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.