পূর্ব কলকাতা
নিত্য ভোগান্তি
‘অটোক্র্যাসি’
টো আছে। রুটও আছে। নির্দিষ্ট ভাড়াও আছে। তবু সন্ধ্যা নামতেই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায় সেই রুট। কোথাও ভাড়া বাড়ে অলিখিত ভাবে। কোথাও যাওয়ার মর্জি নেই অটোচালকের। আর এর জেরে নিত্যদিনের ভোগান্তি যাত্রীদের।
রাত ৮টা। শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনের ঠিক পিছনে জনা কুড়ি যাত্রীর লাইন। অথচ অটো নেই। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে একটা অটো আসতেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন যাত্রীরা। এর ভাড়া আট টাকা। আবার মেট্রো স্টেশনের ঠিক সামনে একেবারে অন্য দৃশ্য। বি কে পাল, জোড়াবাগানের দিক থেকে তখন ছুটে আসছে প্রচুর অটো। সেই ‘ফ্লাইং’ অটো ধরতে ছুটছেন যাত্রীরা। কেন এই তারতম্য? এক যাত্রীর কথায়, “ফ্লাইং অটো উল্টোডাঙা যেতে দশ টাকা নেয় ঠিকই।
তবে লাইনে দাঁড়াতে হয় না।’ আবার কিছু যাত্রীর অভিযোগ, গ্রে স্ট্রিটে প্রচণ্ড যানজটে অটো আটকালেই বেশি টাকা দাবি করে।
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য
সন্ধ্যা ৭-৩০। সিঁথির মোড়। প্রতিদিনের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে যাত্রীরা। সিঁথির মোড় থেকে বরাহনগরের দিকে যেতে অটোর দু’টি রুট। একটি সিঁথির মোড় থেকে ব্যানার্জিপাড়া। অন্যটি সিঁথির মোড় থেকে কুঠিঘাট। চাঁদনির অফিস থেকে প্রতিদিন বরাহনগরের ব্যানার্জিপাড়ায় বাড়িতে ফিরতে রীতিমতো ঘোল খেতে হয় রূপাকে। সন্ধে সাতটা থেকে শুরু সমস্যার। যাত্রীদের তরফে অভিযোগ, রাত বাড়লে অটো মেলা ভার। অটো থাকে না বা ইচ্ছেমতো ভাড়া না পেলে যেতে চায় না। অভিযোগ স্বীকার করছেন অটোচালকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, আগে ইউনিয়নের দলাদলির কারণে কিছু অটো চালক অযথা যাত্রী না তুলে হয়রান করত। এখন যাত্রী অসুবিধার অন্য কারণ। এই রুটের তৃণমূল পরিচালিত অটো-চালক ইউনিয়নের সেক্রেটারি রঞ্জিত দাসের দাবি, “কুঠিঘাটের রুটের ১৪টি গাড়ির ৬টি বন্ধ আছে রেজিস্ট্রেশনের সমস্যায়। একই কারণে ব্যানার্জিপাড়া রুটের ৭০টা গাড়ির ২২টি বন্ধ রয়েছে। তিন মাস ধরে কাজ চলছে মহারাজা নন্দকুমার রোডে। রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় গাড়ি ঘুরপথে যেতে সময় নষ্ট হচ্ছে। প্রতি দিন অফিসটাইমে ব্যাপক যানজটে বরাহনগর বাজার এলাকায় অটো আটকে থাকে।”
উল্টোডাঙা-বাগুইআটি রুটের অটো আর এক ত্রাস। বাগুইআটি পর্যন্ত ধার্য ভাড়া নয় টাকা। যাত্রীদের অভিযোগ, দশ থেকে বারো টাকা নেয় অটোগুলো। উল্টোডাঙা থেকে বাগুইআটি রুটের পরে হলদিরাম বা এয়ারপোর্টের কোনও অটো রুট নেই। তবু বেআইনি ভাবে দিব্যি চলে অটো। তাও অনির্দিষ্ট ভাড়ায়।
ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী
হলদিরামের বাসিন্দা মানস রায়ের অভিযোগ, “উল্টোডাঙা যেতে রাতে পনেরো থেকে কুড়ি টাকা ভাড়া দিতে হয়। দিনে একই দূরত্ব যেতে নেয় বারো।” কেন এমন গরমিল? অটোচালকদের বক্তব্য, এই রুটে অটো কিনতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হয়। ইএমআই দিতে হয় সাত হাজার, মালিককে ‘বাৎচিৎ’ দৈনিক আড়াইশো টাকা, গ্যাস কেনার দৈনিক খরচ তিনশো সব দিয়ে দিনের শেষে যা থাকে তাতে সংসার চলে না। পাশাপাশি অবৈধ অটোর সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে বাধ্য হয়ে বাগুইআটি রুটের বৈধ অটোও রুট পেরিয়ে যাতায়াত করছে বলে তাঁদের বক্তব্য।
অটো সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ প্রসঙ্গে পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র বলছেন, “গোটা শহরের অটো সমস্যার সমাধান করতে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর। দু’তিন দিনের মধ্যে ‘অটো এক্সপার্ট গ্রুপ’-এর চেয়ারম্যান আশিস ঠাকুরের নেতৃত্বে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা পড়তে চলেছে। রিপোর্ট দেখে যাবতীয় পদক্ষেপ করা হবে। রুট অনুযায়ী অটো কিনতে যে দাম চালকদের দিতে হয়, তা সরকারি মূল্য নয়।
এই পরিস্থিতি বদলাতে সরকার অবশ্যই সচেষ্ট হবে।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.