পূর্ব কলকাতা
বিধাননগর
তৃষ্ণা তীব্র
মস্যা জানা। তবুও সমাধান হচ্ছে না। কমছে না বিধাননগরের জলের সমস্যা। অভিযোগ বাসিন্দাদের একাংশের। পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, সমাধানের চেষ্টা চলছে।
অভিযোগ, মূল বিধাননগরে জলের সমস্যা রয়েছে। সংযুক্ত এলাকায়ও জলের সঙ্কট রয়েছে। সঙ্কটের অভিযোগ অস্বীকার করে পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকটি জায়গায় জলের সমস্যা রয়েছে। দ্রুত মেরামতি করা হচ্ছে। জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। সার্বিক ভাবে পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। বাস্তবায়িত হতে সময় লাগবে।
গরম বাড়লে বিধাননগরে জলের সমস্যা নতুন নয়। বর্তমান পুরবোর্ড দায়িত্ব গ্রহণের পরে জল সমস্যা মেটাতে জলের মিটার বসানো, মাটির নীচের জলের ব্যবহার কমানোর মতো বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পুরবোর্ড চেষ্টা করলেও সমস্যা মিটছে না। পরিকল্পনা থাকলেও তা কার্যকরী হয়নি। যেমন, অর্মত্য আবাসন। বিধাননগর পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের এই আবাসনে ১১টি বিল্ডিং রয়েছে।
স্থানীয় কাউন্সিলর সিপিএমের শাশ্বতী মণ্ডল বলেন, “জলের সমস্যা পুরো ওয়ার্ড জুড়ে। জল পাচ্ছেন না অনেকেই। জল কিনে খেতে হচ্ছে। অর্মত্য আবাসনে সমস্যা বেড়েছে। কিন্তু পুরসভাকে জানিয়ে কোনও লাভ হচ্ছে না।” ওই আবাসন কমিটির সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস বলেন, “গত দু’সপ্তাহ ধরে জলের সমস্যা বেড়েছে। জল কিনতে হচ্ছে। একটি গাড়িতে এক হাজার গ্যালন জল ধরে। দাম চারশো টাকা। রোজ কি জল কেনা সম্ভব? আমরা সমস্যার কথা লিখিত ভাবে চেয়ারপার্সনকে জানিয়েছি। ইঞ্জিনিয়াররা এসে পরীক্ষা করে নানা কথা বলছেন। বেশ কয়েকটি উপায়ের কথাও জানিয়েছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। আর কত জল কিনে খাব?”
২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অমিতাভ মজুমদার বলেন, “পুর-কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছেন কিন্তু সমস্যা রয়ে গিয়েছে। জল সরবরাহের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যের অভাব রয়েছে। আরও গুরুত্ব দিয়ে সমস্যার কথা ভাবতে হবে। না হলে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।” সমস্যা ঠিক কতটা? বিএ ব্লকের প্রসেনজিৎ সাহা বলেন, “জল সরবরাহ হচ্ছে। কিন্তু তা বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। কারও বাড়িতে ফেরুলের সমস্যা। কোথাও আবার পাইপলাইনে ত্রুটি। কোথাও জলের রিজার্ভার ভর্তি হতে অনেক সময় লাগছে। কাউন্সিলরের নেতৃত্বে পুরকর্মীরা চেষ্টা করছেন।” পাশাপাশি এএ ব্লকের বাসিন্দা দিলীপ ভট্টাচার্য বলেন, “১৯৬৫-তে পাইপলাইন বসেছে। এত দিনে পলি পড়ে জলের গতি কমেছে। কাউন্সিলর স্নিগ্ধা মজুমদারকে বিষয়টি জানানো হয়। পুরকর্মীরা পাইপলাইন পরিষ্কারের কাজ করেছেন। আগের থেকে গতি বেড়েছে।”
মূল বিধাননগরের পাশাপাশি সংযুক্ত এলাকায়ও জলের সঙ্কট রয়েছে বলে অভিযোগ পুরসভার বিরোধী দল সিপিএমের। বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের ইলা নন্দী বলেন, “ওভারহেড ট্যাঙ্ক না হলে সংযুক্ত এলাকায় জলের সমস্যা মেটানো মুশকিল। গভীর নলকূপের মাধ্যমে জল সরবরাহ হয়। কিন্তু জলস্তর নেমে গিয়েছে। গরম পড়তেই জলের সমস্যা বেড়েছে। অনেকে জল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন।”
পুর-কর্তৃপক্ষ অবশ্য জলসঙ্কটের অভিযোগ মানতে রাজি নন। তাঁদের দাবি, জলের সমস্যা বিধাননগরে বরাবর ছিল। দীর্ঘ দিনের পুরনো জল সরবরাহের পরিকাঠামো। সার্বিক ভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তা কার্যকরী হতে সময় লাগবে। পুরকর্মীদের একাংশ জানান, বিধাননগরে বহিরাগতের সংখ্যা প্রতি দিন বাড়ছে। তাঁরাও জল ব্যবহার করছেন। পাশাপাশি, গরমে জল ব্যবহারের পরিমাণ বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে জলের চাহিদা আগের থেকে বেড়েছে। কিন্তু তুলনায় জলের যোগান কার্যত একই রয়ে গিয়েছে।
পুরসভার চেয়ারপার্সন তৃণমূলের কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “আমরা মাত্র দু’বছর পুরসভায় ক্ষমতায় এসেছি। গত ১৫ বছর বামেরা ক্ষমতায় ছিল। এই সময়ে সল্টলেকে বাড়ি, জনসংখ্যা সবই বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী জল সরবরাহের পরিকাঠামো কিংবা জলের জোগান বাড়ানোর কোনও চেষ্টাই করা হয়নি। সমস্যার মূলে যাওয়ার চেষ্টাই হয়নি। আমরা এই সমস্যার মূল কারণ খতিয়ে দেখছি। এক দিকে, পরিকাঠামোর উন্নতি করতে হবে। অন্য দিকে, জলের যোগানও বাড়াতে হবে। এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথাও হয়েছে। রাজারহাট প্রকল্প থেকে জল আসবে। বর্ষার পরে অন্য জায়গা থেকে আরও জল নিয়ে আসার ব্যাপারে উদ্যোগী হব।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.