দক্ষিণ দিনাজপুরে রেলপথ সম্প্রসারণে জমি অধিগ্রহণের কাজ ত্বরাণ্বিত করতে জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা চাইল জেলা প্রশাসন। জেলায় নতুন তিনটি রেলপথ সম্প্রসারণ কাজের অগ্রগতিতে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের আন্দোলনের ছায়া পড়তে শুরু করেছে বলে অভিযোগ পেয়েছে প্রশাসন। বুনিয়াদপুর-কালিয়াগঞ্জ রেলপথ সম্প্রসারণের কাজে নানা শর্ত আরোপ করে কালিয়াগঞ্জে একটি সংগঠন অধিগ্রহণে বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা তৃণমূল নেতা চিরঞ্জিব মিত্রের অভিযোগ, “কালিয়াগঞ্জের কিছু নেতা দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে গিয়ে জমির মালিকদের ভুল বোঝাচ্ছেন।” |
রেলের তরফে চাকরি-সহ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণার পরেই জমি দেওয়া হবে বলে হরিরামপুর এবং হিলি ব্লকের কিছু জায়গায় অধিগ্রহণে বাসিন্দারা আপত্তি তোলায় সমস্যা হচ্ছে বলে জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামীও খবর পেয়েছেন। তাই শুরুতেই জমিদাতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি দূর করতে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে মঙ্গলবার বৈঠক করে জেলা প্রশাসন। বৈঠকে জেলার বিধায়ক ও মন্ত্রীর প্রতিনিধি, সাংসদ এবং সভাধিপতি-সহ রেলের আধিকারিকেরা উপস্থিত ছিলেন। হিলি-বালুরঘাট, বুনিয়াদপুর-কালিয়াগঞ্জ এবং বুনিয়াদপুর-ইটাহার ভায়া হরিরামপুর রেলপথে জমি অধিগ্রহণের সমস্যা নিয়ে আলোচনার পর উপস্থিত প্রতিনিধিদের সকলেই দ্রুত জমি অধিগ্রহণের পক্ষ মত দেন। বৈঠকে রেলের তরফে জানানো হয়, উপযুক্ত দাম দিয়ে জমি কেনা হবে। এ ছাড়া জমির মালিকদের রেলের তরফে একটি শংসাপত্র দেওয়া হবে। ওই শংসাপত্র দেখিয়ে পরিবারের একজন রেলের চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের সুযোগ পাবেন। বালুরঘাটের বাম সাংসদ প্রশান্ত মজুমদার বলেন, “জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা মেটাতে আমরা উদ্যোগী হব। জমির মালিকের পরিবারের একজনকে রেলে চাকরির ব্যবস্থা করা হলে অধিগ্রহণ নিয়ে কোনও সমস্যা থাকবে বলে মনে হয় না।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, “রেলের তরফে বাজার মূল্য অনুযায়ী জমির দাম দেওয়ার কথা ঘোষণা হয়েছে। তা ছাড়া শংসাপত্রের মাধ্যমে পরিবারের একজনের চাকরির সুযোগ থাকছে। স্থানীয় ভাবে এ নিয়ে কিছু বিভ্রান্তিকর প্রচার হচ্ছে। জেলার উন্নয়নের স্বার্থে মানুষের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমস্যা মেটানো হবে।” উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রের খবর, ২০১০ সালে বালুরঘাট-হিলি পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার রেলপথ সম্প্রসারণে উদ্যোগী হন তাঁরা। এরপর ২০১১-১২ আর্থিক বছরে ১৭০ কোটি ৯১ লক্ষ টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন করে রেল বোর্ড। প্রথম দফায় ২০ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়। তবে বালুরঘাট এবং হিলির দিকে পাঁচটি সেতু তৈরি ছাড়া জমি অধিগ্রহণের কাজ তেমন এগোয়নি। আবার, বুনিয়াদপুর-কালিয়াগঞ্জ ৩৪ কিলোমিটার রেলপথ সম্প্রসারণ প্রকল্পটি ২০০৬ সালে তৎকালীণ রেলমন্ত্রী লালু প্রসাদের আমলে রেল বোর্ডে জমা পড়ে। ২০১০-১১ সালে ২০৫ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা বাজেটে ধরা হয়। প্রথম দফায় ১০ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়। কাজ এগোয়নি। রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে গত বছর ফের টেকনিক্যাল সমীক্ষা হয়। এ বার প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয় ২২৩ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা। কালিয়াগঞ্জের দিকে জমি জরিপের কাজ শুরু হতেই আন্দোলনের জেরে তা থমকে গিয়েছে। গত সপ্তাহে রেলের তরফে ডাকা শুনানিতেও কেউ হাজির হননি বলে অভিযোগ। বুনিয়াদপুর-ইটাহার পথেও হরিরামপুরে জমি জরিপের সময় কতিপয় বাসিন্দা তাদের সুবিধা অধিগ্রহণের দাবি জানানোয় জটিলতা তৈরি হয়। এসব কারণেই রাজনৈতিক দলের সাহায্য চেয়েছে প্রশাসন। জেলাশাসকের মতে, হিলি এবং হরিরামপুরের কিছু জায়গায় কিছু সমস্যা আছে। তা শীঘ্রই মেটানো সম্ভব হবে। |