অর্থসঙ্কটের কারণ দেখিয়ে কোনও মতেই কর্মীদের অবসরকালীন পাওনাগণ্ডা আটকে রাখা যাবে না বলে জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি)-এর কয়েক জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর মামলায় উচ্চ আদালত বুধবার নির্দেশ দিয়েছে, ওই সব কর্মীর পেনশন-সহ অবসরকালীন সমস্ত প্রাপ্য অবিলম্বে মিটিয়ে দিতে হবে। পাওনাগণ্ডা এত দিন বকেয়া ফেলে রাখার জন্য দিতে হবে সাত শতাংশ সুদও।
শুধু এনবিএসটিসি নয়, অন্যান্য পরিবহণ নিগমেরও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের অবসরকালীন প্রাপ্য নিয়ে হাইকোর্টে কয়েকশো মামলা চলছে। এর আগে বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত নিগমের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে বোর্ড-সদস্যদের বেতন ও সাম্মানিক ভাতা বন্ধ করে সেই টাকা থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশন মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরবর্তী কালে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেলের ডিভিশন বেঞ্চও অবসরপ্রাপ্ত পরিবহণকর্মীদের পেনশন মেটানোর নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকারকে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ভজন সাহা-সহ উত্তরবঙ্গ পরিবহণ নিগমের বেশ কয়েক জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী হাইকোর্টে মামলা করেন। তাঁদের বক্তব্য দু’তিন বছর আগে তাঁরা অবসর নিয়েছেন। কিন্তু গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা, ছুটি বিক্রির টাকা বা পেনশন কিছুই পাননি। পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য নিগমের কাছে বারবার আবেদন-নিবেদন করেও কোনও সুরাহা হয়নি। নিগম তাঁদের জানিয়ে দিয়েছে, এখন অবসরের টাকা মেটানো সম্ভব নয়। নিরুপায় হয়েই প্রাপ্য আদায়ের জন্য তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়, বর্তমানে নিগমের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। দৈনন্দিন কাজ চালানোর মতো অর্থও নেই। এই অবস্থায় নিগম তাদের কর্মীদের অবসরকালীন পাওনাগণ্ডা মেটাতে পারছে না।
দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি জয়ন্ত বিশ্বাস বলেন, নিগমের আর্থিক সঙ্কট মোচনের দায়িত্ব আদালতের নয়। নিগম কী ভাবে তাদের আয় বাড়াবে, কোন পন্থায় সংস্থাকে দাঁড় করাবে, সংস্থার কর্তারাই তা ঠিক করবেন। কিন্তু আর্থিক সঙ্কটের অজুহাত দিয়ে অবসরপ্রাপ্তদের প্রাপ্য মেটানো হবে না, এটা আদালত সমর্থন করতে পারে না।
অবসরের পরেও পেনশন এবং অবসরকালীন অন্যান্য পাওনা না-পাওয়ায় কয়েক দিন ধরেই ৮-১০টি মামলার শুনানি চলছে বিচারপতি জয়ন্ত বিশ্বাসের এজলাসে। বুধবারেও সাতটি মামলা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিচারপতির নির্দেশ, অবসরকালীন প্রাপ্য কোনও কারণেই আটকে রাখা যায় না। অবিলম্বে সব টাকা মিটিয়ে দিতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে সাত শতাংশ সুদও। |