দেড়শো কোটি আটক, সঙ্কট এসএনসিইউ প্রকল্পে
দিবাসী স্বাস্থ্যোন্নয়নে রাজ্যে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ইতিমধ্যে বন্ধ হয়েছে। এ বার অসুস্থ সদ্যোজাতের চিকিৎসায় সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ) গঠনের জন্য পশ্চিমবঙ্গকে দেয় দেড়শো কোটি টাকাও আটকে দিল দিল্লি। কেন্দ্রের অভিযোগ, প্রকল্পটিতে টাকা খরচের ব্যাপারে রাজ্য তাদের ‘অন্ধকারে’ রেখেছে। রাজ্য সরকার অভিযোগ মানতে না-চাইলেও পড়েছে ফাঁপরে। কারণ, কেন্দ্রীয় অর্থের ভরসায় এসএনসিইউয়ে ডাক্তারদের বেতন বাড়ানো হয়েছিল। বেতন আবার কমে গেলে এসএনসিইউয়ে চিকিৎসক-সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে স্বাস্থ্য দফতরের আশঙ্কা।
মূলত মা ও শিশুর স্বাস্থ্যরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত ছ’টি জেলায় কেন্দ্রীয় অর্থে যে ‘ট্রাইব্যাল হেল্থ প্রজেক্ট’ চলছিল, সম্প্রতি তাতে বরাদ্দ বন্ধের নির্দেশ জারি হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বক্তব্য: একই অঞ্চলে একই ধরনের একাধিক প্রকল্প চালু রাখার যৌক্তিকতা যাচাই করতেই এই সিদ্ধান্ত। এসএনসিইউ-প্রকল্পে বরাদ্দ আটকানোর পিছনে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন (এনএইচআরএম) কর্তৃপক্ষ অবশ্য রাজ্যের দেওয়া তথ্যে ‘স্বচ্ছতার অভাবের’ যুক্তি দেখিয়েছেন।
পাশাপাশি তাঁরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ওই ‘অস্বচ্ছতা’ দূর না-হলে টাকা জোগানোর প্রশ্নই নেই। উল্লেখ্য, এনএইচআরএমের আওতাতেই এসএনসিইউ খাতে আলাদা ভাবে টাকা বরাদ্দ হয় বিভিন্ন রাজ্যে।
ফলে যে উদ্যোগকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ‘এক বছরের সাফল্যের’ অন্যতম হিসেবে রাজ্য তুলে ধরেছে, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের জেরে সেই এসএনসিইউ গড়ার প্রকল্প বড়সড় হোঁচট খাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য-কর্তাদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, কেন্দ্রের থেকে পাওয়া টাকাতেই এসএনসিইউয়ের চিকিৎসকদের বেতন দেওয়ার কথা। উপরন্তু তা দিয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংস্থান করারও পরিকল্পনা ছকে রাখা হয়েছে। নতুন পরিস্থিতিতে সেগুলি ব্যাহত হওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা। কী রকম?
চাপান-উতোর
কেন্দ্র রাজ্য
• না-জানিয়ে ডাক্তারদের
বেতন বাড়ানো হয়েছে
• অন্ধ্র-গুজরাত আগাম জানিয়ে দিয়েছিল
• আগের টাকা খরচ হয়নি কিংবা
কেনা যন্ত্র পড়ে আছে
• না-জানিয়ে শয্যা বাড়িয়েছে রাজ্য
• অন্ধ্র-গুজরাতও বেতন বাড়িয়েছে।
তাদের টাকা আটকায়নি
• জানানোর কী আছে?
এত কম টাকায় ডাক্তার মেলে না
• ২০১১-১২ সালে ৯২৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে
• শিশু জন্মানোর হার বাড়লে শয্যা বাড়াতেই হবে
দফতর সূত্রের খবর: পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে ১৯টি এসএনসিইউয়ে ডাক্তার রয়েছেন মোট ৯৯ জন। এঁদের বেতন আগে ছিল ৩২ হাজার, এখন তা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। বেতনের বাড়তি টাকাটা রাজ্য নিচ্ছিল এনআরএইচএমেরই অন্য খাত থেকে। এটাই তাঁদের জানানো হয়নি বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অভিযোগ, যার জেরে বরাদ্দ বন্ধের সিদ্ধান্ত। স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর: কেন্দ্রের টাকা না-পেলে এসএনসিইউয়ের চিকিৎসকদের বেতন কমানো ছাড়া রাজ্যের উপায় থাকবে না। অথচ ডাক্তারেরা হুমকি দিচ্ছেন, বেতন কমালে তাঁরা চাকরি ছাড়বেন।
অতএব প্রমাদ গুনছেন স্বাস্থ্য-কর্তারা। ওঁদের অনেকের আশঙ্কা, এ হেন পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া চল্লিশটি এসএনসিইউ গড়ার ‘প্রতিশ্রুতি’ শেষ পর্যন্ত ‘স্বপ্ন’ই থেকে যাবে। এমনকী, বর্তমানে চালু এসএনসিইউগুলোকেও টিকিয়ে রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে। অবিলম্বে সমস্যার সুরাহা চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি লিখেছে স্বাস্থ্য দফতর। অন্য দিকে কেন্দ্রের দাবি, তাদের না-জানিয়ে রাজ্য নিজের মতো অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এনএইচআরএমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা অনুরাধা গুপ্তের কথায়, “পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দফতরের তথ্যে বিস্তর ফাঁক। আগে ওরা যত টাকা চেয়েছিল, দিয়েছি। পরে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ প্রকল্প কার্যকর হয়নি। যন্ত্র কিনে ফেলে রাখা হয়েছে। এ সবের ব্যাখ্যা না-পাওয়া পর্যন্ত টাকা দেওয়া হবে না।”
ব্যাখ্যা চেয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তাদের ইতিমধ্যে দিল্লিতে তলবও করা হয়েছে। রাজ্যের কী বক্তব্য?
কেন্দ্রের অভিযোগ মানতে নারাজ রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তারা। রাজ্যে এসএনসিইউ সংক্রান্ত বিশেষ টাস্ক ফোর্সের প্রধান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “অন্ধ্র-গুজরাতেও এসএনসিইউয়ের ডাক্তারেরা ৩২ হাজার টাকার বেশি মাইনে পান। এখানে পেলেই দোষ!” ত্রিদিববাবুর আশঙ্কা, “কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ফলে শেষ পর্যন্ত এ রাজ্যে এসএনসিইউয়ের পরিকাঠামোটাই পড়ে থাকবে। ডাক্তার থাকবে না।” রাজ্যে এনআরএইচএমের অধিকর্তা দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, “বত্রিশ হাজারে কোনও ভাল ডাক্তার দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবেন না। কথা দিচ্ছি, বেতন আপাতত পঞ্চাশ হাজার থেকে বাড়ানো হবে না। কিন্তু ডাক্তারদের মাইনে হঠাৎ কমিয়ে দিলে এসএনসিইউ বন্ধ করে দিতে হবে।”
অনুরাধা অবশ্য বলেন, “যে দু’-একটা রাজ্য এসএনসিইউয়ের ডাক্তারদের মাইনে বাড়িয়েছিল, তারা আগে আমাদের অনুমতি নিয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ তা করেনি।” কেন্দ্রের টাকা খরচের আগে মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা হল না কেন?
এর ব্যাখ্যা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে মেলেনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.