ব্লক অফিসে আগুন লাগানো, ভাঙচুরের ঘটনায় বরাবাজার থানার পুলিশ মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ৭৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে ৭ জন মহিলা। ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, ব্লক অফিসে হামলা, আগুন লাগানো এমনকী সরকারি কর্মীদের খুনের চেষ্টার অভিযোগ হয়েছে। ৭৪ জনকে বুধবার পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে তাঁদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
স্মারকলিপি দিতে এসে বরাবাজার ব্লক অফিসে মঙ্গলবার তাণ্ডব চালান দেশোয়ালি মাঝি সম্প্রদায়েরশতাধিক লোকজন। ভাঙচুরের পাশাপাশি অফিসের প্রতিটি ঘরে আগুন লাগানো, কর্মীদের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগও ছিল। ব্লক অফিসের এক কর্মী টাঙ্গির কোপে আহত হয়ে বরাবাজার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হন। এই ঘটনায় পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন কঠোর মনোভাব নিয়েছে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “বরাবাজার ব্লক অফিসে হামলার ঘটনায় আরও কিছু নাম মিলেছে। তাদের খোঁজ চলছে। গ্রেফতারের সংখ্যা বাড়বে।” জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহও বলেন, “গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দাবিদাওয়ার জন্য স্মারকলিপি অবস্থান চলতে পারে। কিন্তু স্মারকলিপি দেওয়ার নাম করে এই ধরনের নাশকতা বরদাস্ত করা হবে না। ধৃতদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলবে।” |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত অবধি তল্লাশি চালিয়ে বরাবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে এত জনকে পাকড়াও করে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে বরাবাজার ছাড়াও লাগোয়া বোরো, বান্দোয়ান, মানবাজার ও পুঞ্চা এবং বাঁকুড়ার রানিবাঁধ, খাতড়া এলাকার বাসিন্দা রয়েছেন। এঁরা সকলেই ‘মাঝি সমাজ উন্নয়ন সমিতি’র ব্যানারে মঙ্গলবার ব্লক অফিসে জমায়েত করেছিলেন বলে পুলিশের দাবি। সমিতির সম্পাদক ও সভাপতি হিরন্ময় মাঝি ও গোষ্ঠবিহারী মাঝিকে মঙ্গলবার এবং সহ-সভাপতি দেবেন্দ্রনাথ মাঝিকে বুধবার গ্রেফতার করা হয়েছে।
তফসিলি উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতির দাবিতে সম্প্রতি পুরুলিয়ার বিভিন্ন ব্লকে স্মারকলিপি দিয়েছে ওই সমিতি। মঙ্গলবার বরাবাজার ব্লক অফিসে এ রকমই স্মারকলিপি দিতে এসে সমিতির কয়েকশো প্রতিনিধি উত্তেজিত হয়ে আগুন লাগান বিডিও দেবজিৎ বসু বলেন, “কত লক্ষ টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে, তার সঠিক হিসাব এখনও করা সম্ভব হয়নি। গোটা তিরিশেক কম্পিউটার ও ল্যাপটপ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ঘরে আগুন ধরানোয় কার্যত কোনও আসবাবপত্রই রক্ষা পায়নি।” পুরুলিয়ার জেলাশাসকের কথায়, “কম্পিউটার না হয় কেনা যাবে। কিন্তু, রোদে পুড়ে যে-সব কর্মী জনগণনা-সহ ব্লকের বিভিন্ন তথ্য কম্পিউটারে ‘সেভ’ করে রেখেছিলেন সেই সব তথ্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আবার নতুন করে ওই সব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।”
‘মাঝি সমাজ উন্নয়ন সমিতি’র সহ-সভাপতি দেবেন্দ্রনাথ মাঝির দাবি, “আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়েই স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলাম। পুলিশি আচরণে আমাদের সদস্যদের একাংশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারা যায়নি।” |