দুই মহিলাকে ধর্ষণের পরে তাঁদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের গন্ধর্বপুরে। চাপড়ার বাগবেড়িয়ায় একটি মিষ্টির দোকানের এক কর্মীর স্ত্রী ও মা ওই দুই মহিলা সেই ঘটনার পরে থানাতে গেলে পুলিশও প্রথমে তাঁদের ফিরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমন মিশ্র বলেন, “দুই মহিলাকে ধর্ষণ করে তাঁদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তেরা অবশ্য পলাতক।” শনিবার সন্ধ্যায় বাড়িতে ওই দুই মহিলাই কেবল ছিলেন। অভিযোগ, তখন তাঁদের ধর্ষণ করে দুষ্কৃতীরা। রবিবার তাঁদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সোমবার থানায় গেলে পুলিশ অভিযোগ নিতে চায়নি বলে ওই দুই মহিলার দাবি। তাঁরা তখন জেলা পুলিশের বড়কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তারপরে দু’দিন পেরিয়ে গেলেও দুই মহিলার ডাক্তারি পরীক্ষা হয়নি কেন তার সদুত্তর মেলেনি। পুলিশ সুপার বলেন, “এই ব্যাপারে কোনও পুুলিশকর্মীর গাফিলতির প্রমাণ পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে, পুলিশ সুপার অভিযুক্তরা পলাতক বলে দাবি করলেও বুধবার বিকালে অভিযুক্তেরা তাঁদের বাড়িতেই রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। |
ধর্ষিতাদের পাশাপাশি পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন স্থানীয় তৃণমূলও। খবর পেয়ে বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে যান কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের রমেশ বিশ্বাস। রমেশবাবু বলেন, “ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজ খবর করেছি। পুলিশ প্রথম দিকে অভিযোগ না নিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিল বলে শুনলাম। ওই ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি ও উদাসীনতা স্পষ্ট।”
গ্রামের এক প্রান্তে ফাঁকা মাঠের মাঝে একটি বাড়িতে থাকেন ওই অভিযোগকারীরা। বাড়ির লাগোয়া একটি কালীমন্দিরে নিত্য বসে মদের আসর। শনিবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ তাদের মধ্যে চার জন ওই বাড়িতে চড়াও হয়ে বছর বাইশের ওই মহিলা ও তাঁর প্রৌঢ়া শাশুড়িকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।
চাপড়ার বাগবেড়িয়াতে মিষ্টির দোকানের ওই কর্মী কীর্তনের দলে গান করতে মাসের বেশির ভাগ দিনই তিনি বাড়ির বাইরে থাকেন। তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ, “রোজই ওই মন্দিরে বসে মদ-গাঁজার আসর। আমাদের দিকে অশালীন ইঙ্গিত করে। প্রতিবাদ করায় এর আগেও একাধিক বার চড়াও হয়েছিল ওরা। এ বারও একই কারণে ওরা আমাদের উপর চড়াও হয়। আমাকে ও শাশুড়িকে ধর্ষণ করে। ঘটনাটি পাঁচ কান করলে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।” প্রাণের ভয়ে ওই দিন ভোররাতেই বাড়ি ছেড়ে পালান তাঁরা। এরপরেই ওই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
সোমবার ভোরেই কৃষ্ণগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যান তাঁরা। অভিযোগ, থানার কর্মরত পুলিশ অফিসার অভিযোগ নেওয়া দূর অস্ত্, রীতিমতো বিদ্রূপ করে তাড়িয়ে দেন তাঁদের। সে দিনই অবশ্য জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান ওই দুই মহিলা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার ওই মহিলাদের অভিযোগ শুনে কৃষ্ণগঞ্জের সিআই কে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু তারপরে দু-দিন পেরিয়ে গেলেও দুই মহিলার ডাক্তারি পরীক্ষা হল না কেন? সদুত্তর মেলেনি। |