কেউ আঁকবে রংবেরঙের ছবি। কেউ সেই ছবি
দেখিয়ে বোঝাবে ‘ঠিক দামে পুরো ওজনে’ জিনিস কেনার কৌশল। পথচলতি মানুষ সম্ভবত দাঁড়িয়ে পড়বেন স্কুলপড়ুয়াদের কর্মকাণ্ডে!
অন্তত তেমনই আশা করছেন রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। কলেজ স্ট্রিট থেকে কালীঘাট, বেহালা থেকে বালিগঞ্জের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ক্রেতা সুরক্ষা বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কাজে নামানোর পরিকল্পনা করেছে সাধন পাণ্ডের অধীনস্থ উপভোক্তা বিষয়ক দফতর। গরমের ছুটি শেষ হলেই হিন্দু স্কুল, সাখাওয়াত মেমোরিয়াল, চেতলা বয়েজ হাই স্কুল, মিত্র ইন্সস্টিটিউশনের মতো রাজ্যের ৪০০ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের প্রচারে নামানো হবে বলেও জানিয়েছেন সাধনবাবু। তিনি আরও জানিয়েছেন, যে স্কুলের ছেলেমেয়েরা সবচেয়ে ভাল কাজ করবে, তাদের পুরস্কারও দেওয়া হবে।
ক্রেতা সুরক্ষা সচেতনতা প্রসারে ছাত্রছাত্রীদের প্রচারে নামাতে রাজ্যের উপভোক্তা বিষয়ক বিভাগকে আর্থিক অনুদান দেয় কেন্দ্র। উপভোক্তা বিষয়ক দফতরের অধীনে বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষককে নিয়ে ‘ক্লাব’ গঠন করে ওই প্রকল্পের কাজ করায় তারা। বাম সরকারের আমলেও এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু তা সফল হয়নি। এ বার মমতা-সরকার ‘সম্পূর্ণ নতুন ভাবে’ ওই কাজ করার পরিকল্পনা করেছে। সাধনবাবু জানিয়েছেন, ক্রেতা সচেতনতা বাড়াতে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যেমন ‘বসে আঁকো’ প্রতিযোগিতা করবে, তেমনই আলোচনা বা বিতর্কসভা করবে। নিজেদের আঁকা ছবি, পোস্টার প্রদর্শনীর মাধ্যমেও প্রচার করবে।
ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের একাংশের দাবি, বাম সরকারের আমলেও এই খাতে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে অর্থ পাওয়ার পরে বাম সরকার ‘সদ্বব্যবহারের শংসাপত্র’ (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট বা ইউসি) দিতে পারেনি। প্রকল্পটি কার্যত ‘ব্যর্থ’ ধরে নিয়ে আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ করে দিয়েছিল কেন্দ্র। মমতার সরকার আসার পর তাঁর সরকারের উপভোক্তা বিষয়ক বিভাগের কাজের ‘সাফল্যে’র জন্যই ফের ওই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ মিলতে শুরু করেছে। মন্ত্রী সাধনবাবু দফতরের দায়িত্ব নিয়ে বাম আমলে প্রকল্পের অর্ন্তভুক্ত বিদ্যালয়গুলির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইউসি আদায়ের ব্যবস্থা করেন। তা কেন্দ্রীয় সরকারকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর পর কেন্দ্রীয় সরকারের উপভোক্তা বিষয়ক দফতরের মন্ত্রী কে ভি টমাসের সঙ্গে সাধনবাবু ও তাঁর দফতরের আধিকারিকদের বৈঠক হয়। বৈঠকের পর এবং সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের দফতরের কাজের ‘সাফল্য’ বিবেচনা করেই কেন্দ্র আবার রাজ্যকে টাকা দেওয়া শুরু করেছে।
সাধনবাবু জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই কেন্দ্র ৪০ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছে। তাঁর কথায়, “গরমের ছুটির পর স্কুল খুললেই প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চালু হবে। আরও ৬১৬টি স্কুলের নাম কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছি। এ ছাড়া প্রায় ৬০০ বিদ্যালয়ের নাম প্রকল্পের অর্ন্তভুক্ত করার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।” কেন্দ্রীয় এই প্রকল্পে কলেজও সামিল হতে পারে। মন্ত্রী বলেন, “এ বার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট জেভিয়ার্স, শ্রীশিক্ষায়তনের মতো নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও ওই প্রকল্পের আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছি। ক্রেতাকে তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যে গুরুত্ব দিয়েছেন, আমাদের দফতর তা ১০০ শতাংশ কার্যকর করতে চায়।” সাধনবাবু জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের ওই প্রকল্পের ‘গাইডলাইনে’ই কাজের ‘সাফল্য’ বিবেচনা করে পুরস্কার দেওয়ার স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। এত দিন প্রকল্পের কাজে সফল প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারী বিদ্যালয়গুলিকেই পুরস্কৃত করা হত। সাধনবাবু আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, “কাজের সাফল্যের নিরিখে কলেজগুলিকে বিশেষ আর্থিক সহযোগিতার কথাও আমরা চিন্তাভাবনা করছি।” |