বিলগ্নিকরণের ফসল তুলতে চোখ এখন গ্রিসের নির্বাচনে
র্থ মন্ত্রকের অলিন্দে কান পাতলেই এখন দু’টি প্রশ্ন। এক, দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতির নাম প্রণব মুখোপাধ্যায় কি না। বুধবারের নাটকীয় সন্ধ্যার পর যা নিয়ে জল্পনা আরও গভীর হল। আর দুই, শেষ পর্যন্ত ‘ইউরো’-য় গ্রিসের টিকে থাকার সম্ভাবনা কতটা। কারণ, এর উত্তরের উপরই অনেকটা নির্ভর করছে কেন্দ্রের বিলগ্নিকরণ কর্মসূচির ভবিষ্যৎ।
যদি ভাবেন, ইউরো কাপে গ্রিসের ফুটবল দলের ভাগ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় চুল ছিঁড়ছে মন্ত্রক, তা অবশ্য ডাহা ভুল হবে। কারণ, তাদের নজর নিবদ্ধ আগামী ১৭ জুন ওই দেশের সাধারণ নির্বাচনের দিকে। শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছেড়ে গ্রিস সত্যিই বেরিয়ে যাবে কিনা, তা অনেকটাই ঠিক করে দেবে ওই ভোটের ফলাফল। সরাসরি তার প্রভাব পড়বে ইউরোপ-সহ সারা বিশ্বের অর্থনীতির উপর। যার জেরে উথালপাতাল হতে পারে এ দেশের শেয়ার বাজারও। তাই পরিস্থিতি না-আঁচিয়ে এখনই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার বিক্রির পথে হাঁটছে না কেন্দ্র। বিশেষত যখন দেশে-বিদেশে টালমাটাল অর্থনীতির কারণে এমনিতেই বাজার অস্থির।
অর্থ মন্ত্রক জানে, গ্রিস শেষ পর্যন্ত ইইউ-তে থাকলে, বাজার কিছুটা চাঙ্গা হবে। কিন্তু ফল উল্টো হলে, উথালপাতাল হবে বাজার। সেই কারণেই ঘাটতি হ্রাসের চাপ থাকা সত্ত্বেও বিলগ্নিকরণ নিয়ে সাবধানে পা ফেলতে চাইছে কেন্দ্র।
কিন্তু ইইউ ছেড়ে গ্রিসের বেরিয়ে আসার প্রশ্নে ১৭ জুনের নির্বাচন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কেন?
এর কারণ, সরকারি ব্যয় সঙ্কোচের শর্ত নিয়ে গ্রিসের মানুষের প্রবল অসন্তোষ। বিপুল ঋ
ণের বোঝায় নুয়ে থাকা গ্রিসের অর্থনীতিকে সঙ্কটমুক্ত করতে ইতিমধ্যেই দু’বার অর্থ জুগিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার। আথেন্সকে দেউলিয়া ঘোষণা থেকে বাঁচাতে আরও অর্থের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইইউ-ও। কিন্তু সেই টাকা পাওয়ার শর্ত, সরকারি ব্যয় সঙ্কোচ। যা নিয়ে চুক্তিও হয়েছে আগের সরকারের আমলে। কিন্তু ওই শর্ত মানতে হলে ভবিষ্যতেও বিপুল সংখ্যায় সরকারি চাকরি ছাঁটাই করতে হবে গ্রিস সরকারকে। কমাতে হবে পেনশন ও বেতনের অঙ্ক। রাশ টানতে হবে আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে।
আর এই শর্তেই তিতিবিরক্ত গ্রিসের মানুষ। একাধিক সমীক্ষা থেকে স্পষ্ট যে, এই কারণেই প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে ছেড়ে বামপন্থীদের দিকে ঝুঁকছেন তাঁদের একটা বড় অংশ। বামপন্থী দলের নেতা অ্যালেক্সিস সিপ্রাস হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, তাঁরা ক্ষমতায় এলে বাতিল করবেন ব্যয় সঙ্কোচের চুক্তি। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, সে ক্ষেত্রে বন্ধ হয়ে যাবে আর্থিক সাহায্য পাওয়ার পথও। যার জেরে ইইউ ভেঙে বেরিয়ে আসবে গ্রিস। ফলে ফের নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হবে দুনিয়া জুড়ে। লগ্নিকারীদের মধ্যে ছড়াবে আতঙ্ক। যার ঢেউ এ দেশেও লাগবে বলে আশঙ্কা করছে অর্থ মন্ত্রক।
ঠিক এই কারণেই আরও বিলম্বিত হচ্ছে বিলগ্নিকরণ কর্মসূচী। তা ছাড়া, বাজারের হাল তেমন ভাল না-থাকায় এমনিতেই শেয়ার বিক্রি নিয়ে টালবাহানা করছেন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্তারা। গত মার্চে ওএনজিসি-র ৫% শেয়ার বেচার চেষ্টা করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে তার ৯০ শতাংশই কিনতে হয় এলআইসি-কে। তাই কোনও ভাবেই এর পুনরাবৃত্তি চাইছে না অর্থ মন্ত্রকও। বিলগ্নিকরণ সচিব মহম্মদ হালিম খানের বক্তব্য, “বাজারের অবস্থা দেখেই বিলগ্নিকরণ করতে হবে।’’
প্রসঙ্গত, সেল, হিন্দুস্তান কপার, ভেল, হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স, নেভেলি লিগনাইট, রাষ্ট্রীয় কেমিক্যালস্ অ্যান্ড ফার্টিলাইজারের মতো সংস্থাগুলির শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা দীর্ঘ দিনই রয়েছে মনমোহন সরকারের। তালিকায় রয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েল, অয়েল ইন্ডিয়ার মতো সংস্থার নামও। তবে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক চায়, জল মাপতে আগে সেল বা ভেল-এর মতো সংস্থার অল্প শেয়ার বিক্রি করা হোক। ভাল সাড়া মিললে তবেই বাজারে আনা হোক তেল সংস্থাগুলির মূল্যবান শেয়ার। সব মিলিয়ে, বিলগ্নিকরণের জন্য ভাল বাজার পেতে আপাতত ১৭ জুনের দিকেই তাকিয়ে আছে কেন্দ্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.