জলপাইগুড়ির ১৯৯ এবং দার্জিলিঙের ১৯৯ মোট ৩৯৮টি মৌজা গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (জিটিএ) যুক্ত করার দাবি জানিয়েছিল বিমল গুরুঙ্গের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। সেই দাবি খতিয়ে দেখতেই গড়া হয়েছিল বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বাধীন কমিটি। গত ২৯ জুলাই সেই কমিটি গড়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকার।
সেই বিজ্ঞপ্তিতে যে বিষয়গুলির উপরে গুরুত্ব দিয়ে কমিটিকে সমীক্ষা করতে বলা হয়, সেগুলি হল সংশ্লিষ্ট মৌজায় ৫০ শতাংশের বেশি গোর্খা জনজাতির বাস আবশ্যিক হতে হবে। শুধু বাস থাকলেই হবে না, তারা একসঙ্গে, নাকি ছড়িয়ে-ছটিয়ে আছে, দেখতে হবে তা-ও। গোর্খা পার্বত্য পরিষদ এলাকার সঙ্গে ওই সব মৌজার যোগাযোগ কতটা সহজ, সেটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেখতে হবে। সেই সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচার করতে হবে বাস্তব পরিস্থিতিরও। |
|
|
চেনা ছন্দে দার্জিলিং।
শনিবার রবিন রাইয়ের তোলা ছবি। |
মহাকরণে সাংবাদিক বৈঠকের আগে মুখ্যসচিব সমর
ঘোষের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ আচার্য |
|
এই পথে সমীক্ষা চালিয়েই আগে থেকেই গোর্খা পার্বত্য পরিষদের আওতায় থাকা দার্জিলিঙের ৭টি মৌজা বাদ দিয়ে মোট ৫টি নতুন মৌজা জিটিএ-র অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ পেশ করেছে শ্যামল সেন কমিটি। যার মধ্যে জলপাইগুড়ির ২টি আর দার্জিলিঙের ৩ টি।
কী ভাবে বাদ গেল জলপাইগুড়ির ১৯৭টি মৌজা? কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই জেলার ১৯৯টি মৌজার মধ্যে ১৪৯টি মৌজা একেবারেই জিটিএ এলাকার লাগোয়া নয়।
৩টি মৌজার অংশবিশেষে গোর্খা/নেপালিদের উপস্থিতি থাকলেও তা ৫০ শতাংশের কম। সেই কারণে এই ১৫২টি মৌজাকে প্রথমেই সরাসরি বাদ দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪৭টি মৌজার মধ্যে ১০টিতে গোর্খা/নেপালিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও তার মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিম টোটগাঁও এবং সুন্দরী বস্তির অবস্থান যে চা বাগানের কাছাকাছি, সেই এলেনবাড়িতে গোর্খা সম্প্রদায়ভুক্ত বসবাসকারীর সংখ্যা ৫০ শতাংশের কম। তাই ওই তিনটি মৌজাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাকি ৭টির মধ্যে বাগরাকোট ও কলাইকুঠি চা বাগানে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। কিন্তু সেগুলিরও বাস্তব পরিস্থিতি সমীক্ষার শর্ত পূরণ করেনি। কমিটি দেখেছে, পাথরঝোরা, তুলিনবাড়ি ও মানাবাড়ি মৌজা গরুবাথান ব্লকের অধীন হলেও দৈনন্দিন জীবনে সেখানকার মানুষ ওদলাবাড়ির উপরেই বেশি নির্ভরশীল। |
|
|
আমরা চাই পাহাড়ে শান্তি বজায় থাকুক।
পুরো রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তার
পরেই মতামত জানাব।
সূর্যকান্ত মিশ্র,
বিরোধী নেতা |
রিপোর্ট আশাহত করলেও আমি আচমকা কোনও
আন্দোলনের পক্ষপাতী নই। রিপোর্ট হাতে
আসার পরে খতিয়ে দেখতে হবে।
হরকাবাহাদুর ছেত্রী, মোর্চার প্রচারসচিব |
|
কিন্তু যে হেতু ওদলাবাড়িতে গোর্খাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ৫০ শতাংশের কম তাই ওই তিনটি মৌজাকেও তালিকায় রাখেনি কমিটি। বাকি যে ২টি মৌজাকে জিটিএ এলাকায় সংযোজনের সুপারিশ করেছে বিচারপতি শ্যামল সেনের কমিটি, সেগুলি হল সামসিং ও চিলৌনি।
কী ভাবে বাদ গেল দার্জিলিঙের ১৯৬টি মৌজা? কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই জেলার ১৯৯টি মৌজার মধ্যে ২টি মৌজার নাম দু’বার লেখা আছে এবং ৭টি বর্তমানে গোর্খা পাবর্ত্য পরিষদের (ডিজিএইচসি) এলাকার মধ্যেই রয়েছে। তাই প্রথমেই ওই ৯টি মৌজাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৯০টি মৌজার মধ্যে ১১টিতে গোর্খা জনসংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি। তবে তার মধ্যে মাত্র ৩টি মৌজা সমীক্ষার সমস্ত শর্ত পূরণ করেছে। সেগুলি হল এমএম তরাই, গুলমাখাড়ি ও পূর্ব কড়াইবাড়িছাট। এই তিনটি মৌজাকেই জিটিএ এলাকায় সংযোজনের সুপারিশ করেছে কমিটি।
বিচারপতি শ্যামল সেন এ দিন বলেন, “বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। তাই ফেলে না রেখে দ্রুত শেষ করার চেষ্টা ছিল। আমাদের কাছে ওই এলাকার ব্লক স্তরের মানচিত্র ছিল। কিন্তু কমিটির সদস্য সেন্সাস-কর্তা নিজের দায়িত্বে মৌজা-ভিত্তিক মানচিত্র জোগাড় করেন। তাতেই কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়।” |