প্রায় চারশো মৌজা চেয়ে মোর্চা পেল পাঁচটি। কিন্তু এর জেরে পাহাড়ে যাতে ফের অশান্তি শুরু না হয়, সে জন্য বিমল গুরুঙ্গদের সরাসরি বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, গত পনেরো বছরে পাহাড়ে অনেক অশান্তি হয়েছে, আর নয়। বরং চুক্তি মতো সকলকে এই রিপোর্ট মেনে পাহাড় থেকে সমতলে উন্নয়নের কাজে নেমে পড়তে হবে।
অন্য দিকে, এই রিপোর্ট নিয়ে মোর্চার মধ্যেই দ্বিমত তৈরি হয়েছে। এক পক্ষ চাইছেন, চুক্তি অনুযায়ী রিপোর্ট মেনে জিটিএ ভোটের প্রচারের গতি বাড়ানো হোক। অন্য পক্ষ চাইছেন, রিপোর্ট খারিজ করে আন্দোলনের ঘোষণা হোক। তবে প্রথম মতের শরিক নেতাদের সংখ্যা
বেশি বলেই মোর্চা সূত্রে খবর। ভরা পর্যটনের মরসুমে পাহাড়ের জনমতও অশান্তির বিরোধী। এই অবস্থায় আজ, রবিবার আলোচনায় বসছে মোর্চা। তার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে
বলে মোর্চার প্রচারসচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রী জানিয়েছেন।
ইলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি শ্যামল সেন শুক্রবার তাঁর কমিটির রিপোর্টটি রাজ্য সরকারের কাছে জমা দেন। শনিবার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ রির্পোটটির নির্যাস পড়ে শোনান। কমিটির যুক্তি উল্লেখ করে তিনি বোঝান, মোর্চা দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির ১৯৯টি করে ৩৯৮টি মৌজা (এর মধ্যে ৭টি মৌজা ইতিমধ্যেই পার্বত্য পরিষদের মধ্যে রয়েছে) দাবি করলেও মাত্র ৫টি নতুন মৌজা জিটিএ এলাকায় সংযোজিত হতে পারে।
গত বছরের ১৮ জুলাই শিলিগুড়ি লাগোয়া পিনটেল ভিলেজে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার (জিজেএম) সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তখনই মোর্চার দাবি খতিয়ে দেখতে ১০ সদস্যের ওই উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি তৈরি করে রাজ্য সরকার। সেখানে রাজ্যের তরফে স্বরাষ্ট্রসচিব, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির জেলাশাসক-সহ চার প্রতিনিধি ছিলেন। |
|
কমিটির সুপারিশ সকলে মেনে চলবে বলে চুক্তি
হয়েছিল।
আমরা মেনে নিচ্ছি। সকলেই মেনে চলুন।
কোনও
মতবিরোধ থাকা উচিত নয়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
|
কেন্দ্রের পক্ষে ছিলেন এক সেন্সাস কর্তা। এবং মোর্চার তরফে চার প্রতিনিধি ছিলেন দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং ও কালচিনির বিধায়ক।
কথা ছিল, ছ’মাসের মধ্যে সব দিক খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবে কমিটি। কিন্তু সমীক্ষার কাজ শেষ না হওয়ায় কমিটির মেয়াদ আরও ছ’মাস বাড়িয়ে দেয় রাজ্য সরকার। এর মধ্যেই জিজেএম সরকারের কাছে আর্জি জানায়, যে হেতু জুলাইয়ের মধ্যেই তারা জিটিএ নির্বাচন সেরে ফেলতে চায়, তাই জুনের প্রথমার্ধেই যেন কমিটি তার চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয়। সরকার সে কথা কমিটিকে জানালে শুক্রবারই তাদের রিপোর্ট জমা পড়ে মহাকরণে।
মুখ্যসচিবকে প্রশ্ন করা হয়, যেখানে ৩৯৮টি মৌজার দাবি ছিল সেখানে মাত্র পাঁচটি মৌজার সুপারিশ কি মোর্চা মেনে নেবে? সমরবাবু বলেন, গত ২৪ মার্চ রাজ্য এবং জিজেএমের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল। সেখানে দু’পক্ষই জানিয়েছিল বিচারপতি শ্যামল সেন কমিটির রিপোর্ট সকলে মেনে নেবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিন ওই কমিটির সুপারিশ মেনে নেওয়ার জন্য মোর্চা নেতৃত্বের কাছে আবেদন জানান। তিনি বলেন, “কমিটির সুপারিশ সকলে মেনে চলবে বলে একটা চুক্তি হয়েছিল। আমরা সেই চুক্তি মেনে নিচ্ছি। সকলেই তা মেনে চলুন। রিপোর্ট নিয়ে কোনও মতবিরোধ থাকা উচিত নয়।” রিপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে সরকার বা মোর্চা কারও যে কোনও ভূমিকা ছিল না, তা-ও এ দিন জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, “এটা কারও পক্ষে যায়নি, বিপক্ষেও যায়নি। সঠিক রিপোর্ট।”
আপনি কি খুশি? মুখ্যমন্ত্রীর জবাব, “আমার খুশি, অখুশি হওয়ার কোনও বিষয় নয়। যে দিন উন্নয়নের কাজ হবে, লক্ষ লক্ষ মানুষ পাহাড়ে যাবেন, সে দিন আমি খুশি হব।” পাহাড়ের উন্নয়নই যে তাঁর ‘পাখির চোখ’ তা জানিয়ে মমতা বলেন,“আন্দোলনের জন্য পাহাড়ের অনেক ক্ষতি হয়েছে। গত ১৫ বছরে কোনও উন্নয়ন হয়নি। আমি চাই না নতুন করে দুর্যোগ হোক। এই নিয়ে কেউ রাজনীতি করবেন না।” তাঁর আবেদন, “নির্বাচনে সবাই সামিল হোন। নির্বাচন হলে জিটিএ তৈরি হবে। জিটিএ তৈরি হলে টাকা পাওয়া যাবে।”
শ্যামল সেন কমিটির সুপারিশ সম্পর্কে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন দিল্লিতে বলেন, “পুরো রিপোর্টটি খতিয়ে দেখে তবেই মতামত জানাব। তবে আমরা চাই পাহাড়ে শান্তি বজায় থাকুক।” পাঁচটি মৌজা জিটিএ-তে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ তাঁরা মানবেন কি না, এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সূর্যবাবু। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা শিলিগুড়ির নেতা অশোক ভট্টাচার্যও বলেন, “আমরা পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সে শান্তি চাই। ওই রিপোর্টে শান্তি নিশ্চিত হলে নিশ্চয়ই ভাল ব্যাপার। রিপোর্ট খতিয়ে দেখে পাহাড়ের প্রতিক্রিয়া নিয়ে দলে আলোচনা করব।” |