চাপ নিতে পারেনি ফুটবলাররা, বলছেন পোল্যান্ড কোচ
ফান পার্সি মনে করালেন অঁরির দুঃস্বপ্নকে
ডেনমার্ক-১ (ক্রোন-দেহলি)
নেদারল্যান্ডস-০
ডেনমার্কের অধিনায়ক অ্যাগেরের পিঠে একটা বিশাল উল্কি আঁকা। জলদস্যু ও কবরখানার ছবি। নীচে লেখা, ‘মোর্স সার্টা, হোয়া ইনসার্টা।’ মানে? মৃত্যু নিশ্চিত, তবে কখন তা হাজির হবে সেটা নিশ্চিত নয়।
ডাচদের বিরুদ্ধে ডেনমার্কের ফুটবল দলের মৃত্যু অনেকে নিশ্চিত ভেবে রেখেছিলেন। দুরন্ত অ্যাগেররা দেখালেন, তাঁরা মৃত্যুকে দাঁড় করিয়ে রাখতে পারেন। মৃত্যু উপত্যকা থেকে উঠে হেঁটে যেতে পারেন জীবনের দিকে। মৃত্যু বরং ফান পার্সিদের জন্য এল আচম্বিতে।বিশ্বকাপ ফাইনালে স্পেনের তিকিতাকা পাসিং ফুটবলের সামনে ডাচদের বিরক্তিকর শারীরিক ফুটবল দেখে অনেক ডাচ কোচ আক্ষেপ করেন, “আমাদের ৪০ বছরের সুন্দর ফুটবল খেলার ঐতিহ্য মুছে ফেলল এই দু’ঘণ্টা।” শনিবার ম্যাচটায় ডাচদের অলৌকিক পতনের পরে কী লেখা হবে? প্রথমার্ধে গোলটার পরেই গ্যারি লিনেকার টুইট করেছিলেন, “শুধু ফুটবলেই এটা হয়। একটা দল এত দাপট দেখিয়েও হেরে যেতে পারে।” ম্যাচ শেষে ওই সবিস্ময় আক্ষেপ আরও বড় প্রশ্নের জন্ম দেবে। ফ্রি ফ্লোইং ফুটবল, সেক্সি ফুটবল, তিকিতাকা ফুটবলযে নামেই পাসিং ফুটবলকে ডাকা হোক না কেন, তা কি ক্রমাগত ধরা পড়ে যাচ্ছে?
কমলা-ডিফেন্স ভেঙে যাওয়ার মুহূর্ত।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনা, বায়ার্ন বা রিয়ালের হারের পরে ইউরোয় ডাচদের আত্মসমর্পণ দেখাল, এক একটা সময় ডাইরেক্ট ফুটবলের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না। সারাক্ষণ রক্ষণে ব্যস্ত ড্যানিশদের জয়ের গোল তুলে নেওয়া ডাইরেক্ট ফুটবলেই। তিনটে টাচে। অথচ সংখ্যাতত্ত্ব বলছে গোলে শট (২৯-৮), কর্নার (১১-৪) সব কিছুতেই ম্যাচটার রং ছিল শুধু কমলা।
ডাচ কোচ ফান মারউইকের দোষ এবং গুণ একটাই। মারাত্মক চাপেও তিনি কখনও সিস্টেম বদলান না। ডেনমার্কের বিরুদ্ধে দু’জন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে না খেলিয়ে ফান ডার ফার্টকে নামানোর পরামর্শ ছিল অনেকের। অনেকে বলেছিলেন, কেন দুর্দান্ত ফর্মের হান্টেলারকে ফান পার্সির সঙ্গে ব্যবহার করা হবে না? ডাচ কোচ দুটোই করলেন অনেক পরে। ততক্ষণে ড্যানিশ ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস বাড়তে বাড়তে হান্স অ্যান্ডারসেনের উপন্যাসের বিখ্যাত চরিত্রগুলোর মতো অলৌকিক হয়ে গিয়েছে। স্টপার-অধিনায়ক অ্যাগের নিজে উল্কি আঁকেন। এই ম্যাচে আঁকলেন জমাট রক্ষণ।
অসংখ্য সিটার নষ্ট করা ফান পার্সিকে গোলের সামনে বারবার অসহায় দেখে আর্সেনাল সমর্থকদের থিয়েরি অঁরিকে মনে পড়বে। ক্লাবের হয়ে অঁরিও ছিলেন দুর্দান্ত, কিন্তু দেশের জার্সিতে অতি সাধারণ। ফান পার্সির সঙ্গে ডাচ কোচের সমীকরণ ছোটবেলা থেকেই অদ্ভূত। ফেনুর্ডে খেলার সময় ফান মারউইক একবার পার্সির বিশ্রী ব্যবহারের জন্য রিজার্ভ টিমে পাঠিয়ে দেন। আর এক দিন রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ম্যাচে ওয়ার্ম আপ করতে বলেছিলেন ফান পার্সিকে। তাঁর বিরক্তি দেখে পার্সিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন মারউইক। বিশ্বকাপের সময়ও ফান পার্সির সঙ্গে ঝামেলা লাগে স্নাইডারের। এ দিন তাঁকে বার বার অ্যাটাকিং থার্ডে ব্যর্থ দেখে মনে হল, ফান পার্সির সমস্যা মানসিক। অঁরিকে যেমন লেফট উইঙ্গার থেকে সেন্টার ফরোয়ার্ড বানান আর্সেনাল কোচ ওয়েঙ্গার, সেভাবেই বদলেছেন ফান পার্সিকেও। শুধু জাতীয় দলে সক্রিয় করতে পারলেন না। তাঁর মিসগুলো দেখে রবেন, স্নাইডারও মিইয়ে গেলেন। হারিয়ে ফেললেন বৈচিত্র্য ও কল্পনা।
হতাশ ফান পার্সি।
ডাচদের মাঝমাঠে বল নিয়ন্ত্রণ আর সৃষ্টিশীলতার টানা হ্যাঁচড়া দীর্ঘদিন। এ বার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে রক্ষণের দুর্বলতা। মিডল থার্ড থেকে অ্যাটাকিং থার্ড পর্যন্ত বিস্তৃত জমিতে পাসের পরে পাস খেলেও বারবার তারা সমস্যায় পড়ল প্রতি আক্রমণে। ডেনমার্কের ক্রোন দেহলি গোলটা করে গেলেন ডাচদের ডিফেন্সিভ সংগঠনের অনভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে। স্টেকেলেনবার্গের মতো তরুণ প্রতিশ্রুতিমান কিপার কী করে পায়ের তলা দিয়ে গোল খান, সেটাও প্রশ্ন অবশ্য!
দুটো দলের স্টাইল অবিকল এক। ডেনমার্কের সেরা তরুণ প্রতিভা এরিকসেন নেদারল্যান্ডস লিগে সেরা ফুটবলার হয়েছেন এ বার। আয়াখসে তাঁর পারফরম্যান্স দেখে অনেকে তাঁর খেলায় মাইকেল লড্রুপকে খুঁজে পাচ্ছেন। ডেনমার্কের খেলা বললেই এখনও লোকে ড্যানিশ ডিনামাইটদের কথা বলে। এখন আর ড্যানিশদের খেলায় ডিনামাইট নেই। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি কোচ মার্টিন ওলসেন দলটার সঙ্গে বারো বছর আছেন। শান্ত একটা ব্যাপার প্রতিফলিত হল তাদের ফুটবলে। কমলা জার্সির অনন্ত পাসিংয়ের মাঝে ড্যানিশরা শান্ত, অবিচলিত ভাবে একটা কাজ করলেন। বল পায়ে থাকলে ৪-৩-৩ এ গেলেন, বল পায়ে না থাকলে ৪-৫-১। ডাচদের তারা একটা অঞ্চল পর্যন্ত খেলতে দিলেন। কিন্তু ৪৭ ভাগ বল পজেশন রেখে। ম্যাচটায় ফান পার্সি, রবেন, স্নাইডারদের দেখে মনে হচ্ছিল, সারা রাত পাসের পরে পাস খেলে গেলেও গোল করতে পারবেন না। শেষ দিকে একটা পেনাল্টি পেলেও পেতে পারতেন। তাতে কি পার্সিদের শাপমুক্তি ঘটে?
কমলায় ঢাকা কিয়েভের রাস্তা। দল বেধে স্টেডিয়ামমুখী
ডাচ সমর্থকরা। শনিবার নেদারল্যান্ডস ম্যাচের আগে।
বড় টুর্নামেন্ট মানেই যেন গত দুই যুগ ধরে ডাচদের অভিশাপ তাড়া করে। লেগেই থাকে ঝামেলা। ১৯৯৪ সালে খুলিট বনাম অ্যাডভোকাট। ১৯৯৬ সালে হিডিঙ্ক বনাম দাভিদস। ২০০৮ সালের ইউরোয় টাইব্রেকার চলার সময় মারপিট করতে যাচ্ছিলেন ওয়ের এবং মাথিসেন। গত বিশ্বকাপে স্নাইডার বনাম পার্সি। এ বার কোচ শ্বশুর, অধিনায়ক জামাই (বোমেল) এর দলে এমনিতে কোনও সমস্যা ছিল না। শনিবার মনে হল সমস্যা অন্যত্র। ফরোয়ার্ড লাইন ও মাঝমাঠে এত তারকার ছড়াছড়িতে ঠিক এগারো বাছতে ডাচ কোচ বিভ্রান্ত।
মৃত্যু গ্রুপের শুরুতেই এত বিভ্রান্তি দেখালে কবরখানা থেকে আর কি জীবনে ফেরা যায়?

ছবি: রয়টার্স




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.