মেয়েদের টেনিসে রোমান্স
ফিরিয়ে দিল শারাপোভা

শারাপোভা শনিবাসরীয় সন্ধেয় ফরাসি ওপেন জিতে শুধু নিজের কেরিয়ার গ্র্যান্ড স্লামই পূর্ণ করল না। মেয়েদের টেনিসটাকেই বাঁচিয়ে দিল।
বড্ড একঘেয়ে আর ধারাবাহিকতাহীন হয়ে পড়ছিল মেয়েদের পেশাদার সার্কিটটা। রোমান্টিকতা নেই, কাটখোট্টা। যান্ত্রিক-টেনিস। আজ এক জন বিশ্বসেরা তো কাল আবার অন্য এক জন এক নম্বরে। সত্যিকার চ্যাম্পিয়ন তা হলে কে রে বাবা! রোলাঁ গারোর ফিলিপ শাঁতিয়ের কোর্টের খয়েরি সুরকির সারফেস জানিয়ে দিল তাঁর নাম। মারিয়া ইউরিয়েভনা শারাপোভা।
যে রুশ সুন্দরী কিনা ২০০৪-এ ১৭-তেই উইম্বলডন, তার পরের এক বছর অন্তর-অন্তর যুক্তরাষ্ট্র ওপেন আর অস্ট্রেলীয় ওপেন চ্যাম্পিয়ন হলেও এত দিন ফরাসি ওপেন খেতাব না পাওয়ার জ্বালায় বলেই ফেলেছিল, “আমার ক্লে কোর্টে খেলা আর বরফের ওপর গরুর হাঁটা সমান!” ঠিক যেমন কোনও দিন উইম্বলডন জিততে না পেরে ইভান লেন্ডল বলেছিল, “ঘাস হল গরুর খাদ্য!” লেন্ডলের মতো হাল না ছেড়ে দিয়ে শারাপোভা কিন্তু বরফের ওপর দিয়েই গরুকে হাঁটিয়ে ছাড়ল।
টেনিস-রানি
ফরাসি ওপেন জেতার পরে মারিয়া শারাপোভা। শনিবার রোলাঁ গারোয়। ছবি: এপি
মানছি, গোটা টুর্নামেন্টে একমাত্র সেমিফাইনাল বাদে বিশ্বের প্রথম কুড়ি জনের কাউকে খেলতে হয়নি শারাপোভাকে। কিন্তু তার জন্য ও কী করবে? সেরেনা, আজারেঙ্কা, না লি, ওজনিয়াকিরা যদি আগেভাগে হেরে বসে! বরং মুদ্রার অন্য পিঠঠা ভাবুন। গোটা টুর্নামেন্টে মাত্র একটা সেট হেরেছে শারাপোভা। চতুর্থ রাউন্ডে। তাও টাইব্রেকে। সাতটা ম্যাচে নষ্ট করেছে মাত্র ২৮টা গেম। অপ্রতিদ্বন্দ্বী দেখিয়েছে এ বার ফরাসি ওপেনে শারাপোভাকে। যেখানে দশ বারের চেষ্টায় আজই প্রথম বার ফাইনাল খেলল ও। ইতালির সারা ইরানিকে দেড় ঘণ্টায় শারাপোভার ৬-৩, ৬-২ হারানোটা গ্র্যান্ড স্লামের অন্যতম একতরফা ফাইনাল হয়ে থাকলে অবাক হব না। কোর্টে ৬ ফুট ২ ইঞ্চির শারাপোভার সামনে সাড়ে পাঁচ ফুটি ইরানিকে যতটা লিলিপুট দেখাচ্ছিল, দু’জনের টেনিস খেলাতেও আজ সেই ডেভিড আর গোলিয়াথের তফাত।
বছর পঁচিশের শারাপোভার চেয়ে দশ দিনের ছোট ইরানির নাম ওর দেশ ইতালির বাইরে মাস কয়েক আগেও কেউ বিশেষ জানত না। কিন্তু ক্লে কোর্ট মরসুমে তিনটে টুর্নামেন্ট জেতার মাধ্যমে এ বার ওর রোলাঁ গারোয় ফাইনাল খেলার ভিত তৈরি হয়েছিল। সুতরাং বাস্তব আর টাটকা ফর্মের দিক দিয়ে একেবারে এলেবেলে কাউকে ফরাসি ওপেন ফাইনালে হারায়নি শারাপোভা।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগেই শারাপোভা বিশ্বের এক নম্বর হয়ে গিয়েছিল। দু’দিন আগে ফাইনালে উঠতেই। ২০০৫ থেকে এই নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পাঁচ বার বিশ্ব ক্রমপর্যায়ে এক নম্বর হল। ধারাবাহিকতার জলজ্যান্ত প্রমাণ।
শিখর ছুঁয়ে। ছবি: রয়টার্স
মনে রাখবেন, ২০০৭ থেকে কাঁধের রোটেটারি মাসলের যন্ত্রণায় ভুগতে-ভুগতে বছর দেড়েক আগে সফল অস্ত্রোপচারের আগে প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছিল টেনিসের সর্বকালের সেরা গ্ল্যামার গার্ল। ভয়াবহ চেরনোবিল পরমাণু দুর্ঘটনার প্রায় মধ্যেই যার বিপজ্জনক জন্ম। যার বাবা ইংরেজি ভাষা শিখে তবেই সাত বছরের মেয়েকে নিয়ে মাত্র সাতশো ডলার সম্বল করে সাইবেরিয়া থেকে ফ্লোরিডা পাড়ি দিয়েছিলেন। এবং সেখানে এমনকী হোটেলে কাপ-ডিশ ধোয়ার কাজ করেও অর্থ রোজগার করে শারপোভাকে জগদ্বিখ্যাত নিক বলেতিয়েরি টেনিস অ্যাকাডেমিতে টেনিস শিখিয়েছিলেন। যে মেয়েকে ছ’বছর বয়সে মস্কোয় মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা তাঁর ১৫ দিনের অ্যাকাডেমিতে দেখে সেরা রাশিয়ান প্রতিভা হিসেবে বেছেছিল ১৯৯৩-এ।
সেই প্রতিভাই আজ এই গ্রহের সমস্ত মেয়ে ক্রীড়াবিদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী। সর্বাধিক উপার্জনকারী। বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত ক্রীড়া পত্রিকার সুইম স্যুট সংস্করণে সবচেয়ে বেশি বার প্রচ্ছদে এসেছে। সমস্ত খেলাধুলোর মেয়েদের মধ্যে শারাপোভার ‘ফলোয়ার’-ই ফেসবুকে সর্বোচ্চ। সাড়ে চুয়াত্তর লাখ।
বলছিলাম না, প্যারিসে শারাপোভা মেয়েদের টেনিসটাকেই একেঘেয়েমির হাত থেকে বাঁচিয়ে দিল। ফিরে এল হারিয়ে যাওয়া রোমান্সটা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.