আত্মপক্ষ সমর্থনের রাস্তা ছেড়ে অণ্ণা শিবিরের সঙ্গে সংঘাত জোরালো করল কেন্দ্র। আজ কয়লাখনি বণ্টনে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনের দাবি খারিজ করে দেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। আর এ দিনই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ স্বামী দাবি করলেন, অণ্ণা হজারেকে ঘিরে রয়েছে রাষ্ট্রবিরোধী কিছু লোক। দেশে অস্থিরতা তৈরি করতেই তারা ইউপিএ সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে। তা ছাড়া কয়লাখনি বণ্টন সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে। তাই পাশাপাশি আরও একটি কমিটি বানিয়ে তদন্ত চালানো নিষ্প্রয়োজন বলে আজ অণ্ণা হজারেকে চিঠিও পাঠিয়েছেন নারায়ণ স্বামী।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন পর কড়া ভাষায় অণ্ণা শিবিরের সমালোচনা করল কেন্দ্র। নারায়ণ স্বামী আজ বলেন, “এই সব স্বঘোষিত নেতাদের কোনও জনসমর্থন নেই।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতেও তারা ভয় পায়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে এই সব অশুভ শক্তি।”
নাম না করলেও নারায়ণ স্বামী তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে রামদেবকেও বিঁধতে চেয়েছেন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আদায় করা চাঁদার টাকা নিয়ে অণ্ণা সহযোগীদের লড়াই নিয়েও কটাক্ষ করেন তিনি।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, কেন্দ্রের এই অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, প্রধানমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রের ১৫ জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অণ্ণা সহযোগীরা দুর্নীতির অভিযোগ তুললেও সেই নিয়ে সরকারের তরফে জবাব দেওয়ার প্রয়োজনই ছিল না। কিন্তু মনমোহন সিংহ নিজের সততা ও নিষ্ঠার কথা তুলে ধরতে চাওয়ায় অণ্ণারা অহেতুক গুরুত্ব পেয়ে যান। এই অবস্থায় অণ্ণাদের কড়া ভাষায় জবাব দেওয়া প্রয়োজন ছিল। সম্প্রতি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সনিয়া গাঁধীই তার সুর বেঁধে দেন। সেই মতোই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের তরফে নারায়ণ স্বামী আজ অণ্ণাকে চিঠি লিখে কঠোর ভাষায় বার্তা দেন।
অণ্ণাকে দেওয়া চিঠিতে নারায়ণ স্বামী লিখেছেন, ‘কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটরস জেনারেল’-এর (সিএজি) খসড়া রিপোর্টের ভিত্তিতে কয়লাখনি বণ্টন নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করা ঠিক নয়। কারণ ওই রিপোর্টটি সংসদে পেশ করা হয়নি। তাই সেটি চূড়ান্ত নয়। কয়লাখনি বণ্টন নিয়ে সরকারের নীতিও স্পষ্ট। আর সেটা জনস্বার্থেই নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া খনি বণ্টন প্রসঙ্গে বিরোধী দলের এক সাংসদের অভিযোগের ভিত্তিতে সিবিআই প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। সেই তদন্ত তারা নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গেই করবে। তাই অন্য কোনও তদন্তের প্রশ্নই নেই।
নারায়ণ স্বামীর এ-ও বক্তব্য, অণ্ণা শিবির যে ভাষায় মন্তব্য করছে তা অনভিপ্রেত। কেন্দ্র মুলায়ম সিংহের সঙ্গে সমঝোতা করে সিবিআই তদন্ত ধামাচাপা দিচ্ছে বলে তাঁরা যে অভিযোগ করেছেন তা শুধু মিথ্যে নয়, ভিত্তিহীনও। বরং এমন কথা বলে অণ্ণা শিবির মুলায়ম, সিবিআই এবং বিচারব্যবস্থার অবমাননা করছে বলে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের তরফে মন্তব্য করা হয়েছে।
কেন্দ্রের কড়া অবস্থানে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অণ্ণা শিবিরও। মণীশ শিশোদিয়া বলেন, “সরকারের চিঠি দেখে মনে হচ্ছে, দেশে কোনও দুর্নীতির ঘটনাই ঘটেনি। কয়লা খনি বণ্টনে দুর্নীতি নিয়ে তদন্তে সরকারের আর সদিচ্ছাই নেই। এর প্রতিবাদে পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ জুলাই থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অনশন চালিয়ে যাবে অণ্ণা শিবির।”
অন্য দিকে বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী আজ বলেন, “অণ্ণা শিবিরকে রাষ্ট্রবিরোধী বলা উচিত হয়নি। কারও সঙ্গে মতান্তর হলেই তাকে রাষ্ট্রবিরোধী আখ্যা দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক।” যদিও কংগ্রেসের বক্তব্য, অণ্ণা শিবির ও রামদেবকে গোপনে ইন্ধন যোগাচ্ছে বিজেপি, আরএসএস। আর কয়লাখনি বণ্টন নিয়ে বিজেপির কিছু বলা মানায় না। কারণ এনডিএ জমানায় কয়লাখনি বণ্টনে কোনও স্বচ্ছতাই ছিল না। তা ছাড়া বিজেপি শাসিত দুটি রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গ কয়লাখনি বণ্টনে নিলাম ডাকার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছিল।
সব মিলিয়ে কংগ্রেস নেতাদের দাবি, অণ্ণা শিবির ক্রমশ প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। এমনকী রামদেবকে এনেও হাল ফেরাতে পারছে না তারা। তাই তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক পথেই হাঁটবে সরকার। পাশাপাশি দুর্নীতি দমনে কেন্দ্র কতটা তৎপর, সেই বার্তা দেওয়ার চেষ্টাও চলবে। |