দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সচিন তেন্ডুলকরকে রাজ্যসভায় এনেছে কংগ্রেস। কিন্তু দল বা সরকারের কাছ থেকে কোনও রকম সুবিধা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের ভাবমূর্তিই আরও অনেকটা উজ্জ্বল করে নিলেন সচিন।
লুটিয়েন দিল্লিতে তুঘলক লেনের ১২ নম্বর সরকারি বাংলোটির বাসিন্দা রাহুল গাঁধী। তার অদূরেই ৫ নম্বর বাংলোটি সচিনকে দিতে চেয়েছিল সরকার। কিন্তু সচিন আজ বলে দিয়েছেন, “সরকারি বাংলোয় আমি থাকতে চাই না। কারণ, আমাকে সরকারি বাংলো দেওয়া মানে করদাতাদের অর্থের অপচয়। তার চেয়ে যে ক’দিন দিল্লিতে থাকব, হোটেলেই থাকব।”
রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতে, কেন্দ্রে সরকার তথা কংগ্রেসের যখন ভাবমূর্তির সংকট তৈরি হয়েছে, তখন সচিনকে রাজ্যসভার মনোনীত সাংসদ করে কংগ্রেস কিছুটা ‘ফিল গুড’ বাতাবরণ তৈরি করতে চেয়েছে। সেই কারণেই কৌশলে রাহুলের বাংলোর কাছাকাছি সচিনকে একটি বাংলো দেওয়ার কথা ভেবেছিল সরকার। সচিন সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে কংগ্রেসকে এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি করলেন, যখন তাদের সচিনকে সাধুবাদ দিতে হচ্ছেই। সেই সঙ্গে সচিনকে বাংলো দেওয়ার প্রস্তাবটি যে যুক্তিযুক্তই ছিল, সেটাও জোর গলায় বলতে হচ্ছে।
কংগ্রেস মুখপাত্র ও রাজ্যসভার সাংসদ রশিদ অলভি তাই আজ বলেন, “সচিন যে কারণ দেখিয়ে দিল্লিতে সরকারি বাসস্থানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন তা প্রশংসাযোগ্য।” কিন্তু তার আগে তাঁকে সবিস্তার বলতে হয়েছে, “সংসদ ভবনের কাছাকাছি সাংসদদের থাকার জন্য আবাসন বা বাংলোর ব্যবস্থা দীর্ঘ দিন ধরেই রয়েছে। নইলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাংসদরা দিল্লিতে এসে থাকবেন কোথায়? বছরে প্রায় তিন মাস সংসদের অধিবেশন চলে। তখন তাঁদের একটানা দিল্লিতে থাকতে হয়। কিন্তু কারও যদি প্রয়োজন না থাকে সেটা তাঁর ব্যাপার।”
তবে কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, সাংসদরা যাঁরা সক্রিয় রাজনীতিতে রয়েছেন তাঁদের দিল্লিতে একটি বাসস্থানের প্রয়োজন। কেননা নিজের নির্বাচনকেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রচুর মানুষ তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। আবার অনেক সাংসদদের বাংলো দলের অফিস হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। শীর্ষ সারির নেতাদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত। তবে যাঁরা মনোনীত সাংসদ, তাঁদের অনেকেই নিয়মিত সংসদে আসেন না। তাঁদের যদি নিজেদের আর্থিক সঙ্গতি থাকে এবং তাঁরা যদি সরকারি বাসস্থানের পরিবর্তে হোটেলে বা নিজের বাড়িতে থাকেন, তা সাধু বিষয়।
বিজেপি অবশ্যই কংগ্রেসকে খোঁচা দেওয়ার এই সুযোগটা ছাড়েনি। রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদ প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “সচিনকে রাহুল গাঁধীর বাংলোর কাছাকাছি একটি বাংলো দিতে চাওয়ার নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। তবে সচিনের থেকে এমন মন্তব্যই প্রত্যাশিত।”
সচিন নিজে অবশ্য কোনও রাজনৈতিক কথাবার্তা বলেননি। শুধু বিনীত ভাবে জানিয়েছেন, “সরকারি সুবিধা পাওয়ার চেয়ে রাজ্যসভার সাংসদ হওয়াটাই আমার কাছে অনেক বেশি মর্যাদার।”
এ বার সচিনের দৃষ্টান্ত অন্য মনোনীত সাংসদরা অনুসরণ করবেন কি না, সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গেই রাজ্যসভায় মনোনীত সাংসদ হিসাবে শপথ নিয়েছেন অভিনেত্রী রেখা। রেখাও সরকারি বাংলোর প্রস্তাব ফিরিয়ে দেবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। রাজ্যসভায় সপা সাংসদ জয়া বচ্চনও কোনও সরকারি বাংলো বা ফ্ল্যাট নেন না। তিনি দিল্লিতে এলে গুলমোহর পার্কে তাঁর নিজের বাড়িতে থাকেন। |