বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা
অফিস যাওয়ার সময়ে মেট্রোর কামরায় আগুন
‘কহানি’ ছবির দৃশ্যের সেই আতঙ্কই যেন মেট্রো রেলের কামরায় ফিরে এল। অফিস-টাইমে ভিড়ে ঠাসা ট্রেনের কামরায় প্রাণভয়ে পালানোর চেষ্টা উদ্ভ্রান্ত জনতার। ভিড়ের মধ্যে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন প্রবীণ বা শিশু। ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকারে পাশের কামরাগুলোতেও লোকে দিশাহারা। আগুন লাগার আতঙ্কে শনিবার সকালে ব্যস্ত সময়ের মেট্রো রেলে এ ভাবেই উত্তেজনা ছড়াল। তবে, বলিউডি সিনেমার মতো ‘নাশকতা’ অবশ্যই ঘটেনি।
কবি সুভাষ স্টেশনগামী ট্রেনে ইঞ্জিন থেকে দ্বিতীয় কামরায় পাখা থেকে রংমশালের ফুলকির মতো আগুন ঝরছে দেখে যাত্রীরা ঠাসাঠাসি ভিড়েই যত দূর সম্ভব ঠেলেঠুলে সরার চেষ্টা করেছেন। ‘কহানি’তে নিঃশব্দ হামলায় মেট্রোর যাত্রীদের ট্রেনের কামরায় লুটিয়ে পড়তে দেখা গিয়েছিল। এ দিন অফিস যাওয়ার ব্যস্ত সময়ে দুর্ঘটনাটি ঘটায় জনতার আতঙ্ক ও ধাক্কাধাক্কিতে বড় দুর্যোগ ঘটতে পারত বলে মেনে নিচ্ছেন মেট্রোর কর্তারা।
তখন বেলা ১১টা বেজে ৪ মিনিট। দমদমের দিক থেকে আসা ট্রেন সবে শ্যামবাজার ছাড়িয়েছে। হঠাৎ দেখা যায়, ইঞ্জিনের পরের দ্বিতীয় কামরায় পাখা থেকে আগুনের ফুলকি ঝরছে লেডিজ সিটের দিকটায়। সেখান থেকে পালানোর চেষ্টাতেই আতঙ্ক বাড়ে। শোভাবাজার স্টেশনে ট্রেন থামার পরমুহূর্তে খালি হয়ে যায় বেশির ভাগ কামরা। মেট্রো কর্মীরা আগুন নেভানোর যন্ত্র দিয়ে পরিস্থিতি সামলান। ১০ মিনিট বাদে নিরাপত্তার খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে ট্রেন ছাড়লেও অগ্নিগ্রস্ত কামরাটি থেকে বেশির ভাগ যাত্রীই দূরে থেকেছেন।
চলছে আগুন নেভানোর চেষ্টা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
এ দিন সকালে এসপ্ল্যানেড স্টেশনে নামবেন বলে দমদমে ট্রেনে উঠেছিলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী বিশ্বজিৎ হালদার। অফিস-টাইমে গন্তব্যে পৌঁছনোর তাড়ায় মেট্রোর ইঞ্জিনের কাছাকাছি ও গার্ডের দিকের কামরাগুলোতেই বেশি ভিড় হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় কামরার মাঝের ফাঁকটায় দাঁড়িয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। কী দেখলেন তিনি? ওই যুবকের কথায়, “শ্যামবাজার ছাড়াতেই হঠাৎ বিকট শব্দ। তার পরই দেখি, বাচ্চাদের নিয়ে মহিলারা প্রাণপণে সিট ছেড়ে বেরোনোর চেষ্টা করছেন। কেউ অ্যালার্ম বেল টিপে ট্রেন থামানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। স্টেশন পৌঁছনোর পরমুহূর্তেই কামরা খালি হয়ে গেল।”
বস্তুত, সাম্প্রতিক কালে অফিস-টাইমে এমন দুর্যোগ ঘটতে দেখা না-গেলেও ধোঁয়া বা আগুনের ফুলকির জেরে মেট্রোয় আতঙ্ক অবশ্য নতুন নয়। মেট্রো সূত্রের খবর, কামরাগুলোর বেশির ভাগই পুরনো হয়েছে। একেবারে মেট্রোর আদি যুগ থেকে চলছে এমন কিছু কামরাও এখনও ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন রেলমন্ত্রীর আমলেই মেট্রোর কামরার অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা হয়। কিছু কামরা পাল্টানোও হয়। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন যেমন, পাঁচটি এসি রেক পেয়েছিল কলকাতা মেট্রো। তবে ওই ধরনের রেকের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়।
মেট্রোর এক কর্তার কথায়, “কামরাগুলো পুরনো হয়েছে বলেই প্রযুক্তিগত গোলমালে খুচখাচ দুর্যোগ ঘটে। এ বারও সম্ভবত তেমন কিছু হয়েছে।” মেট্রোর মুখপাত্র প্রত্যূষ ঘোষের অবশ্য দাবি, “মেট্রোর অনেক কামরারই ধাপে ধাপে খোলনলচে পাল্টে ফেলা হয়। তার বদলে আনকোরা কামরা আসে।”
এ দিন যে ট্রেনের কামরায় আতঙ্ক ছড়ায়, তা ছাড়ার আগে নিরাপত্তার খুঁটিনাটি কি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল? প্রত্যূষবাবুর বক্তব্য, সব ট্রেনই নিয়মমাফিক পরীক্ষা করা হয়। তবে, তিনি জানান কী ভাবে কামরায় পাখা থেকে আগুনের ফুলকি ছড়াল তা এখনও পরিষ্কার নয়। মেট্রোকর্তাদের অবশ্য মত, লোকের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ালেও মেট্রোর স্টেশনগুলির মধ্যে দূরত্ব এত কম যে কখনওই আগুন খুব বেশি বাড়ার সুযোগ পেত না। নিরাপদে কামরা খালি করে আগুন নেভানোর যথেষ্ট সময় মিলত।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.