বাবা নেই। বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধা মা। সংসার চালাতে গিয়ে নিয়মিত দিনমজুরি করতে হয় তাঁকে। বাড়ি বলতে খড়ের ছাউনি দেওয়া একচালার একটাই ঘর। বৃষ্টি হলে ফুটো ছাউনি দিয়ে জল পড়ে। দিনভর হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর সেই বাড়িতে বসেই কুপির আলোয় পড়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ৮২ শতাংশ নম্বর পেয়ে এলাকার সবাইকে চমকে দিয়েছেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের চণ্ডীপুর হাই স্কুলের রফিক আলি। এ বছর কলা বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে লেটার পেয়েছে ৪টি বিষয়েই। বিষয় ভিত্তিক তাঁর প্রাপ্ত নম্বর, বাংলা-৭৩, ইংরেজি-৮০, এডুকেশন-৮০, ভূগোল-৮৮, দর্শন-৯০। স্কুলের ১৩৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যেও সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে রফিক। তাঁর এই ফলাফলে কেবল তাঁর স্কুলই নয়, খুশির হাওয়া গ্রাম ঝিকডাঙাতেও। নিত্য অভাবের সঙ্গে লড়াইয়ে নজরকাড়া ফল করেও এখন দুশ্চিন্তা তাড়া করছে রফিককে। এত দিন বাড়ি থেকে ৬ কিলোমিটার দূরের স্কুলে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পেরেছে। এ বার বাইরে কোনও ভাল কলেজে ভর্তি হয়ে কী ভাবে পঠনপাঠন চলবে তা ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে দিনমজুরি করে পড়াশুনা চালানো রফিক। চণ্ডীপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলি এই দিন এই প্রসঙ্গে বলেন, “স্কুলের অধিকাংশ পড়ুয়াই অভাবী ঘর থেকে আসে। রফিকের ব্যাপারটা একেবারেই স্বতন্ত্র। সংসার চালিয়ে ওকে পড়াশুনা চালাতে হয়েছে। ওর যাতে পড়া বন্ধ না হয় সেজন্য সবরকম সাহায্য করা হবে।” প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলে লড়াই চালিয়ে পড়েও ভাল ফল করায় সংবর্ধনা দেওয়ার পাশাপাশি রফিককে আর্থিক সাহায্য করা হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। উপপ্রধান সেকিল সিরাজি বলেন, “ওর লড়াই অনেককেই উদ্বুদ্ধ করবে। ওকে আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি সংবর্ধনাও দেওয়া হবে।” রফিকের বাবা শেখ সইফুদ্দিনও ছিলেন দিনমজুর। দু’বছর আগে প্রচন্ড গরমে মাঠে কাজ করার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তিন দিদির বিয়ে হয়ে গেলেও মাকে নিয়ে কীভাবে পড়াশুনা করে সংসার চলবে তা ভেবে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে সদ্য মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া রফিকের। কোনও কিছুই হার মানাতে পারেনি তাঁকে। রফিক জানান, ভাল একটা চাকরি করে মায়ের মুখে হাসি দেখতে চাই। তবে কী পড়ব, কোথায়, কীভাবে পড়ব কিছুই জানি না। মা রোবেনা বেওয়া বলেন, “রাত জেগে ছেলেটা পড়ত। দুবেলা কখনও পেটভরে খেতেও দিতে পারিনি।” |