একজনের বাবা ক্ষুদ্র চাষি। অন্যজনের বাবা কাঠ মিস্ত্রি। দুঃস্থ পরিবারের সন্তান হয়েও জলপাইগুড়ির কচুয়া বোয়ালমারি গ্রামের দুই ছাত্র ছাত্রী রাজেশ সরকার ও কল্পনা মণ্ডল উচ্চ মাধ্যমিকে ৮০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে গ্রামের সকলকে চমকে দিয়েছেন। কল্পনা উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছেন মোট ৪২৭ নম্বর। রাজেশ পেয়েছেন ৪০৫। কল্পনার বিষয় ভিত্তিক নম্বর হল, বাংলায়-৮৭, ইংরিজিতে-৭৪, ভূগোলে-৯৬, ইতিহাসে-৮০ এবং সংস্কৃততে-৯০। রাজেশের বিষয় ভিত্তিক নম্বর হল বাংলায়-৮০, ইংরিজিতে-৮০, ভূগোলে-৮৪, ইতিহাসে-৭৫ এবং রাস্ট্র বিজ্ঞানে-৮৬। কল্পনার বাবা কালাচাঁদবাবু কোচবিহার হলদিবাড়ি, জলপাইগুড়ির মন্ডলঘাট এলাকায় কাজ করেন। রোজ কাজ মেলে না। স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং এক ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খান। বাধ্য হয়ে কল্পনার মা গোপা দেবীকে দিনমজুরের কাজ করতে হয়। তাই দিয়ে কোনও রকমে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালান। কল্পনা হলদিবাড়ি কলেজ থেকে ইংরিজিতে অনার্স নিয়ে পড়তে চান। ভবিষ্যতে তাঁর স্কুল বা কলেজের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন। এতদিন নিজেদের বালুরঢিপ গ্রাম থেকে দু কিলোমিটার দূরে কচুয়া বোয়ালমারি স্কুল থেকে পায়ে হেঁটে গিয়ে পড়াশোনা করতে অসুবিধা হয়নি। এখন গ্রাম থেকে ৩ কিমি দূরে কাশিয়াবাড়িতে যেতে হবে। তার পরে সেখান থেকে বাস ধরে হলদিবাড়ি কলেজে যেতে হবে। কল্পনার মা বলেন, “খরচ কী করে চালাব তাই ভেবে পাচ্ছি না। আমাদের দুজনেরই ইচ্ছা ওরা আরও শিক্ষিত হবে উঠুক। শেষরক্ষা কী করে হবে জানি না।” |
একই গ্রামে বাড়ি রাজেশের। রাজেশের বাবা বাবুলালবাবু একজন ক্ষুদ্র চাষী। স্ত্রী এক ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে সংসার সংসার চালাতে চাষবাসের পাশাপাশি দিনমজুরের কাজ করতে হয়। রাজেশও ইংরিজিতে অনার্স নিয়ে হলদিবাড়ি কলেজে পড়তে চান। ভবিষ্যতে তাঁরও শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে। রাজেশের বাবা বলেন, “ছেলেটার ইচ্ছা আর চেষ্টা দেখলে চোখে জল আসে। জানি না কতদূর কী করতে পারব।” কচুয়া বোয়ালমারি হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জিতেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “ওরা দুজনেই মেধাবী। কেউ যদি ওদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নকে স্বার্থক করে তুলতে সহায়তা করেন তাহলে ওরা খুবই উপকৃত হবে।” |