অনটনই জেদ জুগিয়েছে বিপ্লবকে
রোজ সকাল ৭টায় দোকান খুলে উনুন ধরাতে হয়। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের উল্টোদিকে রাস্তার ফুটপাতে ভ্যান গাড়ির ওপরে চায়ের দোকান। সাতটায় দোকান খুলে দশটা পর্যন্ত চা এবং পুরি-সব্জি বিক্রি সেরে, স্কুলে যায় বিপ্লব। প্রতিদিনের ব্যস্ত সকালে একদিনও স্কুলে পৌঁছতে দেরি করেনি বিপ্লব। সোমবার স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিজের ঘরে বিপ্লবে ডেকে পাঠিয়ে তার প্রতিদিনের জীবনযাত্রার কথা যখন অন্য সবাইয়ের কাছে বলছেন, তখন বিপ্লবের মাথা নিচু করে বসে রয়েছেন। উচ্চমাধ্যমিকে কলা বিভাগে ৭৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছে জলপাইগুড়ির সেনপাড়ার বাসিন্দা বিপ্লব সেন। তিস্তা বাঁধের ধারে টিন দিয়ে ঘেরা দুটি ঘরেই তিন ভাইবোন এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন বিপ্লব। পাঁচজনের পরিবারের আয়ের উৎস হাসপাতালের সামনে ভ্যানগাড়ির চায়ের দোকান। স্কুল থেকে পাওয়া কিছু বই এবং উঁচু ক্লাসের দাদাদের থেকে চেয়ে নেওয়া পুরানো বই দিয়েই বিপ্লবের পড়াশোনা। স্কুল ছুটির পরে শিক্ষকদের কাছে বিশেষ ক্লাস করেছে বিপ্লব। সকালে চায়ের দোকান সামলে স্কুল। সেখান স্কুল থেকে ফেরার পরে বাড়ি থেকে বের হত না বিপ্লব। সন্ধ্যে থেকে টানা রাত পর্যন্ত পড়াশোনা চালাত। এদিন বিপ্লব বলেন, “মনে একটা জেদ চেপে গিয়েছিল। এত কষ্ট করে বাবা-মা পড়াচ্ছেন, ভাল ফল করতেই হবে।” জলপাইগুড়ি আনন্দ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়েই প্রথম শ্রেণি থেকে পড়াশোনা বিপ্লবের। এদিন ফল প্রকাশের পরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৈকত ঘোষ বলেন, “বিপ্লবের সাফল্যে আমরা গর্বিত। পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতাও বিপ্লবের পড়াশোনার অন্তরায় হতে পারেনি। ওর ভবিষ্যত জীবনের সাফল্য কামনা করি।” উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৬৭ পেয়েছে বিপ্লব। প্রিয় বিষয় ভূগোলে পেয়েছে ৮৩ নম্বর। ভূগোল নিয়েই উচ্চশিক্ষার ইচ্ছে থাকলেও আর্থিক দিক থেকে সমস্যার কারণে সেই ইচ্ছে পূরণ হবে না বলেই আশঙ্কা বিপ্লবের। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলের দিনেই সেই হতাশা ঝরে পড়েছে বিপ্লবের কথায়, “জানি না, এর পরে কী করব। বাবা-মা দোকান চালান। বাবা অসুস্থ বলে সকাল থেকে আমাকেই দোকান করতে হয়। বাড়িতে দিদির বিয়ে দিতে হবে। চা দোকানের সামান্য আয়ে কীভাবে সব কিছু সম্ভব হবে জানি না। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পেরেছি, এটাই তো অনেক।” আনন্দ মডেলের প্রধান শিক্ষক সৈকতবাবুর মতোই জলপাইগুড়ি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ গুণও সোমবার স্কুলের শিক্ষক, অশিক্ষক থেকে শুরু করে নিচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের ডেকে চম্পকের সাফ্যলের কথা শুনিয়েছেন। চম্পকের বাবা গ্যারাজ কর্মী। নাগরাকাটায় আদি বাড়ি। নাগরাকাটা থেকেই চম্পক মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। পড়াশোনার প্রতি চম্পকের আগ্রহ দেখে নাগরাকাটায় বাড়ি বিক্রি করে সপরিবারে জলপাইগুড়িতে চলে আসেন কাজল ভট্টাচার্য। শান্তিপাড়া এলাকায় একটি গ্যারাজে কাজ নেন। ছেলে চম্পককে ভর্তি করিয়ে দেন জলপাইগুড়ি হাই স্কুলে। এদিন কাজলবাবু বলেন, “দুই ছেলে। চম্পকই বড়। অনেক সময়ে টাকা পয়সা না থাকায় ছেলেকে বই কিনে দিতে পারিনি। গৃহশিক্ষক রাখতে পারিনি বলেই স্কুলেই ছুটির পরে শিক্ষকদের কাছে চম্পক পড়াশনা করত। ওকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে।” উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৫১ পেয়েছে চম্পক। শতকরা হিসেবে ৭০ শতাংশ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ গুণ বলেন, “চম্পকের পরিবারের কথা জানতাম। স্কুলেই ওকে বেশি সময় দেওয়া হয়েছে। অনেক সময় দেখতাম স্কুল ছুটির একঘন্টা পরেও কোনও না কোনও শিক্ষকের থেকে পড়া বুঝে নিচ্ছে ও। এই মনোভাবই ওকে সফল করেছে।” চম্পকের কথায়, কখনও হাল ছেড়ে দিইনি। ববা-মা প্রেরণা দিয়েছেন। স্কুলের শিক্ষকরা সাহায্য করেছেন। এবার উচ্চশিক্ষার জন্য নতুন করে লড়াই শুরু করতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.