জিতলেন কাজের চেষ্টা চালানো ‘অভিভাবক’
কাজের চুলচেরা হিসেব ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাকুক। আপাতত উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের ‘উদয়াস্ত ছোটাছুটির স্পৃহা’কে যেন স্বীকৃতি দিল ধূপগুড়ি। পুরভোটের ফলাফল হয়তো সে কথাই বলছে। এই প্রথম উত্তরবঙ্গে একক ভাবে পুর-বোর্ড গড়ার ‘চ্যালেঞ্জ’ সফল হল তৃণমূলের।
সেই সাফল্যের পরে মঙ্গলবার গৌতমবাবু বললেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের এক বছরের কাজ দেখে মানুষের আস্থা যে ক্রমশ বাড়ছে তা প্রমাণ হল ধূপগুড়িতেও। ধূপগুড়ি আমাদের কাজের স্পৃহাকে স্বীকৃতি দিল।” তাঁর সংযোজন, “আগামী দিনে কাজ করার চেষ্টার ধারাবাহিকতা বজায় রাখাটাই এখন এক নতুন চ্যালেঞ্জ। সদ্য নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মনে রাখতে হবে, মানুষের জন্য কাজ করা ও কাজের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই আমাদের দলনেত্রীর অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে।”
বস্তুত, ‘কাজ করা’ কিংবা ‘কাজের চেষ্টা’ চালিয়ে যাওয়াআমজনতার মনে কতটা প্রভাব ফেলছে তৃণমূলের কাছে যেন তারই পরীক্ষা ছিল ধূপগুড়ি পুরভোটে। কারণ, ধূপগুড়ি বিধানসভা সিপিএমেরই দখলে ছিল। তৃণমূলের অন্দরের খবর, ‘লাল দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত সেই ধূপগুড়িতে তৃণমূল একা লড়তে নামার পরে দলের একাংশের মধ্যে ‘কিন্তু-কিন্তু’ মনোভাব দানা বেঁধেছিল। হাল ছাড়েননি গৌতমবাবু। এ বার পুরসভার ১১টি আসন দখল করে একাই বোর্ড গড়ার দাবিদার তৃণমূল। সিপিএম পেয়েছে ৪টি। বিজেপি ১টি দখলে রেখেছে।
ধূপগুড়ি জয়ের পরে মন্ত্রী গৌতম দেব। ছবি: রাজকুমার মোদক।
তৃণমূলের সাফল্যের চাবিকাঠি তা হলে কী?
ধূপগুড়ির নানা স্তরের বাসিন্দারা যা বলছেন তার নির্যাস হল, মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে গৌতমবাবুকে এলাকায় নিয়মিত দেখা গিয়েছে। কখনও গজলডোবা, ধূপগুড়ি লাগোয়া এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র গড়ার কাজ এগোনোর চেষ্টা করেছেন। কখনও শিলিগুড়িতে অত্যাধুনিক হাসপাতালের কাজ মামলার গেরোয় থমকে যাওয়ায় প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে মামলাকারী কংগ্রেস নেতার কাছে হাতজোড় করে তা প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন। আবার কখনও জলপাইগুড়ি, ধূপগুড়ি, কুমারগ্রামের বন্ধ চা বাগানের অসুস্থদের তুলে এনে চাঁদা তুলে চিকিৎসা করিয়েছেন। তা ছাড়া, আলিপুরদুয়ার জেলা গঠন হওয়া নিয়ে দুই বাম শরিকের (আরএসপি-সিপিএম) মধ্যে টালবাহানার কারণে যে সংশয় ছিল, দু’টি সর্বদলীয় বৈঠকেই প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলার জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন গৌতমবাবু।
মন্ত্রীর এমন নানা কর্মকাণ্ডের প্রভাব এলাকায় কেমন পড়েছে?
‘ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অব ধূপগুড়ি’র (ফোসিড) সম্পাদক হিমাদ্রি সাহার বক্তব্য, “মন্ত্রী হওয়ার পরে নানা কাজের জন্য প্রচুর চেষ্টা করছেন গৌতমবাবু। যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তা পূরণ না হলে ওঁর দফতরে গিয়ে সরাসরি অভিযোগ জানানোর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তাতে শিল্পমহল আশায় বুক বেঁধেছে।” আবার এলাকার গৃহবধূ পূরবী বসাক, প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ দেবের মতো অনেকেরই বক্তব্য, “কর্মকাণ্ড দেখে মন্ত্রীকে অভিভাবকের মতো মনে হচ্ছে।”
ভোটে হারের পরে ধূপগুড়ি জোনাল কমিটির সম্পাদক তুষার বসুর বক্তব্য, “তৃণমূল মানুষকে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা বাস্তবে কতটা হচ্ছে তা খেয়াল রাখব।” আর জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহন বসু বলেছেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীকে অভিনন্দন। আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল।”

ওয়ার্ড-ভিত্তিক ফল
মোট আসন: ১৬। তৃণমূল-১১। সিপিএম-৪। বিজেপি-১।
১। অনিমা রায় সিপিএম-(১৬৯)। ২। ভারতী বর্মন তৃণমূল-(৫২)।
৩। কৃষ্ণা রায় তৃণমূল-(৪০২)।
৪। গৌতম বসাক তৃণমূল-(৭৮)।
৫। ববিতা রায় তৃণমূল-(৬৬)।
৬। ইশিতা ঘোষ তৃণমূল-(২৯৭)।
৭। শৈলেনচন্দ্র রায় তৃণমূল-(৬২)।
৮। কৃষ্ণদেব রায় বিজেপি-(১৬৪)।
৯। নমিতা রায় তৃণমূল-(১২২)।
১০। অরূপ দে তৃণমূল -(৪৫৪)।
১১। মনোজ ঘোষ সিপিএম-(৩৪৫)। ১২। মুনমুন বসু তৃণমূল-(৩৩০)।
১৩। বাদল সরকার সিপিএম-(৪৪)। ১৪। তুষার মণ্ডল তৃণমূল-(২১৩)। ১৫। বিকাশ সরকার তৃণমূল-(১০৫)। ১৬। দয়ামণি রায় সিপিএম-(৯২)।
(বন্ধনীতে ভোটের ব্যবধান)
গত বার ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিজেপি’র দখলে ছিল।
১, ১১, ১৩ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড সিপিএমেরই ছিল।

(সহ প্রতিবেদন: নিলয় দাস)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.