দহনের বলি ৪৫, তাপপ্রবাহ কলকাতাতেও
হনের পরাক্রমে ভাটা তো পড়েইনি, বরং তা ক্রমশ ভয়াল চেহারা নিচ্ছে। তাপপ্রবাহ কবলিত দক্ষিণবঙ্গে মঙ্গলবার গরমের বলি হয়েছেন ৪৫ জন। এমনকী, খাস কলকাতা শহরে এ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে গিয়েছে। একই মহানগরে অস্বস্তি-সূচক ছুঁয়েছে নতুন শিখর। স্বস্তির আশ্বাস বলতে একটাই বর্ষা কেরলে ঢুকেছে। যদিও তার ভাবগতিক দেখে আবহবিদেরা তেমন নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না।
প্রকৃতির এ হেন প্রতিকূলতায় মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। প্রায় ‘অচেনা’ গরমে অনভ্যস্ত শরীর বিদ্রোহ করছে। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রাথমিক ধারণার ভিত্তিতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কলকাতা-সহ তাপদগ্ধ দক্ষিণবঙ্গে গরমজনিত অসুস্থতায় এ দিন মোট ৪৫ জনের প্রাণ গিয়েছে। শুধু বর্ধমান শিল্পাঞ্চলেই সংখ্যাটা ২৪। আসানসোল মহকুমা হাসপাতাল ও আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন মোট ৬১ জন। পশ্চিম মেদিনীপুরে মারা গিয়েছেন ১০ জন। হাওড়া-বাঁকুড়া-পুরুলিয়া থেকে দু’টি করে মৃত্যুর খবর এসেছে। উত্তর ২৪ পরগনা ও হুগলিতে এক জন করে মারা গিয়েছেন। কলকাতায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ দিকে পাঁচ দিন দেরি করে এ দিন বর্ষা কেরলে ঢুকলেও তার মতিগতি বিশেষ ভাল ঠেকছে না আবহবিদদের কাছে। দিল্লির মৌসম ভবনের এক আবহবিদের বিশ্লেষণ, “মৌসুমি বায়ুর শক্তি খুবই কম। এ দিন তা কেরলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি নামাতে পারেনি। দুর্বলতার কারণেই তার উত্তর প্রান্তটি গত আট দিনের অবস্থানেই প্রায় স্থির। বুধবার তা গতি পেলেও পেতে পারে।”
গরমের বলি। হাওড়া স্টেশনের বাইরে এ ভাবেই মারা গেলেন এক যাত্রী। মঙ্গলবার রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।
অর্থাৎ দক্ষিণবঙ্গে পৌঁছতে বর্ষাকে লম্বা রাস্তা পেরোতে হবে। আর মৌসুমি বায়ু নিকটবর্তী না-হলে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে প্রাক-বর্ষার বৃষ্টিও শুরু হবে না। মুর্শিদাবাদ-নদিয়া-উত্তর ২৪ পরগনার কোথাও কোথাও বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে বিক্ষিপ্ত, হাল্কা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিলেও আলিপুরের আশঙ্কা, রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে তাপপ্রবাহে বিরতি পড়বে না। আবহবিদদের অনুমান, আপাতত কলকাতা ও আশপাশে তাপমাত্রা একই থাকবে। অস্বস্তিও থাকবে তুঙ্গে।
বস্তুত কলকাতায় এ দিন অস্বস্তি-সূচক নতুন রেকর্ড গড়ে ৭১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। মরসুমে প্রথম তাপপ্রবাহের আঁচও এ দিন টের পেয়েছেন কলকাতাবাসী। অথচ মঙ্গলবার তো কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.১ ডিগ্রির বেশি ওঠেনি! অর্থাৎ সোমবারের চেয়ে কম! তা হলে সোমবার না-হয়ে মঙ্গলবার তাপপ্রবাহ বইল কেন?
আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের ব্যাখ্যা: গ্রীষ্মে কোনও জায়গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সে দিনের স্বাভাবিক সর্বোচ্চর চেয়ে ৫ ডিগ্রি বা বেশি বেড়ে গেলে তাকে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি বলে। মাসে পাঁচ দিন অন্তর স্বাভাবিক সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বদলে যায়। সোমবার যেমন কলকাতার স্বাভাবিক সর্বোচ্চ ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার ৩৫ ডিগ্রি। সেই নিরিখে এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিক সর্বোচ্চের ৫ ডিগ্রি উপরে। অর্থাৎ তাপপ্রবাহ।
তুঙ্গ অস্বস্তির প্রতিফলন পড়েছে বিদ্যুতের চাহিদাতেও। সিইএসসি-সূত্রের দাবি, এ দিন দুপুর তিনটেয় কলকাতায় বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়ায় ১৯০৪ মেগাওয়াট, যা নতুন রেকর্ড। সংস্থা-সূত্রের বক্তব্য: গত এক মাসে সিইএসসি-এলাকায় অন্তত ৪০ হাজার নতুন বাতানুকূল যন্ত্র বসেছে। ফলে চাহিদা হয়েছে লাগামছাড়া। বণ্টন কোম্পানি এ দিন সিইএসসি’র জন্য ৭৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে, যা এ মাসের রেকর্ড। তবে জোগানে ঘাটতি না-থাকলেও বাড়তি চাহিদার দরুণ বিভিন্ন এলাকায় ‘ফিউজ’ উড়ে যে বিভ্রাট ঘটছে, তা-ও মেনে নিয়েছে সিইএসসি। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরের বেশ কিছু অঞ্চল এ দিন স্থানীয় বিভ্রাটে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎবিহীন থাকে। সংস্থার আশ্বাস, বৃষ্টি পড়লেই সমস্যা কমবে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.