অবশেষে এক পশলা বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরল মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে। কান্দি এলাকায় শিলাবৃষ্টিও হয়। বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় হরিহরপাড়া, ডোমকল, রঘুনাথগঞ্জ ও বহরমপুর-সব বেশ কিছু এলাকায় গাছ ভেঙে পড়েছে। বাড়ির চালাও উড়ে গিয়েছে। ঝড়ের দাপটে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের ফলে শুকনো মাটিতে আম ঝরে পড়েছে। অল্পের জন্য বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল মুর্শিদাবাদ জেলা সন্তরণ সংস্থার সুইমিং পুলে প্রশিক্ষণরত খুদে সাঁতারুরা। ওই সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আশিস ঘোষ বলেন, “ঝড়বৃষ্টির পর পরই শতাধিক শিশু ওই সুইমিং পুলে প্রশিক্ষণ নিতে নামে। শিশুরা যখন সুইমিং পুলের দক্ষিন দিকে ছিল সেই সময় উত্তর দিকে অবস্থিত জেলা সেচ দফতরের দীর্ঘ বাউন্ডারির দেওয়ালের অর্ধেকটা ধসে জলে পড়ে। শিশুরা ওই সময় উত্তর দিকে থাকলে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেত।” বহরমপুর থানার কাটাবাগান এলাকার ইটভাটার মালিক সামিম আহমেদ বলেন, “প্রবল ঝড়ে এলাকার মাদ্রাসা মার্কেটের ৩০টি দোকান ঘরের করগেটেড টিনের চালা উড়ে গিয়েছে।” তবে বৃষ্টি হয়নি কুলি থানার অর্ধেক এলাকায়। |
মঙ্গলবার দুপুরে বহরমপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। এ দিনের বিকালের বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তি এলেও তা কত ক্ষণ স্থায়িত্ব পাবে তা নিয়ে অবশ্য যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। কারণ, ফের বৃষ্টি না নামলে বুধবার থেকে আবারও অসহনীয় গরমে কাহিল হতে হবে। কৃষি দফতরের মুর্শিদাবাদ জেলার মুখ্য আধিকারিক শ্যামল মজুমদার বলেন, “দীর্ঘ দিন বৃষ্টি হয়নি। তার উপর প্রবল গরম। ফলে পাটগাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় আউস ধানের পুরো চাষ করা সম্ভব হয়নি।” শ্যামলবাবু বলেন, “ফসলের জমিতে এখন রাতে জলসেচ দেওয়া প্রয়োজন।” দাবদাহের ফলে দুপুরে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ছে। শুনসান দুপুরে যাত্রীর অভাবে প্রায় ফাঁকা বাস চালাতে হচ্ছে। আই এন টি ইউ সির অনুমোদিত ‘মুর্শিদাবাদ জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়ান’-এর বহরমপুর শাখা সম্পাদক সনৎ বসু বলেন, “বহরমপুর থেকে যে সব গাড়ি কলকাতা, বধর্মান, সাঁইথিয়া, রামপুরহাটের মতো দুরপাল্লায় যাতায়াত করে সেই সব গাড়িতে গরমের কারণে দিনের বেলায় যাত্রী সংখ্যা খুবই কমে গিয়েছে। সকালে ও সন্ধ্যায় কিছু যাত্রী মিলছে।” গরমের কারণে হাসপাতাল গুলিতেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সদর শহর বহরমপুরে রয়েছে জেলা হাসপাতাল।
ওই হাসপাতালের সুপার কাজলকৃষ্ণ বণিক বলেন, ‘‘অত্যধিক গরমের কারণে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ভোগান্তি বেশি মূলত শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধার। এমনিতেই এই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। তার উপরে উৎকট গরম। সেই পরিবেশ ফলে রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে চলেছে।” মুর্শিদাবাদ জেলা চেম্বার অব কমার্সের যুগ্ম সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “গরমের কারণে অধিকাংশ দোকানেই ক্রেতা নেই। ব্যবসায়ীরা দোকানে বসে সত্যি সত্যিই মাছি তাড়াচ্ছেন। কিছু ঠাণ্ডা পানীয়, তরমুজ জাতীয় ফল, পাকা বেল, পাকা পেঁপে ডাব, ছাতা ও রোদ চশমার চাহিদা বেশি। ফলে সেই সব পন্যের বাজারদরও বেশ কিছুটা চড়া।” বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার মাঠ লাগোয়া টেক্সটাইল মেড়ে রয়েছে শঙ্কর দেবনাথ, মানিক ঘোষের চায়ের দোকান ও রবি ঘোষের রয়েছে রুটি মাংসের দোকান। তাঁদের সবার আক্ষেপ, “গরমের ফলে ক্রেতা নেই। তাই সংসার চালানো সত্যিই দায় হয়ে উঠেছে।” |