পুরভোটে হলদিয়ায় হারের পরই বাম কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সকাল ন’টার পর থেকেই অশান্ত হয়ে ওঠে হলদিয়া। গণনাকেন্দ্রে সামনে তমালিকা পণ্ডাশেঠের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। তমালিকাদেবী গণনাকেন্দ্রে ঢোকার পর তাঁর ছেলেরা গাড়ি নিয়ে গণনাকেন্দ্র থেকে বেরোতেই ইট ছুড়ে তমালিকাদেবীদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সামলাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। বেলা বাড়তেই জয়ের আনন্দে আবির খেলায় মেতে সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। মঞ্জুশ্রী মোড়ে বাজি ফাটানোর সময়ও কিছুটা উত্তেজনা ছড়ায়। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে, (যেখান থেকে জিতেছেন তমালিকাদেবী) সুকুমার সেনগুপ্ত কলোনিতে সিপিএমের লোকাল কমিটির অফিসে তৃণমূলের লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ। পার্টি অফিসের দরজা, জানলা ও কিছু মোটরবাইক ভাঙচুর করা হয়। সুকান্তনগরেও সিপিএম কার্যালয়ে হামলা চলে বলে অভিযোগ। দুপুরের দিকে বালুঘাটা, চকদ্বীপা, বনমালিচক ও ব্রজবিনোদচকে বেশকিছু বাড়িতে ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ সিপিএমের। সিপিএমের জোনাল সম্পাদক সুদর্শন মান্নার কথায়, “সর্বত্র সন্ত্রাস চলছিলই। এ বার পরাজয় মানতে না পেরে এই কাণ্ড ঘটাচ্ছে।” তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর অবশ্য বলেন, “আমাদের কোনও কর্মী এই সব ঘটনায় জড়িত নয়।”
|
পাঁশকুড়ায় জিতে মারমুখী তৃণমূল |
হেরেও হলদিয়ায় হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। আর পাঁশকুড়ায় জিতে আরও আক্রমণাত্মক হয়েছে শাসকদলের বাহিনী। ভোট মিটতেই রানিহাটিতে সিপিএম অফিসে তৃণমূলের লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ। বোমা ছোড়া হয়। পাঁশকুড়া স্টেশন এলাকায় সিপিএমের স্টেশন লোকাল অফিসেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে পরাজিত সিপিএম প্রার্থী সইদুল ইসলামের দোকানে জোর করে টাঙানো হয় তৃণমূলের পতাকা। সন্ধ্যায় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত সিপিএম প্রার্থী টুম্পা মালাকারের দোকানে এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ডে এক সিপিএম সমর্থকের চা- দোকানেও হামলার অভিযোগ উঠেছে। তবে কোনও অভিযোগেই আমল দিতে চাননি তৃণমূল নেতৃত্ব।
|
পুরপ্রধান পদের অনেক দাবিদার |
বিদায়ী পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান তো গো-হারা হয়েছেন। একে বারে তিন নম্বরে নেমেছেন। এই অবস্থায় পাঁশকুড়ায় তৃণমূলের মধ্যে পুরপ্রধান পদের দাবিদার অন্তত ৪ জন। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয়ী জাকিউর রহমান খান, ১০ নম্বরের বিজয়ী মন্ত্রী-পত্নী সুমনা মহাপাত্র, ১২ নম্বরের নন্দ মিশ্র, ১৫ নম্বরের আনিসুর রহমানরা তাল ঠুকছেন। এখন দেখার কার ভাগ্যে শিকে ছেড়ে। একমাত্র সুমনাদেবীই নিজে মুখ খোলেননি। অনুগামীদের দিয়েও কিছু বলাননি। অন্যেরা ভোটের আগে থেকেই লাইনে! এর মধ্যে ‘বাহুবলী’ পরিচয়ের আনিসুর তো ৮৯৬ ভোটের সর্বোচ্চ মার্জিন করে নিজের দাবির পক্ষে সওয়াল শুরু করিয়ে দিয়েছেন অনুগামীদের দিয়ে।
|
কংগ্রেস ও বিজেপি দাগ কাটল সামান্যই |
একমাত্র পাঁশকুড়ার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের পুরপ্রধানকে তিন নম্বরে নামিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী নিতাই কাউয়ের দু’নম্বরে উঠে আসা ছাড়া জেলার দুই পুরসভার ভোটে তেমন সাফল্য নেই শতাব্দী প্রাচীন দলের। পাঁশকুড়ায় আবার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে হেরেছেন কংগ্রেসের ভাইস চেয়ারম্যান আশুতোষ চক্রবর্তীও। তবে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল হেরেছে ৩৫ ভোটে। সেখানে কংগ্রেস-বিজেপি’র মিলিত ভোট ১৬৮। ১৬ নম্বরে এই দু’দলের মিলিত ভোট ১২৮, যেখানে তৃণমূলের হার মাত্রই ৪৬ ভোটে। হলদিয়ার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের তুষার মণ্ডল হেরেছেন ১৯৩ ভোটে। আর কংগ্রেস-বিজেপি’র মিলিত ভোট সেখানে ২৬০। সেখানকার ২২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীর ৫৯ ভোটে হারের ক্ষেত্রে বিজেপি-র ১২৯ ভোট প্রাপ্তি ফ্যাক্টর তো বটেই।
|
মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের দেহ উদ্ধার |
মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবকের দেহ উদ্ধার হল মাঠ থেকে। অভিযোগ, রাতে উদ্দেশ্যহীন ভাবে তাঁকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে পিটিয়ে মেরে ফেলেন গ্রামবাসী। মৃত সুশান্ত মণ্ডল (২১) পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থানার খাসবাড়ের বাসিন্দা। মঙ্গলবার ভোরে বাড়ি থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে ঘাটাল থানারই সাদিচক গ্রামের একটি মাঠে ওই যুবকের দেহ উদ্ধার হয়। সংলগ্ন নন্দীপুর গ্রামের বাসিন্দারা চোর সন্দেহে ওই যুবককে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ। ঘাটালের সিআই অসিত সামন্ত বলেন, “মৃত যুবক মানসিক ভাবে অসুস্থ। সোমবার রাতে ঘোরাঘুরি করার সময়ে চোর সন্দেহে নন্দীপুরের কিছু বাসিন্দা তাঁকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন বলে শুনেছি।” পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল কুমার চৌধুরী বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেল ৫টায় সুশান্ত বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। রাতে না-ফেরায় বাড়ির লোক খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। সন্ধান না মেলায় তাঁরা পুলিশের কাছে যান। মৃতের দাদা প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, “মাঝেমধ্যেই ভাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ত। আবার রাতে নিজেই বাড়ি ফিরে আসত। সোমবার না ফেরায় আমরা এলাকায় খোঁজখবর করি। মঙ্গলবার সকালে পুলিশের কাছে গিয়ে ভয়ঙ্কর ওই খবর পাই।”
|
প্রচণ্ড গরমে মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ঘাটাল আদালতে কর্মবরিতি পালনের সিদ্ধান্ত নিলেন আইনজীবীরা। |