একলব্য স্কুলের ফলাফল আশানুরূপ নয়, প্রশ্ন অডিটে
ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক--সবারই নিখরচায় থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের খাবার, এমনকী পোশাকও দেয় সরকার। রয়েছে ‘স্পেশাল কোচিং’য়ের সুবিধাও। ছাত্রছাত্রী-পিছু বাৎসরিক গড় খরচ প্রায় ৪২ হাজার টাকা। তবু ঝাড়গ্রামের একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের ফলাফল ভাল হচ্ছে না বলে প্রশ্ন তুলল অডিট। জলের মতো অর্থ খরচ করার পরেও সরকারি এই ‘মডেল’ স্কুল সম্বন্ধে অডিট প্রশ্ন তোলায় বিড়ম্বনায় পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনও। স্কুলের পঠন-পাঠনের মানোন্নয়নে রাজ্য সরকারও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই স্কুলের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে জেলা অনগ্রসর শ্রেণি-কল্যাণ দফতর। দফতরের প্রোজেক্ট অফিসার শান্তনু দাস বলেন, “এটা ঠিক যে, ছাত্রছাত্রীদের আশানুরূপ ফল হচ্ছে না। যাতে ভবিষ্যতে পঠনপাঠনের মান উন্নত করা যায় সে জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারও পঠনপাঠনের মানোন্নয়নে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” যদিও স্কুলের ফলাফল খারাপ বলে মানতে রাজি নন টিচার-ইন-চার্জ ফটিকচন্দ্র ঘোষ। তাঁর কথায়, “ফল তো ভালই হচ্ছে। রেসিডেন্সিয়াল স্কুল বলেই যে একশো শতাংশ ফল ভাল হবে, এটা কী ভাবে সম্ভব। আমরা সব সময়েই ভাল ফলের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
স্কুলের টিচার-ইন-চার্জ এই দাবি করলেও তা মানতে রাজি নয় অডিট। স্কুলের ফলাফলের পরিসংখ্যানও অবশ্য স্কুলের দাবিকে মান্যতা দেয় না। ২০০৭-০৮ সালে এই স্কুল থেকে ২০ জন মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল। তার মধ্যে ১১ জন অকৃতকার্য হয়। অর্থাৎ ৫০ শতাংশের বেশি অকৃতকার্য। প্রথম বিভাগে পাশ করেছিল মাত্র ৪ জন। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ মিলে ৫ জন পাশ করেছিল। ২০০৮-০৯ সালে ২২ জন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। তার মধ্যেও ৮ জন অকৃতকার্য হয়। মাত্র ৩ জন প্রথম বিভাগে পাশ করেছিল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগে পাশ করেছিল ১১ জন। ২০০৯-১০ সালে ৩৩ জন পরীক্ষা দিয়েছিল। এক জনও প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ মিলিয়ে ৩০ জন পাশ করেছিল। ফেল করেছিল ৩ জন। আর ২০১০-১১ সালে ৩৫ জনের মধ্যে মাত্র ২ জন প্রথম বিভাগে পাশ করে। ২ জন ফেল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগে পাশ করেছিল বাকি ৩১ জন। উচ্চ-মাধ্যমিকেও ফল প্রায় একই রকম। ২০০৭-০৮ সালে ৮ পরীক্ষার্থীর মধ্যে কেউ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগে ৫ জন পাশ করেছিল। ৩ জন ফেল। ২০০৮-০৯ সালে ১৭ জন পরাক্ষার্থীর মধ্যে ১ জন প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগে ১১ জন পাশ করে। ৫ জন ফেল। ’০৯-১০ সালে ২৫ জনের মধ্যে ৬ জন প্রথম বিভাগ, ১৭ জন দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগে পাশ করে। ২ জন ফেল। ’১০-১১ সালে ২৭ জনের মধ্যে ৪ জন প্রথম বিভাগ, ২১ জন দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগে পাশ করে। ২ জন ফেল।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তফসিলি উপজাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনের মানোন্নয়নের লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় সহায়তায় রাজ্যে ৫টি (জলপাইগুড়ি, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুর) একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল শুরু হয়েছিল ২০০২ সালে। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দিয়েছিল, এই স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে। যদিও রাজ্য সরকার স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ না করে চুক্তির ভিত্তিতে অস্থায়ী শিক্ষক দিয়েই এখনও পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আগে ঝাড়গ্রামের এই মডেল স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ২৭০ জন। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩১৫। ছাত্র-ছাত্রীদের থাকার জন্য হস্টেল রয়েছে। শিক্ষকদেরও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষকের সংখ্যা ১৮ জন। এর বাইরে ক্লার্ক, ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট, রাধুনি, সুইপার--সব মিলিয়ে ১৫ জন কর্মীও রয়েছেন। বছরে গড়ে এই স্কুলের জন্য প্রায় ১ কোটি টাকা খরচ হয়। চলতি বছরের জন্যই ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৩২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। যেখানে মাত্র ৩০০ জন ছাত্রছাত্রী, প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও কর্মী রয়েছেন, সেখানে ফল এমন হতাশাজনক কেন সেই প্রশ্ন উঠেছে। একেই প্রতিটি ক্লাসে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা কম। তার বাইরেও বিশেষ কোচিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ার কথা। কোনও ছাত্রছাত্রীরই অকৃতকার্য হওয়ারও কথা নয়। তা সত্ত্বেও বছরের পর বছর ধরে ফল খারাপ হয়েই চলেছে। জলের মতো টাকা খরচ করেও খারাপ ফল হওয়ায় অডিটও প্রশ্ন তুলেছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কারণেই এ বার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে অন্তত কয়েক জন স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য সরকার। নতুবা ‘মডেল’ স্কুল তার গৌরব হারাবে বলেই আশঙ্কা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পদ্ধতিতেই তফসিলি ছাত্রছাত্রীদের মানোন্নয়নের জন্য রাজ্যে আরও দু’টি মডেল স্কুল করার প্রস্তাব রয়েছে। কিন্তু যদি এখনকার স্কুলের হালই এমন খারাপ হয়, সে ক্ষেত্রে আরও মডেল স্কুল তৈরি করে কোটি কোটি খরচ করা নিয়ে প্রশ্নও উঠতে পারে। তাই এ বার ঝাড়গ্রামের স্কুলটির উন্নয়নে প্রশাসন আরও উদ্যোগী হওয়ার পরিকল্পনা করেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.