শিলিগুড়ি যা পারে। জলপাইগুড়ি তা পারে না। শহরে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আলোচনাচক্রে বারবারই হতাশা প্রকাশ হল জলপাইগুড়ি শহরের জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্যে। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি পুরসভার উদ্যোগে প্রয়াস হলে শহরের বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী সংস্থাকে নিয়ে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। বছর পাঁচেক আগে জলপাইগুড়ি পুরসভা প্রথমবার শহরে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। পরবর্তীতে একাধিকবার প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধের সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে পুরসভার তরফে। শহরের বিভিন্ন বাজারে একাধিকবার পুরসভার অভিযান থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সহ ক্রেতাদের জরিমানাও করা হয়েছে। তবু শহরে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করা যায়নি।এদিনের সভায় পুরসভার কর্তারাই স্বীকার করে নিয়েছেন, জলপাইগুড়ির থেকে অনেক পরে শিলিগুড়ি শহরে প্লাস্টিক নিয়ে অভিযান শুরু হলেও তা অনেকাংশেই সফল হয়েছে। পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু শহরে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার নিয়ে হতাশা গোপন না করে বলেন, “বর্তমানে পরিবেশের সবচেয়ে বড় শত্রু প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ। জলপাইগুড়ি শহরে প্লাস্টিক নিয়ে অনেক অভিযান হয়েছে। সেমিনার হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলাইনি। আইন দিয়ে জলপাইগুড়ি শহর থেকে প্লাস্টিক মুক্ত করা যায়নি। শহরবাসী সচেতন না হলে এই পরিবর্তন সম্ভব নয়। শহরবাসীকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলির পাঠ্যক্রমে বিষয়টি রাখতে হবে।” প্রতিবেশী শহর শিলিগুড়ির দৃষ্টান্ত তুলে ধরে হতাশা গোপন করতে পারেননি পুরসভার পরিবেশ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পরিষদের সদস্য জয়ন্তী পাল। তাঁর কথায়, “শিলিগুড়ি যা পেরেছে, আমরা কেন তা পারব না। আমরা অনেক আশা করেছিলাম যে প্লাস্টিক নিয়ে পুরসভা যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে শহরবাসী সাড়া দেবেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য শিলিগুড়িবাসী যেভাবে সাড়া দিয়েছেন, আমরা তা দিতে পারিনি।” জয়ন্তীদেবীর শহরবাসীর উদ্দেশ্যে আহ্বান, “আসুন না শিলিগুড়ির মত আমরাও চ্যালেঞ্জ নিই। আগামী পুজোর আগে শহরকে পুরোপুরি প্লাস্টিকমুক্ত করি।” সভায় বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী সংস্থার তরফে তাঁদের মতামত ও পর্যবেক্ষন তুলে ধরা হয়েছে। তবে শহরের বাসিন্দাদের নিজস্ব চেতনা না গড়ে উঠলে যে শহর থেকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বিদায় সম্ভব নয় তা ভালভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন আলোচনা সভার সঞ্চালক শুভ্র চট্টোপাধ্যায়। চেয়ারম্যানের বক্তব্যের পরে শুভ্রবাবু বলেন, “পুরসভার অভিযানে অনুপ্রাণিত হয়ে দিন কয়েক আগে এক শিক্ষককে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ না নিয়ে কাগজের প্যাকেট ব্যবহারের অনুরোধ করেছিলাম। তার উত্তরে ওই শিক্ষক আমাকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে বললেন, প্যাকেটের খরচ কী চেয়ারম্যান দেবেন? এই যদি আমাদের সচেতনতা হয় তবে জলপাইগুড়ি একদিন প্লাস্টিকে ছেয়ে যাবে।” পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “শহরটা আমাদের. নিজেদের বাড়ির মতই। আমাদের একে পরিষ্কার রাখতে হবে। এখন সময় এসেছে, বড়রা না শিখলে ছোটদের এগিয়ে এসে বড়দের শেখাতে হবে।” বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পুরসভার তরফে সকালে শোভাযাত্রা বার হয়। নেচার ও ট্রেকার্স ক্লাবের পক্ষ থেকে পরিবেশ নিয়ে বাবুপাড়ায় শিবির করে চারাগাছ বিলি হয়। শহরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের তরফে পার্থেনিয়াম পরিষ্কার করা হয়। |