নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
চার মাস আগে একটি বাস দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল গোঘাটের বহড়াশোল গ্রামের এক জনের। আহত হন ১৩ জন। তার পর থেকে হতাহতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের টাকার দাবিতে ওই বাসটিকে আর রাস্তায় চলতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই গ্রামেরই এক তৃণমূল নেতা ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। বাস-মালিক উত্তমকুমার মণ্ডল এ ব্যাপারে পুলিশ এবং মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। মোজাফ্ফর মল্লিক নামে ওই তৃণমূল নেতা তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগ থেকে বাঁকুড়ার কোতলপুর (ভায়া গোঘাট-বদনগঞ্জ) রুটের মিনিবাসটি গত ২৩ জানুয়ারি গোঘাটের উল্লাসপুরের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছে ধাক্কা মেরে উল্টে যায়। মৃত্যু হয় দু’জনের। আহত হন অন্তত ২০ জন। মৃতদের মধ্যে এক জন এবং আহতদের মধ্যে ১৩ জন বহড়াশোল গ্রামেরই বাসিন্দা। দুর্ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে আরামবাগ আদালতে মামলা চলছে।
কিন্তু দুর্ঘটনার পর থেকেই উত্তমবাবুর ওই বাসটিকে মোজাফ্ফর মল্লিক ও তাঁর অনুগামীরা রাস্তায় চলতে দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ। এ নিয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকও করেছেন মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী। কিন্তু প্রশাসন কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উত্তমবাবুর।
উত্তমবাবু বলেন, “বাসের বিমা থাকায় ওই দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবার আইনগত ভাবেই ক্ষতিপূরণ পাবেন। কিন্তু মোজাফ্ফর মল্লিক ওই গ্রামে দুর্ঘটনায় মৃতের পরিবারের জন্য ১ লক্ষ টাকা দাবি করছেন। আহতদের জন্য ২০ হাজার টাকা চাইছেন। অত টাকা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। চার মাস ধরে বাস চালাতে না পেরে আমার ক্ষতি হচ্ছে। বাস কেনার ঋণের কিস্তি মেটাতে পারছি না।” তাঁর আরও অভিযোগ, গত ২১ মে মহকুমাশাসক এবং থানার আশ্বাসে ওই রুটে বাস চালানো হচ্ছিল। কিন্তু বাসটি কৃষ্ণগঞ্জ স্টপে আটকে বহড়াশোল গ্রামে নিয়ে চলে যান তৃণমূলের লোকজন। পরে পুলিশ গাড়িটি উদ্ধার করে।
বাস চালানো বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মোজাফ্ফর মল্লিক। তাঁর দাবি, ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে থানার বৈঠকে যে সব প্রতিশ্রুতি উত্তমবাবু দিয়েছিলেন, তা রাখেননি। সেই কারণে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরাই গত ২১ মে তাঁর বাস গ্রামে নিয়ে চলে যান। তৃণমূলের তরফে কেউ বাস চলাচলে বাধা দেননি। তিনি বলেন, “বহড়াশোল গ্রামে দুর্ঘটনায় মৃত ও আহতদের পরিবারগুলি অত্যন্ত দুঃস্থ। সেই কারণে আমরা উত্তমবাবুকে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে যৎসামান্য সাহায্য করতে অনুরোধ করেছিলাম। মৃতের পরিবারের জন্য ২০ হাজার এবং আহতদের পরিবারের জন্য ১০ হাজার টাকা সাহায্য করতে বলেছিলাম। থানার এক বৈঠকে উত্তমবাবু মোট ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও তা রাখেননি।” থানার বৈঠকে কোনও প্রতিশ্রুতির কথা উত্তমবাবু অস্বীকার করেছেন।
মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “অন্যায় ভাবে যাঁরা টাকা চাইছেন, তাঁদের প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বাস চলাচল যাতে ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।” পুলিশ জানায়, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে ফের বৈঠক করা হবে। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |