নিজস্ব সংবাদদাতা • চন্দননগর |
বোলপুর স্টেশনে ‘তোলা’ না-পাওয়ায় এক হকারকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল আরপিএফের এক এএসআইয়ের বিরুদ্ধে। সোমবার ওই ঘটনার পরে মঙ্গলবারই চন্দননগরে জিআরপি-র এক কনস্টেবলের মারে মৃত্যু হল আর এক হকারের। বিনোদবিহারী সাধুখাঁ (৪৯) নামে ওই হকারের ‘অপরাধ’, জিআরপি-র কনস্টেবল তাঁকে প্ল্যাটফর্মের বাইরে যেতে বললেও রাজি হননি তিনি। প্ল্যাটফর্মেই তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন মহম্মদ মুশারফ নামে ওই কনস্টেবল। পরে তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বোলপুরের ঘটনায় অভিযুক্ত আরপিএফের এএসআই এ কে চৌধুরী অবশ্য এখনও পলাতক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বিনোদবিহারীবাবু চন্দননগর স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে বসে কাগজ বিক্রি করতেন। অবিক্রিত কাগজ বেলার দিকে ট্রেনে ফেরি করতেন। এ দিনও ট্রেনে কাগজ বিক্রি করে দুপুর ২টো নাগাদ চন্দননগর স্টেশনে নামেন তিনি। ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পাখার তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। অভিযোগ, সে সময়ে মুশারফ এসে বিনোদবিহারীবাবুকে প্ল্যাটফর্মের বাইরে যেতে বলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিনোদবিহারীবাবু ওই কনস্টেবলকে বলেন, বাইরে খুব গরম। পাখার তলায় একটু জিরিয়ে নিয়েই তিনি চলে যাবেন। |
তাঁর কাছে প্ল্যাটফর্মে হকারি করার বৈধ কার্ড রয়েছে বলেও ওই কনস্টেবলকে জানান তিনি। কিন্তু তাতে ভ্রূক্ষেপ না-করে মধ্যবয়সী ওই হকারকে
কিল-চড়-ঘুষি মারতে শুরু করেন মুশারফ।
সেই সময়ে ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে বসে কাগজ বিক্রি করছিলেন বিনোদবিহারীবাবুর ভাই সুকুমার। তিনি বলেন, “হঠাৎ দেখি ওই কনস্টেবল দাদার কলার ধরে টানতে টানতে প্ল্যাটফর্মের বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন। মারধর করছেন। দৌড়ে যাই। দাদাকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করি। কিন্তু উনি স্টেশন চত্বরে অটো স্ট্যান্ডের কাছে নিয়ে গিয়ে দাদাকে মারতে মারতে ঠেলে ফেলে দিলেন।” ঘটনাস্থলেই মারা যান বিনোদবিহারী। তা দেখে অন্যান্য হকার এবং স্থানীয় মানুষজন সেখানে ছুটে আসেন। মুশারফকে ধরে শুরু হয় গণধোলাই।
এই ঘটনার খবর পেয়ে চন্দননগর এবং ভদ্রেশ্বর থানা থেকে বিশাল পুলিশবাহিনী সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে আসে। শেওড়াফুলি এবং ব্যান্ডেল জিআরপি-ও সেখানে হাজির হয়। এসডিপিও (চন্দননগর) তথাগত বসুও আসেন। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত ছিল যে লাঠি চালিয়ে জনতার হাত থেকে ওই কনস্টেবলকে উদ্ধার করে পুলিশ।
দেহ উদ্ধারে গেলে জনতার বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। অভিযুক্তের ‘দৃষ্টান্তমূলক’শাস্তি এবং মৃতের পরিবারকে ‘উপযুক্ত’ ক্ষতিপূরণের দাবিতে এসডিপিও-র গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ চলে দীর্ঘ ক্ষণ। মহম্মদ মুশারফ নামে ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে পরে ভদ্রেশ্বর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন নিহতের ভাই সুকুমার সাধুখা। মুশারফকে গ্রেফতার করে পুলিশি প্রহরায় চন্দননগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাওড়ার রেল পুলিশ সুপার মিলনকান্তি দাস এ দিন তদন্তে এসে বলেন, “ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। ওই কনস্টেবলকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ওঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জেনেছি, কর্মরত অবস্থায় উনি এক হকারকে মারধর করেছেন।” যেহেতু প্ল্যাটফর্মের বাইরে মারা গিয়েছেন বিনোদবিহারী, ঘটনার পৃথক তদন্ত শুরু করেছে হুগলি জেলা পুলিশও। পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী এই প্রসঙ্গে বলেন, “অনিচ্ছাকৃত একটি খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে।”
রক্তাক্ত অবস্থায় মুশারফ পরে বলেন, “যাত্রীদের জায়গায় বসে থাকায় আমি ওই হকারকে উঠে যেতে বলি। কিন্তু তিনি শোনেননি। তাই, মেরে বাইরে নিয়ে যাই। প্ল্যাটফর্মের বাইরে যেতেই উনি হঠাৎ পড়ে গেলেন। ওঁকে প্রাণে মারতে চাইনি।” |