সম্পাদকীয় ২...
অণ্ণা ও যোগাচার্য
বিবার নয়াদিল্লির যন্তর-মন্তরে আরও একটি এক দিনের অনশন উদ্যাপিত হইল। অনশন-মঞ্চে অণ্ণা হজারে ও রামদেবকে হাত-ধরাধরি করিয়া বসিয়া থাকিতে দেখা গিয়াছে। এ দিনের অনশনে মুখ্য ব্যক্তি ছিলেন যোগগুরু রামদেবই, অণ্ণা হজারে নন। গত বৎসর রামলীলা ময়দানের যে জমায়েত হইতে রামদেব মহিলার ছদ্মবেশে পলায়ন করিয়াছিলেন, বর্তমান সমাবেশটি তাহার বর্ষপূর্তি উৎসবমাত্র। সেই তামাশায় যখন অণ্ণা হজারে ও তাঁহার পারিষদরা দিল্লির অনশন-মঞ্চে উপস্থিত হন, তাহার টানে ছুটির দিনে, গ্রীষ্মার্ত দিল্লিতেও, কিছু ভিড় জমিবেই। সেটা আন্দাজ করিয়াই যন্তর-মন্তরের খাবারের দোকানিরা সাপ্তাহিক বিরতি বাতিল করিয়া তাঁহাদের পসরা সাজাইয়াছিলেন।
যোগগুরু রামদেবের দ্বারা এই আন্দোলন ছিনতাই হইয়া যাওয়ার যাবতীয় লক্ষণই প্রকট। এমন নয় যে, যোগাচার্য হইলেই কাহারও দুর্নীতিবিরোধী সংগ্রামে নেতৃত্ব দিবার অধিকার নাই। কিন্তু, যাঁহার ব্যক্তিগত সততা লইয়া অন্তত কিছু মহলে প্রশ্ন আছে, তাঁহাকে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের পুরোভাগে দেখিলে খটকা লাগা অসম্ভব নহে। অণ্ণা হজারের মতো ‘মালিন্যমুক্ত ভাবমূর্তির’ লোক কেন সরকারি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে আধ্যাত্মিক গুরু-বাবাদের সাহায্য লইবেন, তাহাও স্পষ্ট নয়। সেই যোগগুরুই আবার অনশন-মঞ্চ হইতে সটান বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর প্রণাম লইতে ও তাঁহাকে আশীর্বাদ করিতে চলিয়া গেলে গোটা আন্দোলনের বিষয়টি আরও ঘোলাটে হইয়া পড়ে। বিজেপি নেতৃত্বের সহিত অণ্ণা হজারে ও তাঁহার পার্শ্বচরদের ঘনিষ্ঠতা লইয়া গুঞ্জন ছিলই। যোগগুরু সেই গুঞ্জনকে বিশ্বাসযোগ্য করিয়া তুলিলে কিন্তু হজারেদের আন্দোলন আর নাগরিক সমাজের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন থাকে না, নাগপুর হইতে নেপথ্যে নিয়ন্ত্রিত হিন্দুত্ববাদীদের খিড়কিদুয়ারি আত্মপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ হইয়া ওঠে, কেন্দ্রীয় শাসক দল কংগ্রেস ও তাহার নেতামন্ত্রীদের কোণঠাসা করাই যাহার লক্ষ্য।
সন্দেহ হয়, এই আন্দোলন ক্রমে তামাশায় পরিণত হইতেছে। তাহা ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক। নাগরিক সমাজ হইতে রাষ্ট্রীয়, দলীয় ও বেসরকারি দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রবল জনমত তৈয়ারি হইলে তাহা সমাজ ও রাজনীতিকে সুপ্রভাবে প্রভাবিত করিতে পারে। কিন্তু সে জন্য নাগরিক সমাজকে আপন ভূমিকায় সুস্থিত থাকিতে হয়, চিন্তায় ও আচরণে যথার্থ গণতান্ত্রিকতাকে মর্যাদা দিতে হয়। অণ্ণা হজারে রামদেবরা সেই মর্যাদা দেন নাই। তাঁহারা সংসদের মর্যাদাকেই সম্পূর্ণ অস্বীকার করিয়াছেন, এবং তাহার পাশাপাশি নিজেদের কথায় এবং আচরণেও লজ্জাকর এবং বিপজ্জনক অ-গণতান্ত্রিকতার উৎকট পরিচয় দিয়াছেন, দিয়া চলিয়াছেন। বৃহত্তর নাগরিক সমাজ তাঁহাদের সম্পর্কে আস্থা হারাইয়া থাকিলে এক অর্থে মঙ্গল ভুল স্বর্গের পিছনে দৌড়নো অপেক্ষা বসিয়া থাকাও শ্রেয়। কিন্তু ঠিক স্বর্গ রচনার কাজটি সে জন্য তুচ্ছ হইয়া যায় না। গণতন্ত্রে নাগরিক সমাজের ভূমিকা এবং গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সেই ভূমিকা যথাযথ না হইলে গণতন্ত্র অসম্পূর্ণ থাকিয়া যায়। অণ্ণা হজারেদের দিয়া সেই প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নহে। তাহা অন্য সাধনা। তাহার জন্য অন্য সাধক চাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.