ইউরোপের পরিস্থিতি নয়, দেশে আর্থিক সংস্কার কর্মসূচি দীর্ঘদিন স্তব্ধ হয়ে থাকাই সাম্প্রতিক আর্থিক সঙ্কটের কারণ বলে গত কাল মন্তব্য করেছিলেন শিল্পমহলের কর্তারা। আর্থিক অবস্থা নিয়ে অসন্তোষ জমেছে কংগ্রেসের অন্দরেও। সব দিক থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে অবশেষে নড়ে বসছে মনমোহন সিংহের সরকার। আগামী পরশু কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থ বিষয়ক কমিটির বৈঠকে পেনশন বিল সংশোধনে অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। মন্দার বাতাবরণে এই পদক্ষেপ শিল্পমহলকে ইতিবাচক বার্তা দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ‘পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অথরিটি বিল’ গত বছর জানুয়ারিতে সংসদে পেশ করেছিল সরকার। কিন্তু বিলটি নিয়ে বিজেপি, বামেরা এমনকী ইউপিএ-র বৃহত্তম শরিক তৃণমূলও আপত্তি তোলে। এই অবস্থায় বিলটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। গত অগস্টে বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিন্হার নেতৃত্বাধীন স্থায়ী কমিটি বিলটি সম্পর্কে রিপোর্ট দেয়। তার পর বিজেপি জানিয়ে দেয়, স্থায়ী কমিটির সুপারিশগুলি মানা হলে তবেই তারা বিলটি সমর্থন করবে। সরকারি সূত্রে আজ বলা হচ্ছে, স্থায়ী কমিটির সুপারিশগুলির অধিকাংশই মেনে নিচ্ছে সরকার। সেই সমস্ত সুপারিশ মেনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী প্রস্তাবগুলিই মন্ত্রিসভার বৈঠকে পেশ করা হবে।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, মূল বিলটিতে সরকার যে সংশোধনী আনছে তার অন্যতম হল, পেনশন ক্ষেত্রে ২৬% বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বেঁধে দেওয়া, ব্যক্তিগত পেনশন অ্যাকাউন্ট থেকে শর্তসাপেক্ষে টাকা তোলার অনুমতি দেওয়া ও পেনশন তহবিল থেকে কোনও ব্যক্তির ন্যূনতম অঙ্ক/টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা।
কংগ্রেসের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং মন্ত্রীর কথায়, মন্ত্রিসভা এই পেনশন বিলে অনুমোদন দিলে শিল্পমহলের নিঃসন্দেহে খুশি হওয়ার কথা। কেননা প্রায় ২০০ কোটি ডলারের এই পেনশন তহবিলের দরজা খুলে দেওয়ার জন্য বিদেশি সংস্থাগুলি কেন্দ্রের কাছে অনেক দিন ধরেই সওয়াল করছে। এই তহবিল আরও বাড়বে বলেও তাদের ধারণা। এখন স্টেট ব্যাঙ্ক, আইডিএফসি, এলআইসি ছাড়াও আইসিআইসিআই-প্রুডেনশিয়াল, কোটাক মাহিন্দ্রা, রিলায়্যান্স ক্যাপিটালের মতো সংস্থাগুলি পেনশন তহবিল পরিচালনা করে। দেশের ২৩টি জীবন বিমা সংস্থার প্রায় সব ক’টিতেই ২৬% বিদেশি পুঁজি রয়েছে। এরা সকলেই পেনশন তহবিলের বিরাট বাজার ধরতে চাইছে। বণিকসভাগুলির যুক্তি, পেনশনের এই বিপুল টাকা যদি বাজারে খাটে তা হলে তা দেশের আর্থিক বৃদ্ধিও সুনিশ্চিত করবে। কারণ এই টাকার একাংশ পরিকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করবে বেসরকারি সংস্থাগুলি। যা অর্থনীতির দ্রুত বৃদ্ধির পথে ফেরার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।
তবে মন্ত্রিসভায় সংশোধনী প্রস্তাবগুলি পাশ করানো প্রথম ধাপ মাত্র। আসল হল বিলটি সংসদে পাশ করানো। তৃণমূল এখন কী অবস্থান নেয়, সেটাও দেখার। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, তৃণমূলের মূল দাবি ছিল পেনশন গ্রাহকদের বিনিয়োগের উপর ন্যূনতম ফেরত সুনিশ্চিত করা। সরকার তা মেনে নিচ্ছে। তা ছাড়া, স্থায়ী কমিটির সুপারিশ মেনে নিলে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি-ও বিলটিতে সমর্থন জানাবে। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ইতিমধ্যেই আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি এবং বিজেপি নেতা যশবন্ত সিন্হা। ফলে সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনে সরকার বিলটি পাশ হয়ে যাওয়ারও যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। |