দেশ জুড়ে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ছাত্র ভর্তির কেন্দ্রীয় নীতির ব্যাপারে আপত্তি জানাল বেশ কিছু রাজ্য। মঙ্গলবার দিল্লিতে বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে একাধিক রাজ্য এই নীতি রূপায়ণে আপত্তি জানানোয় বেকায়দায় পড়েছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। ওই মন্ত্রকের আশঙ্কা, যে-সব রাজ্য মৌখিক সম্মতি জানিয়েছে, শেষ মুহূর্তে তাদেরও অনেকে বেঁকে বসতে পারে। সংশয় এড়াতে এই নীতি নিয়ে রাজ্যগুলির অবস্থান কী এবং তারা আগামী বছর থেকে ওই নিয়ম মানবে কি না, তা জানিয়ে চলতি মাসের মধ্যে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনও তাদের অবস্থান ঠিক করেনি। বরং উচ্চশিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে কেন্দ্রের কাছে কিছু ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের পরিকল্পনা কার্যকর হলে আগামী বছর থেকে দেশের সব ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য মোট দু’টি পরীক্ষা দিতে হবে ছাত্রছাত্রীদের। মূল পরীক্ষা ও অ্যাডভান্সড টেস্ট। দু’টি পরীক্ষা হবে একই দিনে। উচ্চ মাধ্যমিক (৪০), মূল (৩০) এবং অ্যাডভান্সড পরীক্ষা (৩০)-য় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধা-তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। এর ফলে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে এক জন পড়ুয়া দেশের যে-কোনও প্রান্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবেন। এতে একাধিক প্রবেশিকা পরীক্ষা এড়ানো যাবে, আবার উচ্চ মাধ্যমিকেরও গুরুত্ব বাড়বে বলে মনে করছে মন্ত্রক।
এ দিন দিল্লিতে বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বলই সামগ্রিক পরিকল্পনাটি ব্যাখ্যা করেন বলে মন্ত্রক সূত্রের খবর। আইআইটি এবং দেশের অন্যান্য কেন্দ্রীয় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে এই নীতি সমর্থন করেছে অনেক রাজ্যই। তবে এই ধাঁচেই সব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির ব্যাপারে তাদের আপত্তি আছে বলে জানিয়ে দেয় কেরল, ত্রিপুরা, পুদুচেরি, উত্তরপ্রদেশ-সহ বেশ কিছু রাজ্য। তাদের বক্তব্য, প্রতিটি রাজ্যের পাঠ্যক্রম আলাদা। ফলে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার নিয়ম গোটা দেশে চালু করা সম্ভব নয়। তবে মন্ত্র আশ্বাস দিয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে, বিশেষ করে অঙ্ক ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতে অভিন্ন পাঠ্যক্রমের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে।
এ দিনের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ছিলেন না। তিনি বলেন, “রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক এবং আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল বলে দিল্লি যেতে পারিনি।” উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, রাজ্য এখনই অভিন্ন প্রবেশিকা নিয়ে মতামত জানাচ্ছে না। বরং এই ব্যাপারে কেন্দ্রের কাছে কিছু ব্যাখ্যা চেয়েছে তারা। এক কর্তা বলেন, “মোট আসনের ৫০ শতাংশ রাজ্যের পড়ুয়াদের জন্য চিহ্নিত থাকবে কি না, ভর্তির আগে কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্ব কার উপরে থাকবে ইত্যাদি বিষয় স্পষ্ট না-হলে রাজ্যের পক্ষে এই ব্যাপারে অবস্থান ঠিক করা কঠিন।” তবে কেন্দ্রের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হলে ২০১৫ সাল থেকে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার ব্যবস্থায় রাজ্য সায় দিতে পারে বলে ওই কর্তা জানান।
বেশ কিছু রাজ্যের প্রতিনিধিরা এ দিনের বৈঠকে সিব্বলকে জানান, ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে এখনই তাঁরা কেন্দ্রের নীতি গ্রহণ করতে পারছেন না। দু’তিন বছর পরে পরিস্থিতি বিচার করে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে মন্ত্রকের দাবি, গুজরাত, হরিয়ানার মতো বেশ কিছু রাজ্য ওই নীতি সমর্থন করেছে। |