বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের (সেজ) নিয়মই এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে মণিকাঞ্চনের কাছে। এতটাই যে, টিকে থাকতে সেজ-এর নিয়ম-কানুন শিথিল করতে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছে রাজ্যে গয়না শিল্পের একমাত্র এই বিশেষ আর্থিক অঞ্চল।
সেজ-এ যেমন কর ছাড়-সহ বেশ কিছু আর্থিক সুবিধা মেলে, তেমনই সেখানে তৈরি পণ্য বিক্রি করা যায় শুধু বিদেশের বাজারেই। ১০০% রফতানির এই ‘শর্ত’ই এখন প্রবল অসুবিধায় ফেলেছে মণিকাঞ্চনকে। শুধু রফতানির জন্য উৎপাদন কত দিন চালু রাখা যাবে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। গয়না নির্মাতা বি সি সেন-এর প্রধান সুবীর সেন বলেন, “বেহাল রফতানি বাজারের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রের কাছে কিছু ছাড় চেয়েছি। সেজ-এ তৈরি গয়নার অন্তত একটা অংশ দেশের বাজারে বিক্রি করার জন্য কেন্দ্র অনুমতি দিলে সমস্যা অনেকটাই মিটবে।”
এক দিকে মন্দার কারণে গয়নার চাহিদায় ভাটা আমেরিকা, ইউরোপ-সহ উন্নত দুনিয়ায়। অন্য দিকে, সেজ-এ তৈরি গয়না দেশে বিক্রির নিয়ম নেই। এই দু’য়ের মাঝে পড়ে হাঁসফাঁস দশা মণিকাঞ্চনের। আর তাই উৎপাদনের অন্তত একটা অংশ দেশে বিক্রির ছাড়পত্র পেতে মরিয়া বি সি সেনের মতো বড় সংস্থাও। সুবীরবাবুর দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় গয়নার চাহিদা এখন বেশি দেশের বাজারেই।
মণিকাঞ্চন একা নয়। একই সমস্যায় গয়না শিল্পের অন্যান্য সেজ-ও। যেমন, জয়পুর ও সুরতে মণিকাঞ্চনের মতোই গয়না শিল্পের সেজ রয়েছে। আর একটি তৈরি হচ্ছে হায়দরাবাদে। কোচি, চেন্নাই, নয়ডার বহুপণ্যের সেজ-এও রয়েছে গয়না শিল্পের কারখানা। পড়তি রফতানির ধাক্কা সামলাতে সকলেই প্রায় নাজেহাল।
এ প্রসঙ্গে জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের পূর্বাঞ্চলীয় চেয়ারম্যান পঙ্কজ পারেখ জানান, “আমেরিকা, ইউরোপ, জাপানই ছিল রফতানির মূল বাজার। তা পড়ে যাওয়ায় সেজ-এ ব্যবসা করা এখন আর লাভজনক নয়।” তাঁর দাবি, সুরত ও জয়পুরে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সোনা বা হিরের বদলে অপেক্ষাকৃত কম দামের রুপোর গয়নাই তৈরি করতে হচ্ছে বেশি।
রফতানি বাজারে মন্দার প্রভাবে গয়না শিল্পে লগ্নি টানাও কঠিন হচ্ছে রাজ্যে। যেমন, মণিকাঞ্চনেই ৩১টি কারখানার পরিকাঠামো তৈরি। অথচ সেখানে কারখানা রয়েছে মোটে ১৯টি। বাকি জায়গার আপাতত কোনও চাহিদা নেই বলে মেনে নিয়েছেন মণিকাঞ্চন কর্তৃপক্ষও। |