আগুন ঝরানো গরমে হাঁসফাঁস করা সাধারণ মানুষই শুধু নয়। বর্ষার জন্য অধীর অপেক্ষায় দিন গুনছে কেন্দ্রও। কারণ, দরজায় এসে দাঁড়ানো বর্ষার হাত ধরেই শেষ পর্যন্ত বিপর্যস্ত ভারতীয় অর্থনীতির চাকা আবার ঘুরতে শুরু করবে বলে মনে করছে তারা। এই আশাকে আরও পোক্ত করেছে সম্প্রতি বিশ্ব বাজারে ব্যারেল-পিছু তেলের দাম ১০০ ডলারের নীচে নেমে আসা। আকণ্ঠ সমস্যার মধ্যে হাতে আসা এই দুই সুযোগকে দিল্লি যে কোনও ভাবেই হারাতে রাজি নয়, সোমবার তা স্পষ্ট করে দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়।
এ দিন কেন্দ্রীয় উৎপাদন ও আমদানি শুল্ক পর্ষদের বার্ষিক সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, “চলতি অর্থবর্ষে বর্ষা স্বাভাবিক হওয়ার কথা। তা ছাড়া, গত কয়েক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রুত অনেকটাই নেমে এসেছে অশোধিত তেলের দাম। বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে এই বিষয়গুলি যথেষ্ট সহায়ক হওয়ার কথা।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষা ভাল হলে, উৎপাদন ভাল হবে খাদ্যপণ্যের। আর তার জোগান বাড়লে আপনেই কমবে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। সে ক্ষেত্রে কিছুটা সহজ হবে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম টানা। সে ক্ষেত্রে অনেক নিশ্চিন্তে সুদ কমানোর রাস্তায় হাঁটতে পারবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও। কল-কারখানায় ঝিমিয়ে পড়া উৎপাদনকে চাঙ্গা করতে দীর্ঘ দিন ধরেই যে দাবি জানিয়ে আসছে শিল্পমহল। অন্য দিকে, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমলে, লাঘব হবে ভর্তুকির বোঝা। আর তার দৌলতে ঘাটতি কিছুটা কমলে, সামান্য স্বস্তির শ্বাস ফেলতে পারবে কেন্দ্র।
টালমাটাল অবস্থা পেরিয়ে দেশীয় অর্থনীতির ছন্দে ফেরার বিষয়ে আরও কতগুলি আশার রুপোলি রেখা উল্লেখ করেছেন প্রণববাবু। মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, ইতিমধ্যেই লাগাতার সদ বৃদ্ধির পথ থেকে সরে এসেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বরং শিল্পে বৃদ্ধির পালে হাওয়া দিতে গত ঋণনীতিতে সুদ কমিয়েছে তারা। ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে খনন শিল্প। পর্যাপ্ত কয়লা জোগানো সম্ভব হচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে। পরোক্ষ কর সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ছোঁয়া সম্ভব হয়েছে। ছন্দে ফিরছে বিনিয়োগ বৃদ্ধির হার। এমনকী গত ত্রৈমাসিকে মুখ থুবড়ে পড়ার মতো আর্থিক ফল প্রকাশ করেনি কর্পোরেট দুনিয়াও।
গত অর্থবর্ষের ৬.৫ শতাংশ বৃদ্ধির হার যে যথেষ্ট হতাশাজনক, তা এ দিনও মেনে নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। স্বীকার করেছেন, ২০০৮ সালের মন্দার রেশ পুরোপুরি কাটার আগেই ফের এত বড় সঙ্কট ঘাড়ে এসে পড়ায়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই বড় মাপের ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণা করার মতো অবস্থায় নেই ভারতও। কিন্তু তা সত্ত্বেও অর্থনীতির সেই অন্ধকার কাটাতে অবশেষে আশার রুপোলি রেখা অন্তত দেখা দিতে শুরু করেছে বলে তাঁর দাবি। |