ভারতে যত না মন্দার ছায়া পড়েছে, ‘নেতিবাচক’ মানসিকতা তার চেয়ে দীর্ঘতর ছায়া তৈরি করছে। বাস্তব স্বীকার করেও তাই এ বার ভাবমূর্তি উদ্ধারের দাবি তুলেছে বণিক সভা অ্যাসোচ্যাম। নেতিবাচক মানসিকতা আরও বেশি করে বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা তৈরি করছে বলেই মনে করছে তারা।
নানা কারণে মাস কয়েক ধরে দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে সংশয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। আর্থিক বৃদ্ধির হারের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান তাতে আরও ইন্ধন জুগিয়েছে। শিল্পমহলের অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতে লগ্নির সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্রের ‘দুর্বল’ সরকার।
বিভ্রান্তি বেড়েছে শিল্পমহলেও। অ্যাসোচেম যখন আশাবাদী, চার-ছ’মাসের মধ্যে চাকা ঘুরবে, সিআইআই তখন কিছুটা রক্ষণশীল। তারা আপাতত বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েই বেশি চিন্তিত। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বিশ্ব জোড়া মন্দার প্রেক্ষিতে লগ্নির ঝুঁকি নিয়ে বিভ্রান্ত শিল্পমহল। ফলে রক্ষণশীল মনোভাব তৈরি হচ্ছে।
সোমবার এক বিবৃতিতে অ্যাসোচেমও বিভ্রান্তির কথা মেনে নিয়েছে। বণিক সভার প্রেসিডেন্ট রাজকুমার ধুতের বক্তব্য, এই মুহূর্তে কোথায় লগ্নি সুরক্ষিত তা নিয়ে বিশ্বের সর্বত্রই বিনিয়োগকারীদের মনে বিভ্রান্তি রয়েছে। তাই কখনও সোনা তাঁদের কাছে সুরক্ষিত লগ্নি মনে হচ্ছে তো পরের দিন তাঁরা ডলারে বিনিয়োগ করছেন। ধুত বলেন, “অনিশ্চয়তা থেকেই সার্বিক ভাবে যে ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে, এটা তারই লক্ষ্মণ।”
কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে হলে এই নেতিবাচক মানসিকতা পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলা দরকার, দাবি অ্যাসোচ্যামের। শিল্পমহল এবং অর্থনীতিবিদদের প্রতি তাদের আর্জি, সব কিছুই শেষ হয়ে যায়নি। বরং যে সব ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থা মজবুত সেগুলির উপর জোর দেওয়া হোক। যেমন ৫৫% জাতীয় আয়ের উৎস হল পরিষেবা শিল্প, যার অবস্থা এখনও যথেষ্টই মজবুত। সেই শক্তির উপর ভর করেই জোর দিতে হবে উৎপাদন শিল্পের চাহিদা বৃদ্ধিতে। এর উপর যদি বর্ষা ঠিকমতো আসে তাহলে কৃষির উন্নতিও বাড়তি শক্তি জোগাবে দেশের আর্থিক অবস্থার ক্ষেত্রে। না হলে শুধুই সমস্যাগুলিকে বড় করে দেখিয়ে বিবৃতির পর বিবৃতি জারি করে আখেরে লাভ হবে না।
বণিক সভাটি মানছে যে সম্প্রতি দেশ কিছুটা নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। সরকারও লগ্নিকারীদের আস্থা বাড়ানোর কোনও পথ দেখাতে পারছে না। কিন্তু তাদের বক্তব্য, বিশ্বের অন্য দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার যখন মাত্র ২%, ভারতে তা ৬%। উপরন্তু, চিনের মতো বৃহৎ শক্তিধর দেশও সমস্যার মুখে পড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে চাহিদা বাড়ানো যায়, সে ধরনের স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার উপর জোর দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছে তারা। চাহিদার অভাবে শিল্প সংস্থাগুলি তাদের উৎপাদন ক্ষমতার পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারছে না। তাই চাহিদা বাড়লে উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহারও বাড়বে। ফিরবে লগ্নিকারীদের আস্থাও।
শরিকি সংঘাত ও কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের চিড় সরকারি নীতি রূপায়নের অন্তরায়, শিল্পমহলের সেই বক্তব্য ফুটে উঠেছে অ্যাসোচ্যামের কথাতেও। আর্থিক ভাবেই কেন্দ্র এখন বেসামাল। এ সব বাস্তবকে মেনে নিয়েই রফাসূত্র খোঁজা জরুরি, মনে করছে তারা। তবে শুধু ভারতেই নয়, বিশ্ব জুড়েই মন্দা মোকাবিলায় রাজনৈতিক সহমত গঠনের উপরও জোর দিয়েছে তারা। |