বিশ্ব জুড়ে মন্দার ছায়া সত্ত্বেও ২০ শতাংশ রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে এগোতে চায় কেন্দ্র। যার অর্থ, চলতি আর্থিক বছরে ৩৬ হাজার কোটি ডলার বা ১৯ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকার রফতানি। এই লক্ষ্য অর্জন করতে আজ এক দিকে যেমন উৎসাহ প্রকল্প দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা, তেমনই বলেছেন নতুন বাজার খুঁজে নেওয়ার কথা।
রফতানি করার জন্য ঋণ নিলে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সুদে ২ শতাংশ ছাড় পেত ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থাগুলি। আজ নয়া উৎসাহ প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে সেই ছাড় আরও এক বছর বাড়ানো হবে জানিয়েছেন আনন্দ শর্মা। একই সঙ্গে ছাড় পাওয়ার যোগ্য ক্ষুদ্র শিল্পের তালিকাও দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। হস্তচালিত তাঁত, গালিচা এবং সাধারণ হস্তশিল্প ছাড়াও এখন থেকে এই সুবিধা নিতে পারবে খেলনা, ক্রীড়া সরঞ্জাম, তৈরি পোশাক এবং প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের মতো শ্রমপ্রধান শিল্প।
পাশাপাশি, রফতানির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বা প্রযুক্তি বিনা শুল্কে আমদানির সুবিধার মেয়াদও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই ‘এক্সপোর্ট প্রোমোশন ক্যাপিটাল গুডস’ (ইপিসিজি) প্রকল্পের মেয়াদও চলতি বছরের ৩১ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কেন্দ্রের এই উদ্যোগকে মোটের উপর স্বাগত জানিয়েছেন রফতানিকারীরা। তবে একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, ২০ শতাংশ রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে সুদে ২ শতাংশ ছাড় যথেষ্ট নয়।
রফতানিকারীদের বক্তব্য, টাকার দামের পতন ভারতীয় পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে একটা মস্ত বড় সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই বাজার ধরার কৌশল স্থির করার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।
গত ১৩ মাসে ডলারের নিরিখে টাকার দাম নজিরবিহীন ভাবে ২৭ শতাংশ পড়েছে। যার মধ্যে গত এপ্রিলেই অনেকটা পড়েছে টাকার দাম। তা সত্ত্বেও ওই মাসে রফতানি মাত্র ৩.২ শতাংশ বাড়ায় কিছুটা হতাশা জানিয়েছে মূল্যায়ন সংস্থা ‘ফিচ রেটিংস’। গোটা ২০১১-’১২ অর্থবর্ষে অবশ্য রফতানি ২১ শতাংশ বেড়ে ৩০,৩৭০ কোটি ডলার বা ১৬ লক্ষ ৭০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা ছুঁয়েছে।
রফতানিকারীদের ধারণা, টাকার পতন আপাতত বজায় থাকবে। সে ক্ষেত্রে ভারতীয় পণ্যের জন্য বিদেশের ক্রেতাকে কম ডলার গুনতে হবে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নতুন বাজার খুঁজে নেওয়ার উপরেই জোর দিচ্ছেন তাঁরা।
রফতানিকারীদের দাবি মেনে আজ নয়া নীতিতে মোট সাত দফা সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
ওই নীতিতে বলা হয়েছে:
• ই-কমার্সের মাধ্যমে বুক করা রফতানির বরাত এবং ক্যুরিয়র বা ইন্টারনেট মারফত পাঠানো পণ্যও চিরাচরিত প্রথার রফতানির মতো সুবিধা পাবে। রফতানির খরচ কমাতেও ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্র।
• বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং রফতানি নির্ভর সংস্থাকে চাঙ্গা করতে শীঘ্রই নয়া নির্দেশিকা দেবে কেন্দ্র।
• উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি থেকে রফতানিতে উৎসাহ দিতে তুলনায় কম রফতানি করলেও (সাধারণ লক্ষ্যমাত্রার ২৫ শতাংশ) ইপিসিজি প্রকল্পের সুযোগ নেওয়া যাবে।
• আমদাবাদ, কোলাপুর এবং সাহারানপুরকে রফতানি শিল্পের নতুন উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
• বিশেষ বাজার হিসেবে অস্ট্রিয়া, মায়ানমার, নেদারল্যান্ডস, মরক্কো, উরুগুয়ে, ইউক্রেনে বাড়তি নজর দেওয়া হবে। রফতানির তালিকায় আসবে ৪৬টি নতুন পণ্যও।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, “মন্দার পরিস্থিতিতেও রফতানিকারীদের আস্থা জোগাবে এই নীতি। বিশ্ব পরিস্থিতির উপর নজর রেখে আমরা মাঝে মাঝেই এ ধরনের উৎসাহ দেব।” |